দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
নাম মাহাত্ম্যেই টগবগে মোহনবাগান।
শনিবার তামিলনাড়ুর নীলগিরি থানা থেকে টেলিফোনে এক প্রকার ‘সমন’-ই পেয়েছেন বাগানের এক স্ট্রাইকার।
সাবিথকে তাঁর পুলিশ অফিসার বাবা সত্যেন টেলিফোনে বলেই দিয়েছেন, “জার্নেল সিংহ, চুনী গোস্বামীদের জার্সি পরে গত বছর ট্রফি পাওনি। বুড়ো হলে বাচ্চাদের কী বলবে? মঙ্গলবার থেকে রোজ গোল করো। তা হলেই ট্রফি আসবে। না হলে কড়া শাস্তি অপেক্ষা করছে বাড়ি ফিরলে।”
রেলওয়ে এফসি-র বিরুদ্ধে লিগের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার করিম বেঞ্চারিফার দলে আছেন এ বছরই ওএনজিসি থেকে আসা মালয়ালি রাইট ব্যাক ওয়াহিদ সালি। কেরলে তাঁর ফুটবলে হাতেখড়ি ছাপ্পান্নর মেলবোর্ন অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান পাওয়া ভারতীয় ফুটবল দলের ডিফেন্ডার টিএ রহমানের কাছে। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে যে মালয়ালির দাপুটে ফুটবল আজও বর্ষীয়ানদের স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে। সোমবার অনুশীলন শেষে বাড়ি ফেরার সময় সেই সালি আবার আবেগপ্রবণ, “স্যারের ক্লাবে খেলছি। রক্ষণকে একদম টাইট রেখে দেব। উনি ওপর থেকে সব দেখছেন। ইনশাল্লা, মাঠে জান লড়িয়ে দেব।”
সৌরেন দত্তর দলের বিরুদ্ধে চার ব্যাকের আগে দাঁড়িয়ে রক্ষণের সামনে পাঁচিল তুলে দেওয়া যার কাজ সেই সুদর্শন আদিল খান আবার বেশ একাগ্র। জাভি আলোন্সোর ভক্ত বলছেন, “ভুল করা চলবেই না।” |
কোচের কড়া নজরে অনুশীলন জাপানি তারকার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
আর বাগানের ‘ফুকুশিমা বম্বার’! ওডাফা, ইচে-হীন বাগানে কোচ এবং সমর্থকদের যিনি প্রাণভোমরা! সেই জাপানি কাতসুমি অনুশীলনের পরই সাংবাদিকদের দেখে দে দৌড়! সোজা গিয়ে থামলেন গাড়ির সামনে। তারপর পরিষ্কার বাংলায় বলে গেলেন, “কাল গোল করব। সাতটায় কথা বলব। আজ নয়।”
আর এই ‘সমন’, আবেগ, একাগ্রতা, আত্মবিশ্বাসের রিমোট কন্ট্রোল যাঁর হাতে বাগানের সেই কোচ করিম বেঞ্চারিফা আবার চূড়ান্ত দার্শনিক। “ম্যাচ, জয়, হার, পুরস্কার, তিরস্কার এগুলো নিয়েই তো জীবন। এখানে জেতা ছাড়া আর কোনও কিছুই দাম পায় না।” পরক্ষণেই লিগের প্রাথমিক পর্বে ১৫ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে থাকা রেলওয়ে এফসি সম্পর্কে সমীহ, “ওরা শীর্ষে ছিল। দুটো বিদেশিও ভাল। বেশ দৌড়োয়। কাজেই হেলাফেলা করার প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া আই লিগের আগে ঘরোয়া লিগ প্রস্তুতির বড় মঞ্চ।”
করিমের প্রথম একাদশও তৈরি। গোলে শিল্টন। রক্ষণে সালি, আইবর, রোয়িলসন, রবিন্দর। মাঝমাঠে আদিল, ডেনসন, কাতসুমি। আক্রমণে শঙ্কর, মণীশ ভার্গব, সাবিথ। তবে এ দিন অনুশীলনের একদম শেষ দিকে ‘মাসল পুল’ হয়েছে লেফট ব্যাক রবিন্দরের। তাই বিকল্প হিসাবে নিকোলাও বর্জেসকে তৈরি রাখছেন কোচ।
করিমের কৌশল ৪-৩-৩ ছকে আক্রমণাত্মক খেলে রেলকে বেলাইন করে দাও। দুই সাইড ব্যাক উইং ধরে আক্রমণের ঢেউ আছড়ে ফেলবেন রেলের সুন্দর মাণ্ডি, সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দের রক্ষণে। এছাড়াও বিপক্ষের বল কেড়ে আদিল মারফত ডাউন দ্য মিডল উঠে আসবেন কাতসুমি, ডেনসনরাও। মিডল থার্ডে ফ্রিকিক পেলে ডানদিক থেকে বিষভরা ইনসুইঙ্গার রেল বক্সে পাঠাবেন ডেনসন। বাঁদিক থেকে কাতসুমি। তিন ফরোয়ার্ডের সঙ্গে মাথা ছোঁয়াতে তখন চুপিচুপি বক্সে উঠে আসবেন আদিল।
রেলওয়ে এফসি কোচ সৌরেন দত্ত যদিও মোহনবাগানকে সমীহ করছেন না। গোলের মধ্যে সুকুমার তন্ময়রাও। দুই বিদেশি ইসিয়ানি আর ওরোক ফর্মে। বললেন, “শুরু থেকেই চেপে ধরব। হারলে অবনমন তো হবে না। পনেরোটা ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। ওদের কিন্তু প্রথম।”
শুনে হাসছেন করিম। চোট পেয়ে ওডাফা নেই। প্রাক-মরসুমে সাতটি অনুশীলন ম্যাচে ৩৫ গোল করা দলের কোচ বলছেন, “ঘরে বসে ওডাফা যখন শুনবে আমরা জিতেছি। তখন ও আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।”
|
মঙ্গলবার কলকাতা লিগে
মোহনবাগান : রেলওয়ে এফসি
(যুবভারতী, ৪-০০)। |