এখন টায়ারের দোকান চালান সুঠাম পুরুষ উসমান আক্রম। আট মাস আগেও যিনি ছিলেন পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের মিষ্টি মেয়ে নাগিনা!
শুধু তাই নয়, দু’বছর ধরে তিনি ছিলেন কারও স্ত্রী। সেই নাগিনাই এখন বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন!
কারণ তিনি বাঁচতে চান নিজের শর্তে। শারীরিক পরিবর্তন কাটিয়ে। সমাজের চোখ রাঙানিকে উড়িয়ে।
২০১১ সালে খালিদের সঙ্গে বিয়ে হয় নাগিনা আক্রমের। খালিদ স্পেনে কাজ করেন। দু’বছর ধরে বেশ সুখী দম্পতি ছিলেন তাঁরা। ছ’মাস ছাড়া ছাড়া পাকিস্তানে স্ত্রীর কাছে আসতেন খালিদ। কিন্তু এত দিনেও কোনও সন্তান না হওয়ায় স্বামীর পরামর্শে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান নাগিনা।
এর পরেই বদলে যায় নাগিনার জীবন। যেমন বদলে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিকের। তিনি পুরুষ, নারী না রূপান্তরকামী, জানতে একটার পর একটা শারীরিক পরীক্ষায় বসতে হয়েছে এই অ্যাথলিটকে।
শুক্রবার পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নাগিনার শরীরেও কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেন চিকিৎসক। তিনি করাচির আগা খান হাসপাতালে তাঁকে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করাতে বলেন। জানা যায়, নাগিনার লিঙ্গ পরিবর্তন হয়ে তিনি পুরুষ হয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত অস্ত্রোপচার করা দরকার। এর পরেই একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়ে নারী থেকে পুরুষ হয়ে যান তিনি। হয়ে যান নাগিনা থেকে উসমান।
ফলে টালমাটাল হয়ে যায় তাঁর দাম্পত্য জীবনও। এই গোটা প্রক্রিয়াটির সময় খালিদ ছিলেন স্পেনে। ‘স্ত্রী’-কে তাঁর কাছে নিয়ে আসার তোড়জোড়ও শুরু করেন। সংবাদমাধ্যমকে উসমান জানিয়েছেন, কিন্তু যে মুহূর্তে তিনি খালিদকে তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা জানান, তখন থেকে আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ‘স্বামী’। ফিরিয়ে দিয়েছেন সমস্ত পণও। কিন্তু তা বলে ভেঙে পড়েননি নাগিনা ওরফে উসমান। ঠিক করেন, তিনি বাঁচবেন নিজের মতো। তারই অঙ্গ হিসেবে ফের বিয়ের জন্য মেয়েও খুঁজতে শুরু করেছেন তিনি। উসমান বলেন, “প্রথম প্রথম লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা জানাতে লজ্জা পেতাম। কিন্তু বেশ ক’মাস ধরে দাড়ি কামাচ্ছি, যাতে আমাকে ছেলেদের মতো দেখতে লাগে।” তাঁকে উসমান আক্রম নামে নতুন পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছে।
উসমানের মতো নিজের শর্তে বাঁচতেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষও। তাঁর দুনিয়াদারির ধরন ঝড় তুলেছিল বিতর্কের। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘চিত্রাঙ্গদা’-তেই তো রুদ্র চট্টোপাধ্যায় পুরুষ থেকে মেয়ে হতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসেন।
পর্দার রুদ্র পিছিয়ে আসলেও ওয়াঘার ওপারে নাগিনা পিছিয়ে আসেননি। সাহসের সঙ্গে নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেছেন পাকিস্তানের বাসিন্দা। |