নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এত দিন অভিযোগ উঠত টুকটাক। বয়স ভাঁড়িয়ে ধরা পড়ত দুই কি তিন জন। কিন্তু শহরের নামী ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ক্রিকেটারদের বয়স ভাঁড়ানোর ঘটনা যে বাংলা ক্রিকেটকে এমন ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে, অম্বর রায় টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ভাবনাও তৈরি করতে পারে, সোমবারের আগে বোঝা যায়নি।
সিএবি-র অম্বর রায় (অনূর্ধ্ব ১৪) টুর্নামেন্টে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলার জন্য ধরা পড়ল প্রায় পঞ্চাশ জন ক্রিকেটার! কলকাতা পুরসভার কাছে এদের বার্থ সার্টিফিকেট পাঠিয়ে সিএবি জানতে পারল, পুরসভা থেকে এদের বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি! সব জাল! আর এরা কারা? অধিকাংশ শহরের নামী ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের, কিছু মাঝারি ক্যাম্পের। কোথাও ক্রিকেটার এসেছে শিক্ষিত পরিবার থেকে। বাবা ইঞ্জিনিয়ার। কেউ আবার এসেছে বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। যদিও অপরাধ এক। এবং ধরা পড়ে অপরাধীদের অভিভাবকের সাফাইও এক“ছেলেকে খেলাতে চেয়েছিলাম। তাই বয়স কমিয়ে দিয়েছি!”
যা শুনে সিএবি কর্তারা স্তম্ভিত। বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক কালে এর চেয়ে বড় লজ্জার সামনে পড়েনি বাংলা ক্রিকেট। আর বয়স ভাঁড়ানোর কঠোর দাওয়াই নিয়েও চরম বিভ্রান্ত সিএবি।
এক দলের বক্তব্য, অপরাধীদের কম করে তিন বছরের নির্বাসন দেওয়া হোক। কোচিং সেন্টারগুলোকে বলা হোক, আগামী অম্বর রায় টুর্নামেন্টে এমন কিছু ঘটলে দায় নিতে হবে তাদের। সিএবি-র সমস্ত টুর্নামেন্ট থেকে নির্বাসিত করা হবে সাত বছরের জন্য। কিন্তু আর এক পক্ষ বলছে, এ সবে লাভ হবে না। বরং অম্বর রায় টুর্নামেন্টে যে সব কোচিং সেন্টার খেলে, তাদের সিএবি-র অনুমোদিত সংস্থাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দিতে হবে। তাতে চট করে এ সব করতে কেউ সাহস পাবে না।
বয়স ভাঁড়ানোর রোগ নির্মূল করতে সিএবি অতীতে নানাবিধ চেষ্টা করলেও রোগ থেকে গিয়েছে। যেমন? এ দিন অভিযুক্ত ক্রিকেটার বা কোচিং সেন্টারকে সিএবি-র ক্রিকেট কমিটি ডেকে পাঠালে কখনও দেখা গেল, শহরের একটা নার্সিংহোম থেকে জন্মেছে দশ-পনেরো জন অভিযুক্ত! অথচ সেই নার্সিংহোম কোথায়, জানতে চাইলে অভিভাবকরা উত্তর দিতে পারছেন না। কলকাতা পুরসভার যে আধিকারিকের সই আছে জন্ম নথিতে, তা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম! কোথাও ক্রিকেটার জন্মেছে বিহারে, কিন্তু জন্ম সার্টিফিকেট কলকাতার! শোনা গেল, কিছু কোচিং সেন্টারের প্রতিনিধি নিরুত্তাপ গলায় বলে গিয়েছেন, ‘অভিযুক্তদের পাওয়া যাচ্ছে না,’ বা প্রছন্ন হুমকি দিয়েছেন, ‘কলকাতার সার্টিফিকেটে হবে না? জেলা থেকে আনাব!’ যা দেখেশুনে সিএবি-র কেউ কেউ প্রশাসকদেরও দোষ দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্রিকেটারদের জন্মনথি সিএবি কেন দেখেনি? উত্তরে যুগ্ম-সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “সন্দেহটা হয়েছিল বলেই তো পুরসভার কাছে সব পাঠালাম। আগে তো কেউ ধরতেও পারত না।” তবে তাঁর গলাও পরে অসহায় শোনাল।
যারা ধরা পড়েছে, পড়েছে কলকাতা পুরসভার জন্ম সার্টিফিকেট দেখিয়েছে বলে। কিন্তু জেলার কোচিং সেন্টার? যারা পঞ্চায়েত প্রদেয় জন্ম সার্টিফিকেট দিয়েছে?
সিএবি মেনে নিচ্ছে, তাদের ধরার ক্ষমতা সিএবি-রও নেই!
|
বয়স ভাঁড়ানোর বৃত্তান্ত |
রোগ |
দাওয়াই |
• একই নার্সিংহোম থেকে ১৫ ক্রিকেটারের জন্ম।
• সার্টিফিকেট জাল। দেখাচ্ছে ক্রিকেটারের বয়স ৭ বছর।
• জন্ম বিহারে, সার্টিফিকেট কলকাতা পুরসভার। |
• অন্তত তিন বছর নির্বাসন।
• কোচিং সেন্টারদের নির্বাসনের ভয় দেখানো।
• দরকারে অম্বর রায় বন্ধ করা। |
|