লাগাতার নিম্নচাপ আর ঘূর্ণাবর্তের পথেই হাঁটল হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখা। অচিরেই পরিণত হল নিম্নচাপে। আর অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে তৈরি হওয়া সেই নিম্নচাপের ঠেলায় বর্ষার বিদায়বেলায় ফের অতি সক্রিয় হয়ে উঠল মৌসুমি অক্ষরেখা। নিম্নচাপ ও বৃষ্টিরেখার সেই যুগলবন্দির টানে হুড়মুড়িয়ে ঢুকেই চলেছে জলীয় বাষ্প। তৈরি হচ্ছে বজ্রগর্ভ মেঘ। সেই মেঘেরই কিছু অংশ দফায় দফায় ভেঙে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় রবিবারের ছুটির দিনটি ভাসিয়ে দিয়ে গেল। ভেসে গেল সল্টলেকও।
নিম্নচাপের প্রভাবে আজ, সোমবার কলকাতা, দমদম এবং রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকার কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ওই নিম্নচাপের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। তা থেকে তৈরি হয়ে চলেছে বজ্রগর্ভ মেঘ। মহানগরী ছাড়াও ইতিমধ্যে সেই মেঘ যেখানে যেখানে ভেঙেছে, সেখানেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছে। এবং এখনই বর্ষণে ক্ষান্তির লক্ষণ নেই।
এ দিন সকাল থেকেই আকাশ কমবেশি মেঘলা ছিল। দুপুরের পর থেকেই কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। দুপরেই সন্ধ্যার মতো অন্ধকার নেমে আসে। কিছু পরেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সঙ্গে মুহুর্মুহু বিদ্যুতের ঝলকানি। কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ খুব একটা বেশি না-হলেও সল্টলেকে বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত আকাশভাঙা বৃষ্টির জেরে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
তবে দু’ঘণ্টা ধরে ভারী বৃষ্টি হলেও করুণাময়ী মোড় ছাড়া এ দিন সল্টলেকের অন্যান্য রাস্তায় তেমন জল জমেনি। করুণাময়ী মোড়ের জলও বিকেলের দিকে নামতে শুরু করে। যদিও বিকেলের পরেও ঝিরঝিরে বৃষ্টি চলছিল।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, সল্টলেকের তুলনায় কলকাতায় কম বৃষ্টি হলেও বেশ কিছু রাস্তায় গোড়ালি পর্যন্ত জল জমে যায়। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে একটি শপিং মলের সামনে গাছ উপড়ে পড়ে।
এ বার অগস্টে পরের পর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়ে বৃষ্টি-ঘাটতি মিটিয়ে দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে ধারাবর্ষণ না-হলেও এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির সেই ধারা অনেকটা বজায় রয়েছে। অল্প পরিধির মধ্যেই কোথাও জোর বর্ষণ, আবার কোথাও আদৌ বৃষ্টি নেই। এমনটা হচ্ছে কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, এখন বর্ষার বিদায় নেওয়ার সময়। তাই মৌসুমি অক্ষরেখার শক্তি সব জায়গায় সমান হয় না। যেখানে ওই অক্ষরেখা বেশি শক্তিশালী, সেখানে বজ্রগর্ভ মেঘের উচ্চতাও বেশি হয়। যেখানে যেখানে সেই মেঘ ভেঙে পড়ে, সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এ দিন সল্টলেকে তেমনটাই ঘটেছে। মেঘের ঘনত্ব বা উচ্চতা তুলনামূলক ভাবে কম থাকায় বৃষ্টি হয়েছে উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। আবার মেঘ উত্তরের থেকে একটু বেশি গাঢ় বা উঁচু হওয়ায় দক্ষিণ কলকাতায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর। |