মহমেডান: ১ (অজয়)
ভবানীপুর: ১ (ব্যারেটো-পেনাল্টি) |
‘কলকাতা লিগ’ আর ‘বিতর্ক’ যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে!
রবিবারের ইস্টবেঙ্গল-কালীঘাট এম এস ম্যাচ কম আলোর জন্য পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার পর সোমবার লিগের দ্বিতীয় দিন মহমেডান-ভবানীপুর ম্যাচেও ‘বিতর্ক’-ই হয়ে উঠল মুখ্য চরিত্র।
বিতর্ক ১— প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, কার্লটন চ্যাপম্যান রেফারির দিকে তেড়ে গিয়ে উত্তেজিত ভাবে কিছু বলছেন। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার পরও রেফারির সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায় চ্যাপম্যানকে। যার ফল, ব্যারেটোদের কোচকে মাঠ থেকে বের করে দিলেন রেফারি রঞ্জিত বক্সি!
ভবানীপুরের অভিযোগ, ‘ইনজুরি টাইম’ পেরিয়ে যাওয়ার পরও রেফারি খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এবং সেই সময়ে জোসিমারের হেড থেকে অজয় সিংহের মাপা শটে ১-০ এগিয়ে যায় মহমেডান। ম্যাচের পর চ্যাপম্যান বললেন, “দু’মিনিট ইনজুরি টাইম দেখানোর পর কেন চার মিনিট রেফারি খেলা চালাল? আমি নিজের চোখে দেখেছি, বাঁশি বাজাতে গিয়েও বাঁশি বাজায়নি রেফারি। কেন? আমি এই ঘটনারই প্রতিবাদ করেছিলাম। এ দিন রেফারি দায়িত্ব নিয়ে পুরো খেলাটা নষ্ট করে দিল।”
বিতর্ক ২— দ্বিতীয়ার্ধে ২০ মিনিট খেলা হয়েছে। ঠিক এমন সময় ব্যারেটোকে বক্সের মধ্যে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন মহমেডানের স্টপার লুসিয়ানো। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরালেন ব্যারেটো। আর এরপরই অঝোর ধারার বৃষ্টির সঙ্গে মাঠের মধ্যে বর্ষণ শুরু হল জলের বোতল, ঢিল, চেয়ারের ভাঙা টুকরোর! |
লুসিয়ানো ও ব্যারেটো। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র। |
মহমেডানের উত্তেজিত সমর্থকদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দশ মিনিট পেরিয়ে যায়। ততক্ষণ খেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন রেফারিরা। ম্যাচের পর লুসিয়ানো জানিয়ে দিলেন, “আমি ব্যারেটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলিনি। অকারণে আমাকে লাল কার্ড দেখনো হয়েছে।”
বিতর্ক ৩— ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে মহমেডান সচিব ইকবাল আহমেদের মন্তব্য বাড়তি আগুন যোগ করে এ দিনের উত্তপ্ত ম্যাচে। ক্ষুব্ধ সচিব আইএফএ-কে সরাসরি আক্রমণ করে বলে দেন, “আইএফএ তো আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে ইস্টবেঙ্গল অথবা মোহনবাগানকেই লিগ চ্যাম্পিয়ন করবে। আমাদের তো জিততে দেবে না। এ জন্য রেফারিকেও হাত করে রেখেছে।” এরই সঙ্গে ইকবাল আহমেদের হুমকি, “এ ভাবে লিগ খেলার কোনও মানে হয় না। আমরা আর কলকাতা লিগ খেলব কি না, মঙ্গলবার কার্যকরী সমিতির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
এ দিন অবশ্য ম্যাচের শুরু থেকেই মহমেডান ছিল ছন্নছাড়া। মাঝমাঠের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়াই ছিল না ডিফেন্ডারদের বা ফরোয়ার্ডের। আজিজের ছেলেরা প্রি-সিজনে কঠিন অনুশীলন করার ফলে তাঁদের ফিটনেস নিয়ে সমস্যা ছিল না ঠিকই। গোটা ম্যাচে তাঁরা প্রচুর দৌড়োলেন। কিন্তু পুরোটাই দিশাহারা ভাবে। আজিজের ৪-৩-২-১ স্ট্র্যাটেজির গোলকধাঁধায় আটকে থাকলেন পাইতে, অজয় সিংহ, জেরিরা। লুসিয়ানো লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পর জোসিমারকে তুলে পেনকে নামান আজিজ। নাইজিরীয় মিডিও নামার পর মাঝমাঠ কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু সে সময় আবার লুসিয়ানো না থাকায় রীতিমতো কাঁপছে মহমেডানের রক্ষণ। একা ব্যারেটোকে সামলাতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হল সন্দীপ সাঙ্ঘাদের। আজিজ ম্যাচের পর বলছিলেন, “আমি ছেলেদের খেলায় সত্যিই হতাশ। তবে লুসিয়ানোর রেড কার্ডটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না রেফারির। দশ জন হয়ে যাওয়ার পর আমার দল আরও খেই হারিয়ে ফেলে।”
তবে দলের প্রতি দায়বদ্ধতা কাকে বলে তা আরও একবার দেখিয়ে দিলেন ব্যারেটো। চোট নিয়েও পুরো ম্যাচ খেললেন তিনি। যোগ্য অধিনায়কের মতোই দলকে উজ্জীবিত করলেন। যুবভারতী ছাড়ার আগে বলছিলেন, “আমার পায়ে ব্যথা করছিল। কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছি, আমি উঠে গেল আমার দলের ফুটবলাররা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বে। তা ছাড়া আমি দলের একমাত্র বিদেশি। মহমেডানের বিরুদ্ধে এক পয়েন্ট আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।”
ব্যারেটোর এই দায়বদ্ধতার কাছেই বোধহয় সোমবার যুবভারতীতে আটকে গেল মহমেডান। প্রথম ম্যাচে পাস নম্বর পেলেন না আজিজও।
মহমেডান: সোমনাথ, ধনরাজন, সন্দীপ, লুসিয়ানো, কোলিন, পাইতে (অ্যানটনি), স্যামসন, দীনেশ, জেরি (ইজরায়েল), অজয়, জোসিমার (পেন) |