|
|
|
|
বনধের মধ্যেও অনুশীলন টিম ইন্ডিয়ার |
‘আশফাককে তো নেহরু কাপে দেখেছি’
রতন চক্রবর্তী • কাঠমান্ডু |
মাওবাদীদের ডাকা নেপাল বনধের মধ্যেই ফাইনালের দরজা খুলতে ‘চাবির খোঁজ’-এ নেমে পড়লেন উইম কোভারম্যান্স!
এবং সাফে গোলের ‘জাদুকর’ আলি আশফাককে নিয়ে দলের ডিফেন্ডারদের কাঁপুনি থামাতে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরেই বলে দিলেন, “আশফাক, ওকে গতকাল আফগানিস্তান ম্যাচে খেলতে দেখিনি। কিন্তু নেহরু কাপে তো দেখেছি।”
ডাচ কোচের জামানায় মলদ্বীপের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচই খেলেছে ভারত। গত বছর নেহরু কাপে। সুনীল-নবিরা ওই ম্যাচে বিপক্ষকে উড়িয়ে জিতেছিলেন তিন গোলে। কাঠমান্ডুতে সে প্রসঙ্গ ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে সামনে এনে মেহতাব-নির্মলদের কোচ হয়তো বোঝাতে চাইলেন, আশফাকের গত দু’ম্যাচে দশ গোলকে তিনি তেমন গুরুত্ব দিতে চান না।
“আর একটা টাফ ম্যাচ। আর একটা ফাইনাল। পিছনের সব কথা ভুলে সামনের কথা ভাবছি,” শনিবার সকালে অনুশীলনের আগে বলে দিয়েছেন গোমড়া মুখে ঘুরে বেড়ানো ভারতীয় কোচ।
মলদ্বীপের বিরুদ্ধে ভারতের রেকর্ড চমকে দেওয়ার মতো। বলা যায় একতরফা। দু’দেশের শেষ দু’টো ম্যাচ— সাফ ও নেহরু কাপ, দুটোতেই জিতেছিল ভারত। দুটো ম্যাচেই তিন গোল ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী আর রহিম নবি। তবে সোমবার দশরথ স্টেডিয়ামে সুনীল থাকছেন না। আর সেটা এই ভারতের পক্ষে কতটা আতঙ্কের, তার জন্য মলদ্বীপের কোচ উরবানি ইস্তাভনের একটা মন্তব্যই যথেষ্ট। “আমাকে যদি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসে আজ কেউ জানতে চাইত তুমি কী চাও, আমি বলতাম সুনীল যেন কাল না খেলে।”
সুনীলের জায়গায় কে খেলবেন এ দিন পুলিশ মাঠের ক্লোজ্ড ডোর অনুশীলনে তা দেখাতে চাননি তীব্র চাপে পড়ে যাওয়া জাতীয় কোচ। টিম সূত্রের খবর, সবাইকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। শেষ চারের ম্যাচ হলেও পেনাল্টি কিক অনুশীলন হয়নি ভারতের। জানা গিয়েছে, ছেত্রী বিহীন ভারতকে ৪-৫-১ দিয়েই শুরু করবেন, না ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল নামাবেন তা নিয়েই ধন্দে রয়েছেন কোভারম্যান্স। |
কাঠমান্ডুতে অর্ণবদের প্রস্তুতি। |
গত বার সাফে মলদ্বীপের বিরুদ্ধেই সেরা ম্যাচ খেলে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। আলি আশফাক বা তাঁর সতীর্থরা কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি। তবে এ বার ছবিটা অনেক পাল্টেছে। সুনীলের ফর্ম খুব খারাপ এবং কার্ডের জন্য তিনি মাঠের বাইরে। আর আশফাক? ট্রিপল হ্যাটট্রিক-সহ দশ গোল করে হুঙ্কার দিয়েছেন, “এ রকম দূর্বল ভারতকে আমি কখনও দেখিনি।” “আমি চাই আমাদের সব দল দুর্বল দল হিসেবেই দেখুক। তবে তারা যেন মনে রাখে, আমরা গ্রুপ অব ডেথ থেকে শেষ চারে উঠেছি।” ১৯৮৮ ইউরো কাপ জয়ী নেদারল্যান্ডস টিমের সদস্য কোভারম্যান্স এ ভাবেই পাল্টা দিয়েছেন বিপক্ষের সেরা স্ট্রাইকারকে।
