এখনও দীপশিখা: সৌরভ ৪১ বছর ৬১ দিন
ছোটরা শিখল, ওরা নিজেরাই হতে পারে নিজেদের আদর্শ
ওঁরা কেউ ঠিক করেছেন, আজকের পর প্র্যাক্টিসের নির্ঘণ্টে নিয়ম করে আয়না-পর্বটা রাখতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলতে হবে, ‘আয়্যাম দ্য বেস্ট।’
ওঁরা কেউ শপথ নিচ্ছেন, নেট সেশনে এতটুকু ঢিলেমি নয়। বরং রগড়ানিটা বাড়াতে হবে। আর শুধু মুখে ‘করছি, করব’ নয়। পরিশ্রমটা বেড়েও গেল। বাড়ল আজ থেকে, শুক্রবারের ‘মোটিভেশন’ ক্লাস শেষের ঠিক পরপর।
ওঁরা সবাই আঠারো-উনিশ, ওঁরা সবাই বাংলা জুনিয়র। এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার ওঁদের জীবন কিছুটা বোধহয় পাল্টে দিল। পাল্টে দিলেন এমন দু’জন যাঁদের জীবনের সঙ্গে ‘কামব্যাক’ শব্দটা অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে।
প্রথম জন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বাইশ গজে যাঁর কামব্যাক-কাহিনি ক্রিকেট-রূপকথায় ঢুকে পড়েছে।
দ্বিতীয় জন অভীক চৌধুরী। দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবে শুরু করেও ক্রিকেটটা ছাড়তে হয়েছে এক পথ দুর্ঘটনায়। ক্রিকেটের বাইশ গজে প্রত্যাবর্তন ঘটেনি। কিন্তু জীবনের বাইশ গজে ‘কামব্যাক’ ঘটিয়েছেন অভীক। মৃত্যুকে হারিয়ে।

শিক্ষক দিবসের পরের দিন মাস্টারমশাইয়ের ভূমিকায়। অনূর্ধ্ব উনিশদের সঙ্গে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
এবং উপরোক্ত দু’জনের সিএবি আয়োজিত ‘মোটিভেশন’ ক্লাস শেষে জুনিয়রদের অধিকাংশ বাক্রহিত। অনূর্ধ্ব উনিশের বাঁ হাতি ওপেনার শুভ্রজিৎ দাস যেমন। বলে ফেললেন, “দাদার কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে নিজেকেই নিজের আদর্শ করার ব্যাপারটা। নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখাটা। সচিন আমার রোল মডেল। কিন্তু এখন থেকে সচিন যেমন আমার সামনে থাকবে, তেমন আমি নিজেও থাকব।” আর এক ব্যাটসম্যান অঞ্জনাভ সাহা আবার বলছিলেন, “ক্লাসের পরেই বাড়তি প্র্যাক্টিস করা শুরু করেছি। এ বার থেকে মাঠে হীনমন্যতায় ভুগব না।”
পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ক্লাসে কী কী বললেন সৌরভ?
নিজের টেস্ট জীবনের কথা তুলে আনলেন। বলে দিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটা সময় প্রত্যেকটা টেস্ট সেঞ্চুরির পর তাঁর প্রথম কাজ হত হোটেলে ফিরে সেঞ্চুরির ঠিক আগের দিন কী কী করেছিলেন, লিখে রাখা। বুঝিয়ে দিলেন, যে কোনও পেশায় উন্নতি শুরু হয় পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ বছর বয়সে। ক্রিকেটারদের জীবনে যেটা ‘স্লগ ওভার’। হাতে পাওয়া যায় শুধু দশ-বারোটা বছর যখন পরিবার, বন্ধু, বান্ধবী সবাইকে ভুলে থাকতে হয়। কখনও তাঁর ক্লাসে উদাহরণস্বরূপ ঢুকে পড়লেন সচিন তেন্ডুলকর, কখনও আবার কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলার ছোটদের দীক্ষা দিলেন স্টিভ-মন্ত্রে! রীতিমতো পরিসংখ্যান টেনে ক্লাসে সৌরভ বলে দিলেন, “সচিনের কেরিয়ারটা দ্যাখো। সাড়ে তিনশো ইনিংসের মধ্যে দেড়শোটায় সেঞ্চুরি বা হাফসেঞ্চুরি আছে। বাকি দুশোটায় পারেনি। তোমাদেরও এই ব্যর্থতা থেকে সাফল্যে ফেরাটা শিখতে হবে।” আর ৩০-৩ হয়ে গেলে? এ বার উত্তর, “বিশ্বাসটাই আসল। স্টিভ যেটা রেখে ম্যাচ বার করত।”
দাদাগিরির মন্ত্র
• খাটনি, ফিটনেস আর লেগে থাকার বিকল্প নেই।
• ক্রিকেট অনেকটা বক্সিংয়ের মতো। মার খেতে হবে, মারতেও হবে।
• পড়াশোনা আর ক্রিকেট দুটোকে ব্যালেন্স করে চলতে হবে।
মানসিক কাঠিন্য বাড়ানোর ‘দাদা-দাওয়াই’ তা হলে কী? প্রবল খাটুনি, ফিটনেস আর লেগে থাকার কোনও বিকল্প নেই। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলে ফেলো, “আমিই সেরা।” খারাপ সময়ে অন্যের উপর রাগ দেখাবে না। জানবে, ক্রিকেটারের সঙ্গে একজন বক্সারের তফাত নেই। ক্রিকেটারকেও মার খেতে হয়। ছিটকে পড়তে হয়। কিন্তু পাল্টা ‘আপার কাট’টাও মারতে হবে! আধ ঘণ্টার তফাতে অভীক আবার বুঝিয়ে গেলেন, চলৎশক্তিহীন অবস্থায় মানুষ যদি প্রত্যাবর্তনের আশাবাদে ডুবে যেতে পারে তা হলে ক্রিকেট মাঠের চাপ সামলে ফেরাটা কোনও ব্যাপারই নয়।
মিডিয়ার বুমে বন্দি হয়ে পরে সৌরভ হাসছিলেন, “সিনিয়র টিমেরও এ রকম দরকার হলে আমি আছি। তবে সব অভিজ্ঞতা আজ বলিনি। ওরা ছোট, মেলাতে পারত না।” তখনও তিনি জানতেন না, সন্ধের মধ্যে ‘মোটিভেশন’ ক্লাসের দুই অর্ধকে দু’টো ভাগে ভেঙে ফেলবে বাংলা ক্রিকেটেরর উনিশ-কুড়িরা। রায় দিয়ে দেবে, নিজের জীবনকে টেনে ক্রিকেট মাঠের টেনশনকে যদি অভীক হালকা করে দিয়ে থাকেন, তা হলে কাঠিন্য বাড়ানোর ওষুধ ও তার ‘ডোজ’ লিখলেন শুধু একজন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.