পাশেই জাতীয় সড়ক
রুগণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেলে না পরিষেবা
ক দিকে খড়্গপুর। অন্য দিকে বেলদা। গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। প্রায়ই ওই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। চিকিৎসার জন্য জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত নারায়ণগড়ের মকরামপুর উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে হয় জখমদের।
কিন্তু, দুর্ঘটনাগ্রস্তদের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো সেখানে কোথায়? ডাক্তার আছেন মাত্র ২ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ৩ জন। বছর তিনেক আগে সেটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মর্যাদা পেয়েছে। চালু হয়েছে ১০টি শয্যা। কিন্তু, বাকি যা ছিল, তাই রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাম্বুল্যান্স নেই। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের স্থানান্তর করতে গেলে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে হয়। প্রায় সময় ফোন করতে হয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তবেই মেলে অ্যাম্বুল্যান্স। আছে অন্য সমস্যাও। যেমন, শয্যা চালু হলেও খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় রোগীদের নিজেদেরই। তা ছাড়াও বেশ কিছু ঘর সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। সামান্য বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে আবার সীমানা প্রাচীরও না থাকায় চুরির ঘটনাও ঘটে। এমনই হাল নারায়ণগড়ের মকরামপুর উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। অবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ রোগীরা, হতাশ স্থানীয় মানুষও।
নারায়ণগড় মকরামপুর উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
কেন এমন হাল? জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলছেন, “পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপও করা হচ্ছে।” তিনি মানছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশ দিয়ে জাতীয় সড়ক যাওয়ায় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গুরুত্ব অন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের থেকে একটু আলাদা।
প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগড়। ওই এলাকার মকরামপুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ জুলাই। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ননীগোপাল ভট্টাচার্য। পরে এটি উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত হয়। তৈরি হয় নতুন ভবন। নতুন ভবনে চালু হয় ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা। তিন বছর আগে, ২০১০ সালের ২৪ ডিসেম্বর নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সময় তিনি আশ্বাস দেন, এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স থাকবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও পরিকাঠামো আগামী দিনে বাড়বে। কিন্তু, কোথায় কী! তা ছাড়া ইনভাটার থাকলেও নেই জেনারেটর। ফলে, লোডশেডিং হলেই সমস্যা। বাচ্চাদের ওয়ার্মার চালু রাখা যায় না। ওই কেন্দ্রের এক কর্মীর কথায়, “আমাদের যে কী সমস্যার মধ্যে থেকে কাজ করতে হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। একজন ছুটি নিলেই সমস্যা। সামনে জাতীয় সড়ক থাকায় রোজ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতীয় সড়কের পাশে এমন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর আছে ১২ কিলোমিটার দূরে বাখরাবাদে। ওখানে দুর্ঘটনা ঘটলেও জখমদের এখানে আনা হয়। তার উপর প্রায় সময়ই জখমদের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকে।”
পড়ে রয়েছে যন্ত্রপাতি। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
সমস্যার কথা মানছেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার সৌম্যদীপ মহাপাত্র। তবে তাঁর মতে, “সবার আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে সীমানা প্রাচীর ও পুরনো ভবনের কিছু ঘর সংস্কার করা দরকার। সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” সীমানা প্রাচীর না-থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা বেদখল হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ইতিমধ্যে কয়েকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘর থেকে মেডিক্যাল অফিসারের আবাসন সর্বত্র হানা দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। চুরি গিয়েছে ২টি স্টেবিলাইজার, বিদ্যুৎ তারআরও কত কী।
রোগী ভর্তির ছবিটা ঠিক কেমন? স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১০টি শয্যার মধ্যে অর্ধেক পুরুষদের। জুলাই মাসে এখানে ৪৭ জন ভর্তি হন। অগস্ট মাসে ৪০ জন। জুলাই মাসে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা হয়েছে ১৪৫ জনের। অগস্ট মাসে ২৪২ জনের। অন্য দিকে, ২০১২ সালে ৫৯টি শিশুর জন্ম হয়েছিল। আর ২০১৩ সালের অগস্ট পর্যন্ত ৬৩টি শিশুর জন্ম হয়েছে। চলতি বছরে ছোটবড় মিলিয়ে অন্তত ২২০টি দুর্ঘটনায় জখমদের এখানে চিকিৎসা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, “সমস্যার কথা জানি। এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করা হয়। ১০টি শয্যাও চালু করা হয়। ২ জন ডাক্তারও রয়েছেন। তবে কর্মীর সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি।” এই আশ্বাসই ভরসা মকরামপুর উচ্চতর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.