সাফ খেলে ফিরেই মেহতাব হোসেন নেমে পড়বেন কলকাতা লিগ খেলতে। তার পর লাল-হলুদ জার্সিতে এএফসি কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবেন যুবভারতীতে। তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু রহিম নবি কী করবেন?
সন্দীপ নন্দী কলকাতায় ফিরে কলকাতা লিগে নামবেন। তার পর আই লিগ। রোজ খোঁজ রাখছেন ক্লাবের। ওডাফা এক মাস মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় চিন্তিত। কিন্তু জাতীয় দলের এক নম্বর কিপার সুব্রত পাল কী করবেন কাঠমান্ডু থেকে ফিরে? পাড়ার মাঠে অনুশীলন করে যাবেন?
ভারতে ফিরেই বেঙ্গালুরু এফসি-র জার্সি পরে আই লিগ খেলতে নামবেন সুনীল ছেত্রী। অর্ণব মণ্ডল ক্লাবের লাল-হলুদ জার্সি পরে উগা ওপারার সঙ্গী হবেন। লেনি, জুয়েলরা নেমে পড়বেন গোয়া লিগে যে যাঁর ক্লাবের হয়ে। কিন্তু নির্মল ছেত্রী বা গৌরমাঙ্গী সিংহের ভবিষ্যৎ কী? তাঁরা কি বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেবেন?
সাফ যত শেষ হয়ে আসছে, ততই আইএমজি-আর লিগে চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারদের হতাশা বাড়ছে। মাইনে পাচ্ছেন আইপিএল স্পনসরদের থেকে। কিন্তু কেরিয়ারটাই যে অনিশ্চয়তায়। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতা লিগে নেমে পড়ছে বড় দল। ২২-২৩ তারিখ থেকে আই লিগ। ক্লাব না নিলে সেই জানুয়ারি পর্যন্ত বসে থাকতে হবে নবি-সুব্রতদের। তা-ও তো তিন মাসের লিগে। বাকি ন’মাস। শুধুই প্র্যাক্টিস করে যেতে হবে?
সাফে বিশ্রী ফর্মে থাকা ভারতকে ফাইনালে তোলা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তার মধ্যেই তাই গোপন আলোচনা চলছে সুব্রত-নবি-নির্মল-গৌরমাঙ্গীদের। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করেছেন, নেপাল থেকে সরাসরি মুম্বই গিয়ে আইএমজি-আর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
কোচের ফতোয়ায় মুখ খুলতে পারছেন না কোনও ফুটবলারই। তবে রহিম নবি ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, “ওদের সঙ্গে তো কথা বলতেই হবে। আমাদের চুক্তির সময় বলা হয়েছিল ক্লাবের সঙ্গে ঝামেলা মিটে যাবে। আই লিগে খেলতে পারব। কিন্তু কিছুই তো হল না। তাই আমরা ঠিক করেছি সাফ শেষ হওয়ার পর মুম্বই গিয়ে কথা বলব।”
নবি অবশ্য দেশে ফিরেই ২০ সেপ্টেম্বর চলে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবে ট্রায়াল দিতে। মেজর লিগ সকার-এর ক্লাব ডিসি ইউনাইটেডে এক সপ্তাহ ট্রায়াল দেওয়ার কথা। বলছিলেন, “ভিসা হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় ফিরে ইন্টারভিউ দিতে হবে। ওরা বলেছে এক সপ্তাহ রাখবে। একটা ম্যাচ খেলাবে।” কিন্তু ট্রায়াল দিয়ে দেশে ফিরে আসার পর কী করবেন, তা নিয়েই তাঁর চিন্তা। “আমাকে তো কলকাতার দু’টো ক্লাব চাইছে। কোথাও একটা খেলতে তো হবেই। জোট হয়েই ঝামেলা হয়েছে। কেউ বেরিয়ে আসতে পারছে না।”
ফুটবল আইপিএল বা নতুন লিগে চুক্তিবদ্ধ কোনও ফুটবলারকে নেওয়া হবে না, এই সিদ্ধান্তে এখনও অনড় আই লিগের ক্লাব জোট। আইএমজি-আরের সঙ্গে গত মাসে জোটের যে আলোচনা হয়, তাতে নবি-সুব্রতদের কথা তোলেনি স্পনসররা। তাতে আরও হতাশ চুক্তিবদ্ধ ফুটবলাররা। চুক্তিবদ্ধ এক ফুটবলার এ দিন টিম হোটেল থেকে ফোনে বলছিলেন, “কোথাও না কোথাও তো খেলতে হবে। নবিকে যে পাঠানো হচ্ছে, ও সুযোগ পাবে না জানি। কিন্তু পেলেও তো খেলতে পারবে না। ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ। ওসব ললিপপ দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা খেলতে চাই। বসে তো আর থাকব না।”
আই লিগের ক্লাব জোট অবশ্য মজা দেখছে। জোটের এক কর্তা কলকাতা থেকে ফোনে বললেন, “আইএমজি-আরের উপর এ বার আসল চাপটা আসবে। ওদের এজেন্টরা তো চুক্তি করার সময় বলেছিল আই লিগে সবাইকে খেলানোর ব্যবস্থা করে দেবে। বিদেশে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে দেবে। কোথায় গেল সব?” মেহতাব হোসেনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো মোহনরাজ নিজস্ব চিন্তায়। তাঁর ক্লাব মুম্বই টাইগার্স তো আই লিগের মূলপর্বেই খেলছে না। তিনি ক্লাব খুঁজছেন।
সব মিলিয়ে যা অবস্থা, তাতে সাফে খেলা উইম কোভারম্যান্সের প্রথম একাদশের অর্ধেক ফুটবলারেরই দেশে ফিরে ক্লাব নেই। মুখে যতই বলুন ‘এখন সাফ নিয়েই ভাবছি’, প্রত্যেকেরই রাতের ঘুম ছুটেছে। |