এসএসকেএম
ঠিক সময়ে পেসমেকার নিশ্চিত করতে সমীক্ষা
রকারি হাসপাতালে পেসমেকার বসানোর ব্যবস্থা রয়েছে। দুঃস্থদের নিখরচায় পেসমেকার দেওয়াও হচ্ছে। তবু এ রাজ্যে ঠিক সময়ে পেসমেকার বসাতে না পেরে মারা যাচ্ছেন বহু রোগী। এরই কারণ খুঁজতে রাজ্যের দু’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখলেন আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়ো-মেডিক্যাল ইনোভেশন’ বিভাগের প্রতিনিধিরা। এসএসকেএম এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, এই দুই হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগী— উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইন’ বিভাগটি গোটা বিশ্বেই তাদের গবেষণার জন্য বিশেষ ভাবে স্বীকৃত। বিশেষত, বিভিন্ন স্বাস্থ্য-প্রযুক্তির খরচ কমিয়ে কী ভাবে সেগুলিকে সকলের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালাচ্ছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটিও তাদের গবেষণাকে স্বীকৃতি দেয়। বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ ও চাহিদা অনুযায়ী কী ভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয় নিয়েও কাজ চালাচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হেল্থ কেয়ার টেকনোলজি ইনোভেশন ফর গ্লোবাল হেল্থ নিড’ বিভাগটি। ওই বিভাগের প্রকল্প-অধিকর্তা সৌম্যদীপ্ত আচার্য কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই এর আগে এ রাজ্যে মা-শিশুর স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে গবেষণামূলক কাজ করেছে ওই সংস্থা। দ্বিতীয় ধাপে ওই প্রতিষ্ঠান বেছেছে হৃদ্রোগ চিকিৎসাকে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের মতে, কোন সময়ে পেসমেকার প্রয়োজন, সে বিষয়ে চিকিৎসক মহলে আর একটু সচেতনতা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটিয়ে পেসমেকারের দাম কী ভাবে কমিয়ে আনা যেতে পারে, তা নিয়েও এ রাজ্যের চিকিৎসক-গবেষকদের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “পেসমেকারের দাম কমানো এবং চিকিৎসকদের সচেতনতা বাড়ানো এই দু’টিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা ওঁদের পরামর্শকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি। গবেষণার আদানপ্রদানও যথেষ্ট কাজে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।”
সৌম্যদীপ্তবাবু বলেন, “সরকারি হাসপাতালে গরিব রোগীরা নিখরচায় পেসমেকার পান। কিন্তু তার জন্য তো ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় তাঁদের পৌঁছতে হবে। এমন অনেক রোগীর সন্ধান আমরা পেয়েছি, যাঁদের টাকার অভাব নেই। তাঁরা তিন-চার বছর ধরে নানা জায়গায় ঘুরেছেন। রোগটা ধরা পড়েনি।” শুধু গ্রাম নয়, শহরেও এমন আকছার ঘটছে বলে তিনি জানান।
সৌম্যদীপ্তবাবু বলেন, “কেউ হয়তো আচমকা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই জ্ঞান ফিরে এল। কিন্তু কেন হল ওরকম? অনেক সময়েই রোগীরা তো বটেই, এমনকী চিকিৎসকরাও ভেবে নেন এর সঙ্গে স্নায়ুর কোনও সমস্যা রয়েছে। অনেকে ভাবেন, এটা মৃগী রোগ। ফলে চিকিৎসার অভিমুখ সে দিকে ঘুরে যায়। এমআরআই, সিটি স্ক্যান করিয়ে বিস্তর টাকা খরচ হয়, কিন্তু আসল রোগটা ধরা পড়ে না।”
কেন বসাতে হয় পেসমেকার? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, হার্ট রেট ৪০-এর কম হলে অনেকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। তাকে বলে ‘কমপ্লিট হার্ট ব্লক’। তাতে রোগীর অজ্ঞান হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। বারংবার অজ্ঞান হয়ে গেলে পেসমেকার বসানো ছাড়া গতি নেই। বারবার অজ্ঞান হলে মস্তিষ্কের ক্ষতিও বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে পরে পেসমেকার বসিয়ে ফল হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট ব্লক ব্যাপারটা অনেকটা লুকোচুরির মতো। ৩০ সেকেন্ড বা বড়জোর ১ মিনিটের জন্য হয়, তার পরে আবার সব ঠিক। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেই অনেকটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের হৃদ্রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলেন, “হার্ট রেট স্বাভাবিক হওয়ার পরে সমস্যাটা বহু ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না। তার জন্য প্রয়োজন বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্রয়োজন কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ। অনেক সময়ে নিউরোলজিস্টের কাছে গেলে তাঁরা এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করাতে বলেন। কিন্তু তাতে তো কিছু ধরা পড়ে না।” একই কথা বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরাও। এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বললেন, “আমরা এ ধরনের সমীক্ষাকে খুবই গুরুত্ব দিই। এর ফলে যদি পেসমেকারের দাম কিছুটা কমে, তা হলে রোগীরাও উপকৃত হবেন।”
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের কয়েক জন হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরও পরামর্শ নেন। তাঁদেরই এক জন শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হৃদ্স্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার সমস্যাটা যেহেতু তাৎক্ষণিক, সেই কারণে রোগীরাও বহু ক্ষেত্রে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে চান না। তা ছাড়া, ইসিজি, হল্টার ইত্যাদি পরীক্ষায় অনেক সময়ে সমস্যা ধরা পড়ে না, প্রয়োজন পড়ে আরও সূক্ষ্ম পরীক্ষার। সেই খরচটা অনেকে জোগাড় করতে পারেন না। তাই পেসমেকারের দাম কমার সঙ্গে ওই সব পরীক্ষার খরচ কমাও জরুরি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.