সিরিয়া নিয়ে যে কোনও ব্যবস্থাই রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করল ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপস্থিতিতে এক নৈশভোজের আসরে এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা নিয়ে সরগরম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসর। ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক সৌজন্যের পর্দা ছিঁড়ে বেরিয়ে পড়ছে বিরোধের আসল রূপ। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটে হেরে যাওয়ায় সামরিক অভিযানে আমেরিকার পাশে থাকবে না ডেভিড ক্যামেরন সরকার। তাই তাঁকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বারাক ওবামা।
এখনও সিরিয়ার পাশে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর এক মুখপাত্র ব্রিটেনকে “গুরুত্বহীন দ্বীপ’ বলায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল গত কাল। ডেভিড ক্যামেরন সাফ জানিয়ে দেন, সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ব্রিটেন। ব্রিটেনের গুরুত্ব কমে যাওয়ার কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আজ অবশ্য ওই মন্তব্য করার কথা অস্বীকার করেছেন পুতিনের মুখপাত্র। কিন্তু, তাতে কমছে না কূটনৈতিক উত্তাপ। |
জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ছবি: এএফপি। |
এই পরিস্থিতিতে গোড়া থেকেই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সিরিয়া সমস্যার সমাধানের পক্ষে সওয়াল করছে নয়াদিল্লি। গত কাল একটি নৈশভোজ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। সেখানে সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। মন্টেক জানান, সামরিক অভিযান হলেও তা রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মনমোহন। আসাদের সেনার বিরুদ্ধে বিরোধীদের উপরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পরেই সামরিক অভিযানের কথা ভাবছে আমেরিকা।
মনমোহনের কথায়, “যে কোনও দেশেই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিন্দনীয়।” সিরিয়ায় কী হয়েছে তা রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞ দল খতিয়ে দেখছে। ওই দলের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা উচিত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি মুন জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই সিরিয়া থেকে পাওয়া নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেবেন বিশেষজ্ঞরা। তখনই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে কি না তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
তবে নমুনা পরীক্ষার ফল যা-ই হোক, সিরিয়া নিয়ে আমেরিকাকে চাপে রাখতে চাইছে রাশিয়া। কূটনীতিকদের মতে, জি-২০ সম্মেলনে পুতিনের অবস্থানের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। সিরিয়ার সমস্যার কোনও সামরিক সমাধান নেই বলে আজ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। আবার রাশিয়ার চাপেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়া নিয়ে কার্যকরী প্রস্তাব নেওয়া যাচ্ছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূত সামান্থা পাওয়ার্স।
ভূমধ্যসাগরে সিরিয়ার কাছে টহল দিতে আজও একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে মস্কো। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় টহল দিচ্ছে সে দেশের বেশ কিছু যুদ্ধজাহাজ ও নজরদারি জলযান। এ ভাবে মস্কো সামরিক দিক থেকেও আমেরিকাকে চাপে রাখতে চাইছে বলে মত কূটনীতিকদের। সিরিয়া অভিযানের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে মার্কিন বাহিনী। তার পর থেকেই ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানো শুরু করেছে রাশিয়া। আজও একটি জাহাজ পাঠিয়েছে তারা।
|