জ্বর এবং পেটে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আরও এক কিশোরীর মৃত্যু হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রেখা কুমারী সহানি (১৮) নামে ওই কিশোরীর ডেঙ্গিতেই মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে ৪৩ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে জ্বরে আক্রান্ত বহু মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা হয় সোমবার। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবানু পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের রশ্মি মাঝি নামে এক কিশোরী দিন কয়েক আগেই ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৯৭। স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, আরও বেশি মানুষ ডেঙ্গিতে ভুগছেন।
সোমবার ভোরে রেখার বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পরে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে জ্বরে আক্রান্ত প্রচুর রোগী রয়েছে দেখে তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। গৌতমবাবু বলেন, “ওই কিশোরীর মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। এলাকায় প্রচুর বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত।” |
রুদ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ওই কিশোরীর অবশ্য ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়নি। তবে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। লিম্বু বস্তিতে শিবির করে ওই এলাকার জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, “এই পরিস্থিতিতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা স্বাস্থ্য দফতর নিচ্ছে।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য এ দিন অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু শিলিগুড়ির পরিস্থিতি নিয়ে তিনি এখনও পর্যন্ত একটাও কথা বলেননি। মন্ত্রী, মেয়র, বিধায়কেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে কেবল বৈঠকই করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে রক্তের বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা প্রয়োজন।”
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। পুরসভার যে সব ওয়ার্ড থেকে বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সে সব এলাকায় শিবির করে রক্ত পরীক্ষা করছে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ বৈঠক ডেকেছেন।
মালবাজার মহকুমায়ও কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালবাজারের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার রক্তে ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে। এ দিন তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গত সপ্তাহে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক কিশোর রক্তেও ডেঙ্গির জীবানু মেলে। মেটেলি ব্লকের চালসাতেও এক ব্যক্তির রক্তে ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতর ওই সমস্ত এলাকা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমেছে।
|
ডেঙ্গি প্রতিরোধে নানা পরামর্শ দিয়েছেন
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী।
|
ডেঙ্গি উপসর্গ |
• জ্বর, মাথাব্যথা
• গা, হাত, পা ব্যাথা, বমি পাওয়া।
• চামড়ায় লাল ছোপ ছোপ দাগ।
• বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ।
• প্রস্রাব, মলের সঙ্গেও রক্ত পড়ে। |
কী করবেন |
• ঘরে, আশেপাশে জল যাতে না জমে নজর রাখুন।
• চার পাশ পরিষ্কার রাখুন।
• অবশ্যই মশারি টাঙাবেন।
• মশা তাড়াতে ধূপ,অন্য কোনও ব্যবস্থা করবেন।
• পোশাক পড়ুন যাতে উন্মুক্ত অংশ বেশি না থাকে।
• রোগের উপসর্গগুলি কী সে ব্যাপারে সচেতন হন।
• জ্বর হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করান।
• সিভিয়ার ডেঙ্গি হলে হাসপাতালে ভর্তি করুন।
• ঘন ঘন জল খান। |
কী করবেন না |
• জ্বর হলে অবহেলা করবেন না।
• প্যরাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ খাবেন না।
• বেশিক্ষণ জল না খেয়ে থাকবেন না।
• অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
• ডেঙ্গি হলে স্বাস্থ্য দফতরে জানাতে ভুলবেন না। |
জেনে রাখুন
• ডেঙ্গি রোগের বাহক ইডিস ইজিপ্টি মশা। সূর্যোদয়
থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ধরনের মশা কামড়ায়।
• পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। মশার শরীরে ডেঙ্গির
জীবাণু আমৃত্যু থাকে। ওই মশা ডিম পাড়লে তার
• মাধ্যমে নতুন জন্মানো মশাতেও ডেঙ্গির জীবাণু
সংক্রমণ হয়। সেই মশা কামড়ালে রোগ ছড়ায়। |
|