জল মিলছে ‘ভেন্ডিং’ মেশিনে!
যখন তখন হাতের মুঠোয় মনপসন্দ জিনিস পেতে ‘ভেন্ডিং’ মেশিনের জুড়ি মেলা ভার। সাধারণের অতিপরিচিত এটিএম মেশিনের মতোই দেখতে এই মেশিনগুলি আকছার দেখা যায় বড় বড় শহরের ঝাঁ চকচকে শপিং মলে। নির্দিষ্ট জায়গায় টোকেন ঢোকালেই বেরিয়ে আসে চা-কফির কাপ, ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাস, দুধের প্যাকেট, চকোলেট, চিপস, সিগারেটের প্যাকেট আরও কত কী!
এ হেন ‘ভেন্ডিং’ মেশিন মারফতই এ বার পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা চালু করে রীতিমতো নজির গড়ে ফেলল বেঙ্গালুরুর প্রত্যন্ত এলাকা কনকাপুরা। কংগ্রেসের সাংসদ ডি কে সুরেশ ও তাঁর ভাই তথা বিধায়ক ডি কে শিবকুমারের উদ্যোগে কনকাপুরায় বসানো হয়েছে ৩৩টি ‘ওয়াটার এটিএম’। এক টাকার বিনিময়ে মিলছে ১০ লিটার পানীয় জল। এলাকায় জলবাহিত রোগের প্রকোপ ঠেকাতেই এমন অভিনব উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসনের। পানীয় জল পেতে স্থানীয়দের আর দাঁড়াতে হচ্ছে না লম্বা লাইনে। শ’য়ে শ’য়ে টাকা ব্যয় করে কিনতেও হচ্ছে না ‘মিনারেল ওয়াটার’-এর বোতল। “ওয়াটার এটিএম-এর জল সুস্বাদু। খরচাও কম। পাঁচ জনের পরিবার আমাদের। রান্না, খাওয়া মিলিয়ে সারা দিনে ২০ লিটার জলেই হেসে খেলে চলে যায়।” বললেন স্থানীয় দিনমজুর জেআম্মা।
কী ভাবে কাজ করে এই ওয়াটার এটিএম? মেশিনটির সামনেই কয়েন ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। সেখানে এক টাকার কয়েন ফেললেই মিলছে ১০ লিটার জল নেওয়ার ছাড়পত্র। মেশিনের সামনেই লম্বা পাইপ। তা দিয়েই আসছে বিশুদ্ধ পানীয় জল। গভীর নলকূপের জলই ফিলটারের মাধ্যমে পরিশোধন করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সাধারণের কাছে। |
এত দিন এলাকার নলকূপগুলির জলই খেতেন কনকাপুরার বাসিন্দারা। কষাটে, দূষিত পানীয় জল নিয়ে তাঁদের বহু দিনের ক্ষোভও ছিল। এর মধ্যে গত বছরের খরার প্রভাবে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ১৩০০ ফুট নেমে যায়। তাই পানীয় জলের সমস্যার সমাধানই ছিল কংগ্রেস প্রার্থী ডি কে সুরেশের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ভোটে জেতার পর তিনি মোটেই ভোলেননি সাধারণের কথা, জানালেন সুরেশ। ওয়াটার এটিএম মেশিনগুলি বসানোর কাজ শেষ হয়নি এখনও। এক একটি মেশিনের দাম প্রায় ১২-১৩ লক্ষ টাকা। প্রশাসন সময় নিচ্ছে ঠিকই, তবে আট মাসের মধ্যে কনকাপুরায় মোট ১০০টি এটিএম বসিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।
শিবকুমারের বক্তব্য, যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, প্রভাবশালী নেতারা পরিশুদ্ধ জল খেতে পারেন তা হলে দরিদ্র মানুষেরা নয় কেন। ওয়াটার এটিএম গড়ে তোলার প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। এই মুহূর্তে রোজ প্রায় চার হাজার লিটার জল বিক্রি করছে ওয়াটার এটিএম। প্রশাসনের লক্ষ্য ১০ হাজার লিটারে পৌঁছনো। প্রশাসন এখন ভর্তুকি দিয়েই জল সরবরাহ করে চলেছে। এটিএম-এর জল আরও বেশি বিক্রি হলে ভর্তুকি ছাড়িয়ে লাভের মুখও দেখা যাবে বলে আশা শিবকুমারের।
দেশ জুড়ে দূষিত জলের প্রভাবে যখন থাবা বসাচ্ছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, আন্ত্রিক, টাইফয়েডের মতো রোগ, তখন প্রত্যন্ত কনকাপুরার মানুষেরা কিন্তু অনেকটাই নিশ্চিন্ত। |