নেপালে এ দিন ছিল আট ঘণ্টার চাক্কা বনধ। পুলিশ এসকর্ট নিয়ে নবি-মেহতাবদের টিম বাস অবশ্য মাঠে পৌঁছে গিয়েছিল সকালের নির্ধারিত সময়েই। মিডিয়ার লোকজনকে রিকশা চড়ে পৌঁছতে হল দূরের পুলিশ মাঠে। এবং কোভারম্যান্সের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, ‘অন্য টিম ইন্ডিয়া’-কে সোমবার দশরথ স্টেডিয়ামে দেখাতে তিনি মরিয়া। “কবে জিতেছি, কবে খারাপ খেলেছি, এ সব নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না। সেমিফাইনাল অন্য ম্যাচ হবে,” বলে দিয়েছেন সুনীল-নবিদের কোচ।
আর অনুশীলনের পর মিনিট পাঁচেকের টিম মিটিং-এ ফুটবলারদের চাঙ্গা করতে চেয়েছেন এই বলে যে, “সমালোচনা থামানোর জন্য শেষ দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। আগের ম্যাচ কী খেলেছ ভুলে যাও। নতুন করে ভাবো, তৈরি হও।” ফুটবলারদের কথা বলার উপর ফতোয়া। যাঁদের এ দিন সরকারি ভাবে পাঠানো হয়েছিল কথা বলতে, সেই রাজু গায়কোয়াড় এবং সন্দেশ ঝিংগান রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলার। কিন্তু কোচকে এড়িয়ে সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে যা বেরিয়ে আসছে তা হল, ফাইনালে উঠতে তাঁরা মরিয়া। তবে মুখে এ সব বললেও, টিম ইন্ডিয়ার মধ্যে কি সেই শক্তি বা আগুন আছে? এক ফুটবলার বললেন, “গতকাল মলদ্বীপের খেলা দেখার পর আমাদের সবার মনে হচ্ছে একটু খেলতে পারলে ওদের হারানো সম্ভব। আহামরি কিছু দল নয়।” টিমের এক সিনিয়র ডিফেন্ডারের ফোনে মন্তব্য, “আরে আশফাক তো এখনও চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়েনি। দশ গোল করেছে তো শ্রীলঙ্কা আর ভুটানের বিরুদ্ধে। আমাদের বিরুদ্ধে খেলুক না। দেখা যাবে। ”
ভারতের সবথেকে বড় সুবিধা তিন দিন বিশ্রাম পাওয়ার পর খেলতে নামছে। মলদ্বীপ পাচ্ছে দু’দিন। এ দিন মলদ্বীপ ফুটবলাররা অনুশীলনের পর হোটেলে ফেরেননি। শপিং করতে বেরিয়েছিলেন। সূচি এবং মাঠ নিয়ে ক্ষিপ্ত কোভারম্যান্স এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন, “সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছি। আমাদের টিমের সবাই ফিট।”
রহিম নবিকে অধিনায়কত্ব না দিয়ে কেন গৌরমাঙ্গীকে অধিনায়ক করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করার আগেই অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে গটগট করে অনুশীলনের মাঠের দিকে চলে যান কোভারম্যান্স। কিন্তু নেপাল ম্যাচে পুরো নব্বই মিনিট যথেষ্ট লড়ার পরও পান্ডুয়ার ফুটবলারটির প্রতি কোচের মনোভাব বদলায়নি। “নবি প্রথম দিকে ভাল খেলেছিল। ও যে খেলার মধ্যে নেই, সেটা শেষের দিকে বোঝা গিয়েছে। দম ফুরিয়ে এসেছিল। সে জন্যই পায়ে টান ধরেছিল।” নবি অবশ্য ফতোয়ার জেরে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর চোখ মুখ দেখে মনে হয়েছে, আগের দুই মলদ্বীপ ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও গোল করে জবাব দেওয়া জন্য তৈরি হচ্ছেন।
আশফাক-ভীতি থেকে দলকে উদ্ধার এবং তাঁকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা থামানোর দাওয়াই—জোড়া চিন্তায় ঘুম ছুটেছে কোভারম্যান্সের। হারলে যে তাঁর চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়বে, সেটা মনে হয় বুঝে গিয়েছেন ডাচ কোচ! |
পুরনো খবর: ভারতকে দুর্বল বলছেন আত্মবিশ্বাসী আশফাক |
|
|
|
|
|