ট্রফির লড়াই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে
আশফাকদের সাফ করে ফাইনালে ভারত
ভারত ১ (অর্ণব)
মলদ্বীপ ০
কোথায় ছিল ভারতের এত তেরঙ্গা পতাকা? কাঠমান্ডু আসার পর স্টেডিয়াম তো শুধুই ছিল সূর্য-চন্দ্র আঁকা নেপালের লাল পতাকায় ছয়লাপ। এত দিন কোথায় ছিলেন ওঁরা? যাঁরা পতাকা হাতে গ্যালারিতে চিৎকার করছিলেন, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া...।”
কোথায় গেল আলি আশফাকের সেই গোল-জাদু! জোড়া ম্যাচে দশ গোলের দৌরাত্ম! যে বিভীষিকার ছায়া ছড়িয়ে দিয়ে তিনি দুমড়ে-মুচড়ে দিতে চেয়েছিলেন টিম ইন্ডিয়াকে। পুরো ম্যাচে তো মলদ্বীপ স্ট্রাইকার বোতলবন্দি হয়ে হাঁসফাস করলেন। গোলের সামনে কার্যত পৌঁছতেই পারলেন না।
কত দিন আগে ভারতীয় দলে দেখা গিয়েছে বঙ্গসন্তানদের এই দাপট? তিন বঙ্গজ ফুটবলারের ত্রিফলাতেই তো টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচ খেলে সাফ ফাইনালে ফের ভারত। বারুইপুরের মেহতাব হোসেনের কর্নারে পাণ্ডুয়ার রহিম নবির হেড এক মলদ্বীপ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে আসার পরেই বেহালার অর্ণব মণ্ডলের ‘সোনার গোল’। ওডাফা-চিডি-ওপারাদের রমরমায় বাঙালি তা হলে হারিয়ে যায়নি?
ম্যাচটা শেষ হওয়ার পর ‘ব্লু টাইগার্স’ রিজার্ভ বেঞ্চে যখন একে অন্যের গায়ে বোতলের জল ঢেলে শ্যাম্পেন স্নানের ‘বেসরকারি আনন্দ’ উপভোগ করছেন, তখন উইম কোভারম্যান্সকে দেখা গেল দূরে দাঁড়িয়ে। “আমি তো আশফাককে নেহরু কাপে দেখেছি। জানতাম ও কী করতে পারে। তবে ভারতকে নিয়ে ওর ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য আমার টিম মিটিংয়ে কাজে লেগেছে,” জ্বলজ্বল করছিল মেহতাব-নবিদের কোচের চোখ। প্রচণ্ড তৃপ্তও মনে হল তাঁকে।
সোমবার দশরথ স্টেডিয়ামের ম্যাচ ছিল আসলে ডাচ বনাম হাঙ্গেরির দুই কোচের ক্ষুরধার মস্তিস্কের লড়াই। ট্যাকটিক্সের অঙ্ক কষে একে অপরকে ছিটকে দেওয়ার ম্যাচ। লিখতে দ্বিধা নেই, কোভারম্যান্স সব দিক থেকেই টেক্কা দিয়ে গিয়েছেন টুর্নামেন্টের সবথেকে অভিজ্ঞ কোচ উরবানিকে। টানা তিন বছর থেকেও যিনি হারের হ্যাটট্রিক থেকে বাঁচাতে পারলেন না মলদ্বীপকে। সাফ থেকে নেহরু। নেহরু থেকে ফের সাফ। একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল যেন।
গোল করে অর্ণবের (পাঁচ নম্বর জার্সি) উচ্ছ্বাস। সোমবার কাঠমান্ডুতে। ছবি: পিটিআই।
সাফের বিস্ময় আশফাকের পায়ে মরচে ধরাতে জোনাল মার্কিং-এরই আশ্রয় নিয়েছিলেন কোভারম্যান্স। অর্ণব, গৌরমাঙ্গীরা পালা করে ধরে নিলেন তাঁকে। কোনও কোনও সময় মেহতাব। মলদ্বীপ কোচকে ধোঁকা দিতে কোভারম্যান্সের ফর্মেশনে ওলট পালট-ই এ দিনের মাস্টার স্ট্রোক। রবিন সিংহকে এক স্ট্রাইকারে রেখে টিম সাজিয়েছিলেন, ৪-২-৩-১। রক্ষণের সামনে মেহতাব-লেনি। বল কেড়ে নিয়ে যাঁদের কাজ ছিল শুধুই উইং-এ ঠেলে যাওয়া। টিমের সবথেকে লম্বা ফুটবলার রবিনের পিছনে মলদ্বীপের অ্যাটাকিং থার্ডের চাপ বাড়াতে আরাতা, জেজে আর ফ্রান্সিস। গ্রুপের আগের তিন ম্যাচের সঙ্গে যে স্ট্র্যাটেজির মিলই নেই। মোহনরাজকে বসিয়ে রহিম নবিকে নামানো হয়েছিল তাঁর নিজের জায়গা লেফট ব্যাকে।
