আমরা মারিনি, ধোঁয়াশা ছড়াল তালিবান-দাবি
ফগানিস্তানে নিহত বাঙালি লেখিকা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুস্মিতার দেহ কলকাতায় এনে সৎকার করতে চান তাঁর ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু কী ভাবে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এরই মাঝে তৎপর হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে মহাকরণ সূত্রে খবর।
বুধবার রাতে আফগানিস্তানের গজনী এলাকার শারান শহরে মুখোশপরা বন্দুকধারীদের গুলিতে মারা যান কাবুলিওয়ালার বাঙালি বৌ। আফগান পুলিশ সূত্রে সংবাদ সংস্থাকে জানানো হয়েছে, সুস্মিতাকে ২০ বার গুলি করেছিল আততায়ীরা। এমনকী উপড়ে নিয়েছিল তার মাথার চুলও। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল, তালিবান জঙ্গিরাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। কিন্তু শুক্রবার তালিবান মুখপাত্র দৌলত খান জাদরান সংবাদ সংস্থা এএফপি-র কাছে দাবি করেছেন, “আমরা ওই ভারতীয় মহিলাকে মারিনি। এটা মুজাহিদিনদের গায়ে কালি লেপার জন্য সরকারের অপপ্রচার।” কাবুলের সরকারি সূত্র অবশ্য বলছে, ২০০১ সাল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত তালিবান সাধারণ ভাবে কোনও মহিলাকে হত্যার দায় স্বীকার করে না। পাকটিকা প্রদেশের পুলিশ প্রধান দওলত খান জাদরান এ দিনও বলেছেন, অতীতে সুস্মিতা যে সব কথা বলেছিলেন এবং লিখেছিলেন সে জন্য তাঁর উপরে তালিবানের রাগ ছিল। তদন্তের গতিপ্রকৃতি বলছে, তদন্তের গতিপ্রকৃতি বলছে সেই কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।
সুস্মিতা-হত্যার প্রতিবাদে সামিল কলকাতা। শুক্রবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
বুধবার রাতে সুস্মিতাদের বাড়িতে ঠিক কী ঘটেছিল, সে ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে গোপালবাবু। বাগুইআাটির বাড়িতে বসে বুধবার বিকেলেও পিসির সঙ্গে ফেসবুকে চ্যাট করেছেন গোপালবাবুর ছেলে অনীশ। কিন্তু লাইন কেটে যাওয়ায় বেশি ক্ষণ কথা চালাচালি হয়নি। অনীশের কথায়, “পিসির সঙ্গে আমি মাঝেমধ্যেই ফেসবুকে চ্যাট করতাম। বুধবার বিকেলেও এক বার পিসিকে পেয়েছিলাম ফেসবুকে। কিন্তু কুশল বিনিময় করেই পিসি অফলাইন হয়ে যায়।” তার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই দুঃসংবাদ। তখন থেকেই বার বার সুস্মিতা এবং তাঁর স্বামী জানবাজের ফোনে কল করে চলেছেন গোপালবাবু। সুস্মিতার ফোন বন্ধ। জানবাজের ‘নট রিচেবল’। জানবাজ নিজে কেন ফোন করে সুস্মিতার মৃত্যুসংবাদ দিলেন না, সেই প্রশ্নও জাগছে গোপালবাবুদের মনে। আপাতত আফগানিস্তান থেকে একটা ফোনের অধীর প্রতীক্ষায় তাঁরা। আশা, সেই ফোন কাটিয়ে দেবে যাবতীয় ধোঁয়াশা।
সুস্মিতার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশায় বিদেশ মন্ত্রকও। গোটা বিষয়টি জানার জন্য আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এ দিন বলেন, “ঘটনাটা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এই ধরনের খবর একটা বড় ধাক্কা দেয়।”
বিরোধীরা অবশ্য এ দিন সুস্মিতা-প্রসঙ্গে উদাসীনতার জন্য সরকারকে দুষেছে। রাজ্যসভায় সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন বলেন, “সরকার সুস্মিতার হত্যা সম্পর্কে সংসদকে কিছু না-জানানোয় আমি অবাক। কাগজ দেখে আমাদের খবরটা জানতে হলো!” তৃণমূলের পক্ষ থেকেও সুস্মিতার হত্যা-প্রসঙ্গ তোলা হয়। প্রশ্ন ওঠে ভারতের বিদেশ নীতি নিয়েও।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানে তালিবান যে ভাবে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। আগামী বছর আমেরিকা সেখান থেকে সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, সেটা স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া, আফগান-ভারত সম্পর্কের সঙ্গে পাকিস্তানও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সেটাও বাড়তি চিন্তার বিষয়। বস্তুত আফগানিস্তান নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট নীতির ব্যাপারে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি ভারত ও পাকিস্তান।
খুরশিদ অবশ্য এ দিন বলেন, এই ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা, বিশেষ করে মেয়েদের উপরে আক্রমণের ঘটনা বন্ধ করার ব্যাপারে দিল্লি এবং কাবুল বদ্ধপরিকর। এটাই দুই সরকারের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর কথায়, “আফগানিস্তানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং তাকে সুসংহত করার প্রয়াসের পাশে আমরা রয়েছি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সে দেশের সরকারের লড়াইকে আমরা সব রকম সাহায্য করছি।”

এই সংক্রান্ত খবর
পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.