আবার সেই জলকাদা পেরিয়ে ঘাসের উপর দিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়। আবার সেই ছাতা মাথায় গ্যালারিতে পারিপার্শ্বিক ভুলে উদ্দাম নাচ। ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে একবার না একবার আপনার মনে হবে, এই রে, বয়স বেড়ে গেল তো আরও এক বছর!
এক বছর বয়স বাড়ল ইস্টবেঙ্গলেরও। ৭১ বছর আগের এ রকমই এক অগস্টে ইস্টবেঙ্গল তাদের প্রথম লিগ জয়ের ট্রফি সাজিয়ে ফেলেছে ক্লাব তাঁবুতে। আর সেই আনন্দে গা ভাসাতে ময়দান হয়ে উঠেছিল জনসমুদ্র। র্যাম্পার্টে ইট, টেবলের উপর দাঁড়িয়ে সোমান্না-সুনীল ঘোষ-পরিতোষ চক্রবর্তীদের দেখার জন্য চরম উন্মাদনা। উল্লাস।
কিন্তু এখন সেই র্যাম্পার্টও নেই। সমর্থকদের মধ্যে সেই উন্মাদনাও চোখে পড়ল না। নইলে রবিবার মরসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিন ক্লাব তাঁবুর সামনের চত্বরটা এত ধু ধু করে? চিডি-ওপারারা গাড়ি চড়ে অনায়াসে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তবু তাঁদের পিছনে ধাওয়া করার লোক নেই। সৌমিক-অ্যালভিটোদের জন্য শুভেচ্ছা ভরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ডও নেই। গত তিন বছরে আটটা ট্রফিজয়ী ক্লাবের কাছে এই দৃশ্য যেন একেবারেই বেমানান!
ইস্টবেঙ্গলের বাইরের পরিবেশ যাই থাকুক না কেন, অন্দরমহলের দৃশ্যপট ভরা বহুমুখী রঙে। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের প্রথম পরীক্ষায় নামার আগে যখন জোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ব্রাজিলিয়ান কোচ মার্কোস ফালোপা, তখন প্রথম দলে জায়গা বানানোর যুদ্ধে অসি-টক্কর চলছে স্বদেশি ফুটবলারদের মধ্যে। হোক না কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ ম্যাচ! |
তাতে কী? কাঠমান্ডুতে জাতীয় কর্তব্যরত ফুটবলার অর্ণব-মেহতাবদের যোগ্য বদলি হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে মরিয়া লোবো-সুবোধরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সই করতে না পারায় ওপারা-চিডিকে পাওয়া যাবে না। সুয়োকা-মোগাকে আঠারো জনের দলে রাখলেও, সম্পূর্ণ সুস্থ নন তাঁরাও। তাই লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচের মন জিততে বাড়তি পরিশ্রম করতে দেখা গেল ভাসুম-রবার্ট-অ্যালভিটোর মতো রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের।
ফালোপার স্ট্র্যাটেজি হল, প্রত্যেককেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো। যাতে দলের প্রয়োজনে যে কোনও ফুটবলার যে কোনও জায়গায় খেলতে পারে। প্রায় বছর খানেক বাদে লেফট ব্যাকের পরিবর্তে ফের স্টপারের ভূমিকায় দেখা যাবে সৌমিক দে-কে। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার বলছিলেন, “গত বছর কলকাতা লিগে শেষ বার স্টপারে খেলেছিলাম। নতুন কোনও চ্যালেঞ্জ নয় আমার কাছে। আশা করছি, অসুবিধা হবে না।” সৌমিকের পাশে খেলবেন গুরবিন্দর সিংহ। ট্রেভর মর্গ্যানের দলে যিনি বেশির ভাগ সময়ই রিজার্ভ বেঞ্চে কাটিয়েছিলেন, তিনি রবিবারের ম্যাচে লাল-হলুদ অধিনায়ক। হরমনজোৎ সিংহ খাবড়ার চোটেই গুরবিন্দরের ভাগ্য উজ্জ্বল। দুই সাইড ব্যাক নওবা-রবার্ট। মাঝমাঠে লোবো-সুবোধ, উইংয়ে ডিকা/ভাসুম/অ্যালভিটোর মধ্যে যে কোনও দু’জন খেলবেন। ফরোয়ার্ডে বলজিৎ-জোয়াকিম জুটি। গোলে অভিজিৎ।
মরসুমের নতুন অভিযান শুরুর আগে অবশ্য অসম্ভব বিনয়ী লাল-হলুদ কোচ। ফালোপা বলছিলেন, “কোয়ালিফায়িং রাউন্ড খেলায় ওদের ম্যাচ প্র্যাক্টিস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা বেশ কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও, প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ এখনও খেলিনি। কালীঘাট ছোট দল না বড় দল, সেটা ভাবার বিষয় নয়। আমরা প্রথম নামছি। এবং প্রথম ম্যাচ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ।” ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ধারাবাহিক সাফল্যের পরে, ফালোপাকে নিয়ে প্রত্যাশার চাপ আরও তুঙ্গে ইস্টবেঙ্গলে। আর এই চাপটা যে অনুভব করছেন স্বয়ং ব্রাজিলিয়ান কোচও, সেটা ধরা পড়ল তাঁর মোবাইলের কললিস্টে। অনুশীলন শেষ। পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই মোবাইল বেজে উঠছে। শুরুতে বুঝতে না পারলেও, পরে দেখা গেল সল্টলেকের বাড়ি থেকে স্ত্রী আনার ফোন। চাপ কাটানোর নতুন পদ্ধতি নাকি? এক গাল হাসি ছাড়া আরও কোনও জবাব পাওয়া গেল না ফালোপার মুখে।
মাঠে অর্কেস্ট্রা, ‘ক্লোজ ডোর’ প্র্যাক্টিস কিংবা ছেলে ‘ময়দানি বাবাই’ আমেরিকোর অভিনব ফিটনেস ট্রেনিং— বাদ নেই কোনও রসদ। কিন্তু মাঠে ব্রিটিশ কোচের স্মৃতি কি ভোলাতে পারবেন? লাইটস, ক্যামেরা প্রস্তুত। এ বার শুধু অ্যাকশন দেখার অপেক্ষা!
|
রবিবার
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে
ইস্টবেঙ্গল : কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ
(ইস্টবেঙ্গল, ৪-০০)। |
|
পুরনো খবর: ‘কথা কম, কাজ বেশি’
|