আর জাতীয় কোচের এই স্ট্র্যাটেজি বদলই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। রিংয়ের বাইরে পাঠিয়ে দিল অন্যতম ফেভারিট মলদ্বীপকে। আশফাকদের কোচ টিম মিটিংয়ে গৌরমাঙ্গী-নির্মলদের এই টুর্নামেন্টের আগের তিন ম্যাচের ক্লিপিংস দেখিয়েছিলেন। ‘খনি’ মোহনরাজের দিক থেকে আক্রমণ তুলবেন ভেবে ডান দিকে নামিয়েছিলেন দলের সবথেকে দ্রুত গতির আলি ফয়সারকে। কিন্তু সেখানে নবি এসে যাওয়ায় তা কার্যকর হল না। আশফাকের অবস্থা হল গত বার মোহনবাগানে ওডাফা ওকোলির মতো। মলদ্বীপের সবাই তাঁকে গোলের জন্য বল দিচ্ছে। বল পেলেই সাফের সর্বাধিক গোলদাতাকে পিছনে তাড়া করছিল যেন পুরো ভারত। একটা সময় হতাশ হয়ে আশফাক রেফারির সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিলেন। প্লে অ্যাকটিং করতে গিয়ে রেফারির চক্ষুশূল হলেন। খেলার শেষে জর্ডনের রেফারিকে মারতে গিয়ে লালর্কাডও দেখলেন। আটকে গেলে সফল স্ট্রাইকাররা যা করে থাকেন। নব্বই মিনিটের ম্যাচে একবারও মনে হয়নি মলদ্বীপ জিততে পারে।
এএফসি চ্যালেঞ্জার্সে ব্যর্থ। সাফ কাপ জিততে না পারলে তাঁকে নিয়ে দেশ জুড়ে উঠে যাবে তাড়ানোর রব। এই ভাবনা যে কোভারম্যান্সকে কতটা চাপে ফেলেছে, টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝে গিয়েছিল এ দিন সকালেই। নেপালের সবথেকে জনপ্রিয় মন্দির পশুপতিনাথে পুজো দিতে গিয়েছিলেন টিমের কয়েক জন। প্রসাদ এনে কোচের হাতে দেওয়ার আগে তাঁরা বলেন, ভাগ্য সঙ্গে পেতে হলে প্রসাদ হাতে নিয়ে হাতজোড় করে প্রণাম করতে হয়। বিনা দ্বিধায় সেটা করেন ডাচ কোচ। মাঠেও দেখা গিয়েছে তাঁকে অশান্ত হতে। সাধারণত যা করেন না সেটা শুরুতেই করতে দেখা গেল। গৌরমাঙ্গীর বিরুদ্ধে রেফারি একটি ফাউল দেওয়ায় টেকনিক্যাল এরিয়ার বাইরে গিয়ে হাত ছড়িয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। রেফারি সতর্ক করেন তাঁকে।
কোচের উত্তেজনা সংক্রমিত হয়েছিল পুরো দলের মধ্যেই। সুনীল ছেত্রী-হীন ভারত প্রতিটি বলের জন্য লড়াই করেছে। স্কিলে শূন্য পেলেও নিজের উচ্চতার সুযোগ নিয়ে রবিন যেমন বিপক্ষকে চাপে রেখেছেন লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে, তেমনই লেনি-মেহতাবরা অক্লান্ত থেকেছেন বল কাড়তে। পাস বাড়াতে। মেহতাব তো বলেই দিলেন, “সবাই দু’টো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নেমেছিলাম।”
টিম ইন্ডিয়ার সামনে ফাইনালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা আফগানিস্তান। সুব্রত পালদের বহু দিন পর দেশের বাইরে টুর্নামেন্ট জেতার সুযোগ। কোভারম্যান্সের সামনে হাতছানি বব হাউটনকে টপকে যাওয়ার। ডাচ কোচের ছাত্ররা কি পারবেন?
সোমবার ভারত যা খেলল তাতে কিছুই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

ভারত: সুব্রত, নির্মল, অর্ণব, নবি, গৌরমাঙ্গী, মেহতাব, আরাতা (জুয়েল), লেনি, ফ্রান্সিস, রবিন, জেজে।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.