বাস মেলে না কেন, প্রশ্নের মুখে মন্ত্রী মদন
বাস কোথায়?
বাসে উঠে যাত্রীদের অভাব-অভিযোগ শুনতে চেয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁকে কাছে পেয়ে যাত্রীদের এটাই ছিল প্রথম প্রতিক্রিয়া। ঘটনাস্থল, যাদবপুরের ৮-বি বাসস্ট্যান্ড। সময়, দুপুর দেড়টা।
সোমবার বাসস্ট্যান্ডের সংস্কার দেখতে এসে আচমকাই দাঁড়িয়ে থাকা এস-৯ বাসে উঠে পড়েছিলেন মন্ত্রী মদন। যাত্রীদের তিনি বলেন, “এ সব তো আপনাদেরই সম্পত্তি। একে রক্ষা করতে হবে আপনাদেরই।” মন্ত্রীর এ কথা শুনে বাসযাত্রীরা সমবেত ভাবে বলে ওঠেন, “তা না হয় করব। কিন্তু বাস কোথায়? এখানে তো দিনকে-দিন বাসের সংখ্যা ক্রমশই কমে যাচ্ছে।”
ওই যাত্রীরাই মন্ত্রীকে জানান, গত শুক্রবার রাতেই অনেকক্ষণ স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও এস-৩১ রুটের বাস না পেয়ে ক্ষিপ্ত যাত্রীরা ডিপোর অফিস ভাঙচুর করেন। রাতের দিকে বাস যে এখন আর কার্যত মেলেই না, তা-ও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এ সব অভিযোগ শোনার পরে স্পষ্টতই অপ্রস্তুত মন্ত্রী। যাত্রীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আমরা অবশ্যই বাসের সংখ্যা বাড়াব।”
কিন্তু বাড়াবেন কোথা থেকে?
যাদবপুর স্ট্যান্ডে ৮বি বাসে উঠে যাত্রীদের অভিযোগ শুনছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অর্থনীতির সহজ নিয়ম মেনে খরচ বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া বাড়ায়নি সরকার। সেই ধাক্কায় বেসরকারি পরিবহণের সঙ্গে সঙ্গে ধুঁকতে শুরু করেছে সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থাও। তার উপরে যোগ হয়েছে খারাপ রাস্তার সমস্যা। পরিবহণের এক কর্তার কথায়, “সরকারের কাছে টাকা নেই। ফলে, বাসের মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। তার উপরে বর্ষায় গর্তে ভরা রাস্তায় ঘনঘন বাস খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাস বসে যাচ্ছে।” রাজ্যের পাঁচটি পরিবহণ নিগমেই এ ভাবে খারাপ হয়ে অন্তত ছ’শো বাস বসে রয়েছে। শুধুমাত্র সিএসটিসি-তেই এমন বাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় চারশো।
গত শনিবার বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আগামী ১৯-২০ সেপ্টেম্বর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেসরকারি বাস-মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স। এ দিন বেসরকারি বাস মালিকদের সঙ্গে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন মিনিবাস মালিকেরাও। মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, “মন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা গত মাসের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। কিন্তু এ দিন আমাদের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সরকার ভাড়াবৃদ্ধির ব্যাপারে স্পষ্ট ও স্থায়ী নীতি ঘোষণা না করলে ১৯ এবং ২০ সেপ্টেম্বর মিনিবাস চালানো হবে না।” ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনের সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “২০০৮ সালের পর থেকে আমাদের ভাড়া আর বাড়েনি। তাই আমরা অন্তত ৮৫% ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে এ বার ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।”
পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য এ দিন ফের ধর্মঘট তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এ দিন মহাকরণে বলেন, “ধর্মঘট করার সময় এটা নয়। অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধরুন। বাজারে স্থিতি আসুক। এখন বাস রাস্তায় নামান। কালীপুজোর পরে সরকার আলোচনায় বসবে।” বাসমালিকদের ধর্মঘট ব্যর্থ করতে রাজ্য প্রশাসন যে রাস্তায় নামবে, সে কথাও আজ জানিয়ে দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “ধর্মঘট ব্যর্থ করতে সরকার অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবে। রাস্তায় বাস থাকবে। আমরা সরকারি নিগমগুলিকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি।”
যাদবপুরের ৮-বি বাসস্ট্যান্ডের পাশাপাশি কসবা ডিপো এবং মৌলালির স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডও ঘুরে দেখেন পরিবহণমন্ত্রী। মৌলালির ওই স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডে এখনও ডিজেল-চালিত অটো ভেঙে ফেলার কাজ করা হয়। মন্ত্রী এ দিন ওই জায়গা পরিদর্শনের পরে অবিলম্বে ফাঁকা করা নির্দেশ দিয়েছেন। পরে মহাকরণে তিনি বলেন, “অটো স্ক্র্যাপ করার জন্য ৭৬ কাঠা জমি গত সরকারের আমলে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ওই জমি খালি করতে বলেছি। মৌলালির মতো সরকারি নিগমগুলির এমন অনেক জমি জবরদখল হয়ে রয়েছে। সেগুলি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.