শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গেল। বুধবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১৩২জন। তার মধ্যে শিলিগুড়ি পুর এলাকা এবং মহকুমার অন্যান্য এলাকা মিলিয়ে ১১২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে তারা জানিয়েছেন। তা ছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের অধীনে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া যে সমস্ত জায়গা রয়েছে সেখানেও অন্তত ২০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রয়েছেন। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলায় স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরাও চিন্তিত।
দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “ডেঙ্গি রোধে ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার লার্ভা মারতে তেল স্প্রে করা শুরু হয়েছে। পুরসভার মাধ্যমে ওই কাজ করা হচ্ছে। ভানুনগর, চম্পাসারি এলাকায় ও দিন স্বাস্থ্য শিবির করা হয়। যে সমস্ত এলাকা থেকে নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর মিলছে সে সব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এ দিন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা দলের অন্যতম নেতা মুকুল রায়কে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেখানে তাঁরা ডেঙ্গি রোগীদের জন্য করা বিশেষ ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে নতুন কয়েকজন রোগী এ দিন হাসপাতালে এসেছেন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি খোঁজ নেন শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। |
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রই জানিয়েছে, শিলিগুড়ি পুর এলাকাতেই ৯৭ জন রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবানু রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত ওয়ার্ডে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ৬৩ জন। যার মধ্যে ৪২, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে। যেখানে প্রকাশনগর, লিম্বু বস্তি ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭ জন এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। ১ জন করে ডেঙ্গি রোগী মিলেছে ৩১, ৩৬, ৪০ এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে। পুর এলাকার বাইরে শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া, ফাঁসিদেওয়া, গরুবাথানের মতো এলাকায় ১৫ জন ডেঙ্গি রোগী রয়েছেন। তার মধ্যে গরুবাথানে ২ জন এবং ফাঁসিদেওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ জন। বাকিরা অধিকাংশই মাটিগাড়া এলাকার।
শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ডেমডেমা বস্তি ডেঙ্গি মাত্মক আকার নিলেও এখন তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছে। তবে ওই এলাকায় এখনও ১৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রয়েছেন। ফুলবাড়ি বাজারে ১ জন ডেঙ্গি রোগী রয়েছেন। আশিঘর, জলেশ্বরী এলাকাতেও প্রচুর রোগী জ্বরে আক্রান্ত। তাদের অনেকই ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে সন্দেহ বাসিন্দাদের। শিলিগুড়ি এবং আশেপাশে সন্দেহভাজন রোগীর সংখ্যা কয়েকশো বলে পুর কর্তৃপক্ষের অনুমান।
পুরসভার সংযোজিত এলাকাগুলিতে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অস্থায়ী শিবির করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে সংগ্রহ করা রক্তের নমুনা সেখানেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এনএস-১ পরীক্ষায় রোগের জীবানু মিললে নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে নির্ধারিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় বাসিন্দারা সচেতন না হওয়ায় ডেঙ্গি মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। ওয়ার্ডে পুরসভার সে দল কাজ করছে তাদের সঠিক ভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে কাজ করতে বলা হচ্ছে।
|