ভোটার কার্ড নেই। আর সে জন্যই খোলা যাচ্ছে না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ফলে চেকের মাধ্যমে জননী সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা পেতে হয়রান হতে হচ্ছে ক্যানিং মহকুমার সদ্যপ্রসূতিদের।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিপিএল তালিকাভুক্ত সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া যে কোনও বয়সের মহিলা জননী সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা পাওয়ার যোগ্য। সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব হলে তাঁর প্রতিটি প্রসবে ১০০০ টাকা ও বাড়িতে সন্তান জন্মালে ৫০০ টাকা করে পাওয়ার কথা। পুরনো নিয়মে অবশ্য মায়ের বয়স আঠারো বছরের বেশি হওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। টাকা দেওয়া হত নগদে। তবে দু’টি সন্তান জন্মানো পর্যন্তই এই টাকা পাওয়ার কথা ছিল মায়েদের। এখন অবশ্য সেই নিয়ম উঠে গিয়েছে। বিপিএল তালিকাভুক্ত যে কোনও বয়সী মায়েরই প্রতিটি প্রসবে এই টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই টাকা সরকার চেকের মাধ্যমে দেবে। তার জন্য দরকার হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়েই নিয়মের গেরোয় আটকে পড়ছেন এই গরিব মায়েরা।
ক্যানিং মহকুমা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রের খবর, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই মহিলাদের সচিত্র পরিচয়পত্র বা ভোটার কার্ড নেই। যে মেয়েরা ১৮ বছর বয়সের আগেই মা হয়ে যাচ্ছেন, ভোটার কার্ড না থাকায় তাঁদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করা যাচ্ছে না। ফলে টাকা পেতে হয়রান হচ্ছেন। ক্যানিং মহকুমার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানান, অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য রেশন কার্ড ও ভোটার কার্ড প্রয়োজন। অথচ দেখা যাচ্ছে, ভোটার কার্ড নেই অধিকাংশ মেয়েরই। আবার ভোটার কার্ড থাকলেও হয়তো অন্য প্রয়োজনীয় কাগজ নেই। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের টাকা পেতে অসুবিধা হওয়ায় প্রায়ই প্রসূতি ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল, গোসাবা ও বাসন্তীর ব্লক স্বাস্থকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলির কর্তৃপক্ষের প্রায়ই গোলমাল বাধছে। ঘুটিয়ারিশরিফের দক্ষিণ বাঁশড়া গ্রামের মামণি বিবি, ক্যানিংয়ের ঘোষপাড়ার সৈয়দ সাকিনা হাসান, কুমারসা পাড়ার মর্জিনা গায়েনদের ক্ষোভ, “জননী সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা পেতে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছিল। নানা অজুহাতে অ্যাকাউন্ট না খুলে ফিরিয়ে দিচ্ছিল ব্যাঙ্কের লোকজন।” তবে পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনরা সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মলয়কান্তি দাসও বলেন, “গরিব মায়েরা যাতে ঠিক মতো টাকা পান, সেই চেষ্টা করছি।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে ক্যানিংয়ের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “আমরা ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে অন্তঃসত্ত্বাদের ‘অ্যান্টি নেটাল কার্ড’ দিয়ে পাঠাচ্ছি যাতে ব্যাঙ্ক ওই কার্ডের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে পারে।” মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “বিভিন্ন ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।” সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুপ্রিয় তরফদার বলেন, “প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে মায়েদের যে ‘অ্যান্টি নেটাল কার্ড’ দেওয়া হচ্ছে, তার ভিত্তিতেই অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করা হয়েছে।”
|