অরবিস-এর সেই বিমান।
বারো বছরের এক কিশোর। এক বিকেলে শহরতলির মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে ক্রিকেট খেলছিল। আচমকা ডান চোখে বলটা লাগল সজোরে। সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার নেমে এল সেই চোখে।
পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানালেন, চোটের জেরে এক ধরনের ছানি পড়েছে কিশোরের চোখে। অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু সে কাজে ঝুঁকি রয়েছে। সামান্য এ দিক-ও দিক হলেই একেবারে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। গরিব বাবা-মা আতান্তরে পড়লেন ছেলেকে নিয়ে। শুধু ওই কিশোরই নয়, এই রকম ভুক্তভোগীর তালিকাটা দীর্ঘ। কখনও চোটের কারণে, কখনও অন্য কারণে। আর তাদের চোখে সেই ঝুঁকির অস্ত্রোপচার করতেই বিদেশ থেকে উড়ে আসছেন চিকিৎসক-দল। |
১৯৮২ সালে নিউ ইয়র্কে তৈরি হওয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অরবিস-এর নিজস্ব বিমান রয়েছে। সেই বিমানের ভিতরে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার-সহ যাবতীয় সরঞ্জাম। ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় নামছে সেই বিমান। ৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩৫টি অস্ত্রোপচার হবে তার মধ্যে। সবই ঝুঁকিবহুল। সল্টলেকের সুশ্রুত আই ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া সব চেয়ে বড় সরকারি
চক্ষু হাসপাতাল রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজি (আরআইও)-র সঙ্গে যৌথ ভাবে এই কাজে নেমেছে অরবিস।
বিমানের ভিতরে অস্ত্রোপচার দেখার জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে চক্ষু-চিকিৎসকেরা এসে জড়ো হচ্ছেন কলকাতায়। অপারেশন চলাকালীন তার ছবি সরাসরি সম্প্রচার হবে সুশ্রুত এবং আরআইও-তে। সেখানে বসে তা দেখবেন অন্য চিকিৎসকেরা। ভারতে অরবিসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ঋষিরাজ বরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য আসছেন ২২ জন চিকিৎসক। হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ের দু’তিন জন ছাড়া সবাই বিদেশি। তাঁরা যে যার মতো বিভিন্ন দেশের হাসপাতালে কর্মরত। কিন্তু তার মধ্যে থেকেও সময় বার করে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ডাকে তাঁরা আসবেন এবং কাজ করবেন বিনা দক্ষিণায়। দু’সপ্তাহ পরে আবার অন্য চিকিৎসকের দল এসে যোগ দেবে। সারা বছর ধরে এ ভাবেই চলবে কাজ।
ঋষিরাজের কথায়, “এখন ডিসি-১০ বিমানটি রয়েছে পানামা দ্বীপে। বিমানের ভিতরে চলছে অস্ত্রোপচার। যাঁরা করছেন, তাঁরা অবশ্য কলকাতায় আসবেন না। যাঁরা কলকাতায় আসবেন, তাঁরা যে যার নিজের মতো আসছেন।” জানা গিয়েছে, পানামা থেকে বিমানটি নিয়ে পাইলট যাবেন দক্ষিণ আমেরিকার ইন্ডিয়ানাতে। সেখানে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। তার পরে আসবে কলকাতায়। কলকাতায় যাঁরা থাকবেন তাঁদের এক দল এখানে অস্ত্রোপচার শেষ করে যাবেন গুয়াহাটি, অন্য দল হলদিয়ায়। ওই দু’টি শহরে চক্ষু-শিবির শেষ করে তাঁরা ফিরে যাবেন নিজেদের দেশে।
সুশ্রুতের চিকিৎসক অনুরাধা চন্দ্র জানিয়েছেন, কলকাতায় যত দিন ওই চিকিৎসকেরা থাকবেন, তখন সুশ্রুত এবং আরআইও-তেও অস্ত্রোপচার হবে। তাতেও হাজির থাকবেন বিদেশি চিকিৎসকেরা। রেটিনা, কর্নিয়া, ছানি, গ্লকোমা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন সেই দলে। অনুরাধাদেবী বলেন, “ঝুঁকির অস্ত্রোপচার আমরাও করতে পারি। কিন্তু অরবিস এলে অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও হবে। অনেক চিকিৎসকই মুখিয়ে থাকেন এই ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য।” জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ, ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গা ছাড়াও নেপাল থেকেও চিকিৎসকেরা আসছেন প্রশিক্ষণ নিতে।
ইতিমধ্যে ৯০টি দেশে বিমানের ভিতরে ও বাইরে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লক্ষ মানুষের অস্ত্রোপচার করেছেন অরবিস-এর সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা। এ বার নিয়ে চতুর্থ বার কলকাতার মাটি ছুঁতে চলেছে অরবিসের বিমান। শেষ বার এসেছিল ২০০৫ সালে। |