ছুটির দিন বেশি লোকসান, বাস নেই পুজো বাজারেও
ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে বাস-মালিকরা ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শহরের রাস্তা থেকে বাস কার্যত উধাও হয়ে গেল। দেখা মিলল না সরকারি বাসেরও। রাস্তায় বেরিয়ে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ।
শনিবারই বাসমালিকরা আগামী ১৯-২০ তারিখ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তার আগে রবিবারই কার্যত শহরের রাস্তা বাসশূন্য হয়ে গেল কেন? বাসমালিকদের যুক্তি, রবিবারে যাত্রীসংখ্যা কম থাকে। বাস চালানোর খরচ যে হারে বেড়েছে, বাসভাড়া সে হারে বাড়েনি। এই অবস্থায় ফাঁকা বাস চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষতি আর সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণে, ছুটির দিনে তাঁরা আর রাস্তায় বাস বার করছেন না।
বাস-মালিক সংগঠনগুলির সূত্রের খবর, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন রুটে বেসরকারি বাস চলার কথা প্রায় সাড়ে সাত হাজার। সেই জায়গায় চলছে সাড়ে চার হাজারের মতো। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “এই সরকারের আমলে অন্তত ৪০ শতাংশ বাস উঠে গিয়েছে। আগে কখনও এ রকম অবস্থা হয়নি।” ছুটির দিনগুলিতে বাস চালিয়ে লোকসান করার ঝুঁকি তাই কেউই আর নিতে চাইছেন না বলেই তপনবাবুর দাবি। তাঁর হিসেবে, “রবিবার অন্য দিনের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ কম যাত্রী থাকে। অথচ জ্বালানি বা অন্যান্য খরচ একই। ফলে অন্য দিনের তুলনায় ক্ষতিও বাড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রায় দু’আড়াই হাজার টাকা।” ফলে বেসরকারি বাস রাস্তায় নামছে না বললেই চলে।
কিন্তু সরকারি বাসও কেন মিলছে না রবিবার?
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ভর্তুকি দিয়ে চললেও ভাড়া না বাড়ানোর ধাক্কা এসে পড়ছে সরকারি নিগমগুলির উপরেও। সিএসটিসি-র চারশোরও বেশি বাস পড়ে রয়েছে। মেরামতের টাকা নেই। নিগমের সিটু-নিয়ন্ত্রিত কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “গত ২৭ মাস নিগমে কোনও নতুন বাস আসেনি। দু’বছর ধরে কর্মীরা বোনাস আর পুজোর এককালীন ভাতা পাচ্ছেন না। ইনক্রিমেন্ট বন্ধ। হতাশা গ্রাস করেছে কর্মীদের।” কম যাত্রী নিয়ে বাস চালিয়ে লোকসানের ভার আর বাড়াতে চান না এ দিন এ কথা কার্যত স্বীকার করেছেন সরকারি নিগমগুলির কর্তারাও।
সিটিসি-র সিটু-নিয়ন্ত্রিত কর্মী সমিতির সম্পাদক সুবীর বসুর অভিযোগ, “২০১০-১১ অর্থবর্ষে দৈনিক টিকিট বিক্রি-বাবদ আয় ছিল ১৩ লক্ষ টাকা। তা কমে হয়েছে ৯ লক্ষ টাকার মতো। এর পাশাপাশি, ডিজেল ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে।” ক্রমে আরও বেশি রুগ্ন হয়ে ওঠা সংস্থার প্রায় ৫৮০০ কর্মী গভীর শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “অনেক চেষ্টা করেছি। প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। আমি অসহায়।”
এই অবস্থায় ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকেই। পুজোর মাসখানেক আগে রবিবারের ছুটির দিনে অনেকেই কেনাকাটা করতে বেরোবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু এক দিকে বৃষ্টি, অন্য দিকে বাসের অভাবে এ দিন ঘর থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এতে মার খেয়েছে পুজোর ব্যবসাও। বেহালার বাসিন্দা পারমিতা চৌধুরী দুই মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করতে যাবেন বলে বেরোন। অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। যাঁদের নিতান্ত বাধ্য হয়ে বেরোতেই হয়েছে, বাস না পেয়ে নাকাল হয়েছেন তাঁরাও। অনেকেই উপায় না দেখে অটোরিক্শা ও ট্যাক্সিতে বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বাস-মালিকেরা আশার কথা তো শোনাচ্ছেনই না। বরং বলছেন, এখন থেকে শুধু ছুটির দিনে নয়, সাধারণ কাজের দিনেও দুপুরে বা বেশি রাতে রাস্তায় বাস কমে যাবে। কারণ যা অবস্থা, সরকার অবিলম্বে ভাড়া না বাড়ালে কাজের দিনের ব্যস্ত সময়েও বাসের দেখা মিলবে না বলে তাঁদের দাবি। বেসরকারি এক বাস-মালিকের কথায়, “সরকার তা-ও ভর্তুকি দিয়ে বাস চালাতে পারে। আমাদের ঋণের কিস্তির টাকা বাকি রেখে সংসার চালাতে হচ্ছে। এখন তাই অধিকাংশ মালিক লোকসান করার চেয়ে বাস বসিয়ে রাখাই ঠিক বলে মনে করছেন।” একই অবস্থা অন্য নিগমগুলিরও। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)-র আইএনটিইউসি-নিয়ন্ত্রিত কর্মিসমিতির নেতা সুজিত সরকার বলেন, “আমাদের ২৬০টি রুটে কিলোমিটার-পিছু লোকসান গড়ে প্রায় ২৫ টাকা।” নিগমের এমডি জয়দীপ ঠাকুর বলেন, “গত জানুয়ারির পর থেকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আমাদের মাসে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। নতুন বাস এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পাহাড়ের জন্য ১৫টি বাস চেয়েছি। এ ছাড়াও জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের ৫০টি বাস পাওয়া যাবে।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিগোষ্ঠী।” তবে মন্ত্রীর দাবি, “শীঘ্রই আমরা নতুন কিছু বাস কিনছি। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে আরও বাস নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.