রতন চক্রবর্তী • কাঠমান্ডু |
শিবিরে আসা-যাওয়া। বারবার চোট নিয়ে বাড়িতে বসে থাকা। এটাই ছিল অর্ণব মণ্ডলের এতদিনের জাতীয় দলের রোজনামচা। সোমবার আলি আশফাকদের আটকে এবং গোল করে ভারতকে সাফ ফাইনালে তোলার পর বেহালার সেই ডিফেন্ডারের চোখে-মুখে যেন আলোর ঝর্না। “ফুটবল জীবনের সেরা প্রাপ্তি! দেশকে জিতিয়েছি। ওহ্ কী মারাত্মক চাপ ছিল!” বলছেন আর হাঁফাচ্ছেন। কোভারম্যান্স পিঠ চাপড়ে গেলেন। সতীর্থরা মাথায় জল ঢেলে দিচ্ছেন। ভিজে গেল ম্যান অব দ্য ম্যাচের মেডেলের বাক্সটাই। এটা যে ক্লাবের জার্সির বাইরে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে চার নম্বর ম্যাচ। হঠাৎ নায়ক হলে যা হয়। ভেবেই পাচ্ছিলেন না, কী বলবেন! “এই গোল আমি সতীথর্দের, বাড়ির লোকদের উৎসর্গ করছি।”
অর্ণব যখন জীবনে প্রথম হঠাৎ আসা উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে ভাসছেন তখন উল্টো দিকে চলছে মারামারি। জর্ডনের রেফারি মহম্মদ তুমহাদকে ঘিরে ধরে আশফাক-আরিফরা হম্বি-তম্বি করছেন। তেড়ে যাচ্ছেন। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাও দিলেন মনে হল কেউ কেউ। রেফারিকে বাঁচাতে ছুটে এসেছেন সহকারীরা। ম্যাচ কমিশনারও। এ রকম হাই ভোল্টেজ ম্যাচ খেলাতে অভ্যস্ত রেফারি ধাক্কা খেয়ে প্রথমে হলুদ কার্ড বের করলেন। তার পর পরপর দু’টো লালকার্ড। একটা সাদা-কালো চুলের আশফাককে, অন্যটা লম্বা চুলের আরিফকে। |
পুলিশ যখন গিয়ে রেফারিদের বের করে আনছে, তখন আবার দেখা গেল সংগঠক সাফ কর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতি আর ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছে মলদ্বীপ রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে। চিৎকার করে মলদ্বীপের কোচকে বলতে শোনা গেল, “আমাদের পেনাল্টি দেয়নি। ভারতকে ফাইনালে তোলার চেষ্টা হয়েছে পুরো ম্যাচে।” এএফসি কর্তারা মাঠে ছিলেন। তাঁরা ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্টের অপেক্ষায়। শাস্তি হতে পারে মলদ্বীপের।
মলদ্বীপ কোচ যখন এ সব বলছেন, তখন মনে হল বেশ মজা পাচ্ছেন ভারতের কোচ। স্বগতোক্তির ঢঙে কোভারম্যান্স বলছিলেন, “হতাশা থেকে এ সব করছে। ভেবেছিল আমরা ভূটান, শ্রীলঙ্কা? আমরা ভারত। আমরাও যে খেলতে পারি, বুঝতে পারেনি।” নেপালের কোচ এসে হাত মিলিয়ে গেলেন, ফাইনালের প্রতিপক্ষ আফগান কোচও। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ডাচ কোচ সব কৃতিত্ব দিলেন ফুটবলারদের। “ওরা কী করতে পারে দেখিয়ে দিয়েছে। নতুন ফর্মেশনে খেলিয়েছিলাম। ছেলেদের যা বলেছি করেছে। অনেক দলই জেতে কিন্তু ভাল খেলে না। আমরা ভাল ফুটবলও খেলেছি,” কথা থামতেই চায় না।
কোভারম্যান্স টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে ফিরতেই দরজা বন্ধ করে শুরু হয়ে গেল ‘লুঙ্গি ডান্স’। মিউজিক সিস্টেম বাজিয়ে। এটা ড্রেসিংরুমে সুনীল-গৌরমাঙ্গীদের নতুন আমদানি। গোল করার পর হাতে গিটার ধরার ভঙ্গিতে সেটা শুরু করেছিলেন অর্ণব। সেটাই চলল মিনিট দশেক। তার পর থামাতে বললেন কোচ। “কাজ শেষ হয়নি। আজ দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি। আরও একটা ফাইনাল বাকি। আমরা কিন্তু ট্রফি নিয়ে যেতে এসেছি।”
পুরো টিম এরপর নাচ থামিয়ে টিম বাসের দিকে। এত রাতেও জনা পনেরো ছেলে-মেয়ে ছবি তোলা বা সই নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে টিম বাসের সামনে। উল্টো দিকে মলদ্বীপের ড্রেসিংরুমের দরজা তখন বন্ধ।
হুঙ্কার নয়, ভিতরে কারা যেন চেঁচামেচি করছে। |