দরকারে ছাড় পাবেন না তিনিও, সাফ বার্তা বুদ্ধের
মানুষ যে ভাবে কমিউনিস্ট পার্টিকে দেখতে চান, ঠিক সেই ভাবেই দলকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। এই পথে কোনও আপস চলবে না। প্রশ্ন উঠলে প্রয়োজনে তাঁকে নিয়েও পর্যালোচনা হবে। সিপিএমের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে সাফ বার্তা দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
পঞ্চায়েত ভোটের সবিস্তার ময়না তদন্তকে উপলক্ষ করে শনি ও রবিবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সবক’টি জেলার সম্পাদকমণ্ডলী এবং গণসংগঠনের নেতাদের নিয়ে যে বর্ধিত রাজ্য কমিটির অধিবেশন বসেছিল, তাতে অনেক প্রতিনিধিই আঙুল তুলেছেন রাজ্য নেতৃত্বের দিকে। জবাবি ভাষণে তারই উত্তরে পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু এবং রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়ে দিয়েছেন, দলের উপর তলাও কোনও ভাবেই নজরদারির ঊর্ধ্বে নন। বস্তুত, মানুষ যে ভাবে দেখতে চেয়েছেন, সে ভাবে নেতৃত্ব সর্ব স্তরে গড়ে ওঠেনি বলে স্বয়ং বুদ্ধবাবুও মেনে নিয়েছেন। বলেছেন, এটাকে ‘ব্যর্থতা’ বলেই মানতে হবে।
রাজ্য কমিটি এবং তার পরে বর্ধিত অধিবেশনেও প্রবল তোপের মুখে পড়ে শেষ লগ্নে বিমানবাবুও বলেছেন, তাঁর হয়তো অনেক ত্রুটি আছে। কিন্তু দলের দেওয়া দায়িত্ব তিনি পালনের চেষ্টা করেন। দলের অন্দরে সমালোচনার জবাব দেওয়ার পাশাপাশিই বিমানবাবু স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন, অকমিউনিস্ট-সুলভ আচরণ আর বরদাস্ত করা হবে না। যাঁদের জীবনযাত্রা, বিলাসিতা, আচার-আচরণ নিয়ে জনমানসে প্রশ্ন আছে, তাঁদের এ বার জবাব দেওয়া হবে!
রাজ্য কমিটি এবং বর্ধিত অধিবেশন মিলে তিন দিনের বৈঠকে বড় প্রশ্ন ছিল নেতৃত্বে রদবদল। এই বৈঠকেই নেতৃত্বে রদবদলের কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু বিমানবাবু শেষ পর্যন্ত দলে ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির রূপরেখা মেনেই সংগঠন নতুন করে সাজানো হবে। সময়ের উপযোগী করে সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে। যাঁদের গ্রহণযোগ্যতার সমস্যা আছে, তাঁদের সরে যেতে হবে। নতুন মুখকে জায়গা দিতে হবে, বেশি করে তাজা রক্ত দলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গেলে সব স্তরের নেতাদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে। সাহসিকতার দৃষ্টান্ত নেতাদের কাছ থেকেই দেখতে চান কর্মী-সমর্থকেরা। বর্ধিত অধিবেশনে প্রতিনিধিদের মতামত শুনে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও তাঁর জবাবি বক্তৃতায় জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষের থেকে বিচ্ছিন্নতার যে সমস্যা এ রাজ্যে দলকে ভোগাচ্ছে, তার থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও মতাদর্শগত সব পদক্ষেপই করতে হবে। পরের রাজ্য কমিটির বৈঠক মূলত সাংগঠনিক মূল্যায়নের জন্যই রাখা হচ্ছে।
জেলাওয়াড়ি পঞ্চায়েত ফলের বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, আসন বা বোর্ড দখলের নিরিখে শোচনীয় অবস্থা হলেও বাঁকুড়ায় বামেরা সর্বোচ্চ প্রায় ৪১% ভোট পেয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরেও জেলা পরিষদে মাত্র ৭টি আসন পেলেও ভোট পাওয়া গিয়েছে ৪০%-এর বেশি। আবার মালদহে ৩৩%, উত্তর দিনাজপুরে ৩৭% ভোট পেয়ে অর্ধেক জেলা পরিষদ দখল করা গিয়েছে! জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ বামেদের কিন্তু ভোটপ্রাপ্তি ৪০%-এর কম।
জেলায় জেলায় আলাদা চিত্রের সূত্র ধরেই বুদ্ধবাবু এ দিন বৈঠকে বলেছেন, মানুষ বামেদের একেবারে প্রত্যাখ্যান করেননি। সন্ত্রাস, কারচুপি ছাড়াও যেখানে যেখানে মানুষ নানা কারণে সিপিএমকে পছন্দ করেননি, সেখানে ফল খারাপ হয়েছে। উদাহরণ টেনেছেন আরামবাগে অতীতে লক্ষ লক্ষ ভোটে জিতে তাঁরা আনন্দিত হয়েছিলেন। এখন তার উল্টো ফল ভুগতে হচ্ছে! এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এক দিকে রাজনৈতিক ভাবে বিচক্ষণ হওয়ার কথা বলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, যে কোনও প্রশ্নেই ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষ এখন ভাল ভাবে নিচ্ছেন না, এটা বুঝে কিছু বিষয় চিহ্নিত করে ময়দানে নামতে হবে। ধৈর্য ধরে আন্দোলনের পথে থাকতে হবে। অন্য দিকে, সাংগঠনিক ভাবে পরিচ্ছন্ন হওয়ার দাওয়াই-ও দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। বলেছেন, যে সব মুখ এলাকার মানুষ পছন্দ করেন না, তাঁদের সরানো হবে। উপরের দিকে কাউকে নিয়ে সমস্যা হলেও পর্যালোচনা হবে। প্রয়োজনে তাঁকে নিয়েও হতে পারে।
জেলার নেতারা ভরাডুবির পিছনে নানা কারণের কথা তুলে ধরেছিলেন। বাঁকুড়া যেমন বলেছে, বাম আমলে জঙ্গলমহলে মাওবাদী ও সহযোগী সংগঠনের ডাকে ১১২ দিন বন্ধ হয়েছিল। তৃণমূলের জমানায় কোনও বন্ধ হয়নি। এ সবের ইতিবাচক ফল তৃণমূল পেয়েছে। আবার উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রাক্তন বিধায়ক প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেরলের মতো আন্দোলনও নেই, মানুষকে টানার মতো নেতৃত্বের দিশাও নেই। ‘জনগণের কণ্ঠস্বর’ কি শুধু লোকাল বা শাখা কমিটির সম্পাদক শুনবেন? রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী শুনবে না? এই সব প্রশ্নেরই জবাব দিতে গিয়ে বিমানবাবু বলেছেন, রাজ্য কমিটির সদস্যেরা নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন না করলে তারও মূল্যায়ন হয় এবং হবে। কিন্তু এলাকায় গিয়ে কাজ তো রাজ্য নেতারা করে আসবেন না! বিদেশে চিকিৎসা, বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে বিদেশ ভ্রমণ, অনর্থক গাড়ির তেলের বিল এ সবও আর ছাড় পাবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.