কোন দিন কী কী খাবার দেওয়া হয়েছে। কত জন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। কত টাকার মশলা ও সব্জি লেগেছে। এক মাস বা ছ’মাস নয়। চার বছর আগে যে কোনও দিনের মিড-ডে মিলের খরচের হিসেব মিলবে করিমপুর প্রাথমিক স্কুলে।
এই জেলার অন্য প্রাথমিক স্কুলগুলিতে এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব পাওয়া যাবে কি না, তা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবে করিমপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা তা করতে পেরেছেন। এই কাজের জন্য শিক্ষকদের প্রশংসা করেছেন নলহাটি পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রামেন্দু চট্টোপাধ্যায়। এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনবসতি বেশি। স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের সু-সম্পর্কের জন্য যথাক্রমে নির্মল বিদ্যালয়, শিশু মিত্র পুরস্কার ইতিমধ্যেই এই স্কুল পেয়েছে। এ ছাড়াও স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধু চৌধুরী জাতীয় শিক্ষকের মর্যাদা পেয়েছেন। |
মিড-ডে মিল খাওয়ার আগে বসার জায়গা পরিষ্কার করছে ছাত্রীরা। ছবি: অনির্বাণ সেন। |
শুধু তাই নয়। প্রাথমিক শিক্ষার নিয়ম অনুযায়ী এখানে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পড়ুয়াদের নিয়ে গঠিত হয়েছে শিশু সংসদ। পড়ুয়াদের মধ্যে সেই সংসদে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী-সহ পাঁচ মন্ত্রী। মিড-ডে মিলের জন্য মাসের শেষেই পরের মাসের খাদ্য তালিকা তৈরি হয়ে যায়। মিড-ডে মিলের দায়িত্বে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকা সুশান্না হেমব্রম। সেপ্টেম্বর মাসের খাদ্য তালিকা হাতে নিয়ে জানালেন, দু’দিন আলু-পটল, দু’দিন ডিমের তরকারি, সিদ্ধ ডিম একদিন, আলু-সোয়াবিনের তরকারি, ছোলা দিয়ে চালকুমড়োর তরকারি তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। শিশু সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা পড়ুয়াদের মতামত নিয়ে এ মাসের খাদ্য তালিকায় রেখেছে খিঁচুড়ি।
স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, বাগানে রয়েছে ১৩টি পেঁপে, বেগুন, কুমড়ো গাছ। লঙ্কা, সজনে গাছ-সহ আরও কয়েকটি শাকসব্জি লাগানো হয়েছে। ওই সব সব্জি মিড-ডে মিলে দেওয়া হয়। শিশু সংসদের খাদ্যমন্ত্রী তথা চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া রকি চৌধুরীর কথায়, “সব্জি বাগান আমরা পড়ুয়ারাই দেখভাল করি। সব ঋতুর সব্জি চাষ করা হয়। বাগানে যাতে কেউ হাত না দিতে পারে, সে জন্য এলাকার মানুষের সাহায্য নেওয়া হয়।” প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধুবাবু বলেন, “পড়ুয়াদের ভাল ভাবে যাতে মিড-ডে মিল খাওয়াতে পারি, সে জন্য স্কুল চত্বরে বাগান করে সেখানে বিভিন্ন শাক-সব্জি লাগানো হয়।” শিক্ষক আশিস মুখোপাধ্যায়, পরসেন সোরেন, শুভেন্দু রায় বলেন, “স্কুল পরিচালনা করতে প্রধান শিক্ষকের যাতে অসুবিধা না হয়, তাই শিক্ষক-শিক্ষিকারাই মিড-ডে মিলের দায়িত্ব নিয়েছি।” এ সবের কারণে করিমপুর প্রাথমিক স্কুল অন্য স্কুলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। |