ডেঙ্গি না ছড়ালেও সতর্ক থাকতে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
ত বারের তুলনায় এ বছর এখনও শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ কম হলেও এখনই আশ্বস্ত হওয়ার কারণ দেখছেন না পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, গত দু’মাসে টানা বৃষ্টিতে জল কোথাওই দাঁড়ায়নি। টানা বৃষ্টি না হলে কোথাও জল জমে থাকলেই বংশবিস্তার করতে পারবে ডেঙ্গির মশা। সে কারণেই আশ্বস্ত না হয়ে বরং সতর্ক হওয়ার নিদান দিচ্ছেন তাঁরা।
গত বছর কলকাতায় ডেঙ্গি সংক্রমণ চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছিল অগস্ট-সেপ্টেম্বরে। অক্টোবর থেকে কমে আসে দু’টি রোগেরই সংক্রমণ। এ বার অগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ অনেক কম। পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন মুখোপাধ্যায় জানান, গত বছর জানুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত ১১০০ মানুষ ডেঙ্গিতে (এলাইজা পরীক্ষায়) আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বার তা নেমে এসেছে ৪৫-এ। ম্যালেরিয়ার রোগীর সংখ্যাও শতাংশের হিসেবে কমেছে।
পুরসভার দাবি, ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবিস্তার কমাতে পেরেই এ বার ওই রোগ মোকাবিলায় অনেকটা সাফল্য মিলেছে। জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের অতিরিক্ত অধিকর্তা প্রবীর সেনও একমত। ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া দমনে পুরসভা কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা দেখতেই বুধবার শহরের একাধিক কেন্দ্র ঘুরে দেখেন তিনি। তাঁর কথায়, “ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া থেকে উদ্ধার পেতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করে ফেলা জরুরি।”
তবে পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা জানান, গত বছর জুনের শেষ সপ্তাহের পরে দক্ষিণবঙ্গে তেমন বৃষ্টি হয়নি। ফলে জুনে যা বৃষ্টি হয়েছে, সেই জল জমে থেকেছে। জুন-জুলাই মাসেই তাই শহর জুড়ে তৈরি হয়েছিল মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তবে এ বছর বর্ষায় পরিস্থিতি ভিন্ন। জুন থেকেই ক্রমাগত বৃষ্টি হচ্ছে। জুলাই ও অগস্টে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। তাই জল কোথাও ধরা থাকেনি। ফলে ডেঙ্গিবাহক এডিস কিংবা ম্যালেরিয়াবাহক অ্যানোফিলিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারেনি। বেশ ক’দিন টানা বৃষ্টি না হলে পরিষ্কার জল যখন বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকবে, তখনই নজরদারি বাড়াতে হবে বলে জানান পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা। আগামী একটা মাস সেই হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ১৩ জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমেছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, গত বছর যে সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছিল, এ বার জানুয়ারি থেকে সে সব এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রজনন ক্ষেত্র কমানোর (সোর্স রিডাকশন) কাজ করছেন। মানুষকে সচেতন করতে শহরে চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে ৬০০-র বেশি সভা করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পাড়ায় পাড়ায় মশার লার্ভা মারার রাসায়নিক তেল ছড়ানো হচ্ছে। কোথাও জল জমেছে কি না দেখতে সর্বত্রই ঘুরছে র্যাপিড অ্যাকশন টিম। অতীনবাবুর কথায়, “জল জমতে না দেওয়া নিয়ে পুরসভারও আইন রয়েছে। তবে আগে জমা জলে মশার লার্ভা জন্মাতে না দেওয়ার দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে।”
অতীনবাবু বলেন, “গত বছরের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন অন্তর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে বৈঠক করেছেন। পুর-প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়েছেন। এতে কাজের গতি অনেক বেড়েছে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলরেরা ওই কাজে সহায়তা করায় সাফল্য এসেছে।”
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রক্ত পরীক্ষার জন্য শহরে পাঁচটি আধুনিক পরীক্ষা-কেন্দ্র আছে। এলাইজা পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য ওই সব কেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। অতীনবাবু জানান, শীঘ্রই পুর-কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করাতে আসা রোগী ঘরে বসেই রিপোর্ট জানতে পারবেন। পরীক্ষার সময়ে সংশ্লিষ্ট রোগী বা তাঁর আত্মীয়ের মোবাইল নম্বর রেকর্ড করা হবে। পরে সেই রিপোর্ট মোবাইলে মেসেজ করে পাঠানো হবে। তবে রিপোর্টের কাগজ চাইলে অবশ্য পুরসভার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে আসতে হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.