দলের নির্দেশ মেনে চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলর পদ থেকে অবশেষে ইস্তফা দিলেন শিলিগুড়ি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নান্টু পাল। বুধবার বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ পুরসভায় গিয়ে পুর কমিশনারের কাছে ওই দুটি পদ থেকে ইস্তফার চিঠি দেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের তরফে মামলা করেছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তাতে হার চিশ্চিত জেনেই নান্টুবাবু ইস্তফা দিলেন বলে মেয়র দাবি করেছেন। এই ঘটনাকে নিজেদের নৈতিক জয় বলেও দাবি করেন তাঁরা। নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ডেপুটি মেয়র সবিতা অগ্রবাল সেই দায়িত্ব সামলাবেন।
নান্টুবাবু অবশ্য এ দিন পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার পর বলেন, “দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দলীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি বলার পর সম্মতি মিলেছে। সেই মতো পদত্যাগ করেছি। বর্তমান কংগ্রেস পুরবোর্ড উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছে না। বোর্ড মিটিংয়ে আসছেন না তাদের কাউন্সিলররা। শহরের এই পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেস পুরবোর্ড দায়ী।” মেয়রের প্রতিক্রিয়া, নান্টুবাবু এক সময় মার্কসের গুণগান করেছেন, পরে রাজীব গাঁধীর গুণ গান করেছেন। এখন অন্য কারও গুণ গান করছেন। পরে হয়ত আবার অন্য কোনও দলের গুণ গান করবেন। তাঁর অভিযোগ, “এই ধরনের মানুষের কোনও আদর্শ নেই। ‘সেখানে পাওয়া সেখানে ধাওয়া’ এটাই তাঁদের অভ্যাস। নান্টুবাবুর জন্য গোটা শহরের মানুষকে নাজেহাল হতে হল। মামলায় হার নিশ্চিত বুঝে এখন ইস্তফা দিয়েছেন। এটা অবশ্যই আমাদের নৈতিক জয়।” |
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য জানান, এটা তৃণমূল কংগ্রেসের নৈতিক পরাজয়। তিনি বলেন, “আমরা গোড়া থেকেই বলে এসেছি উনি কাউন্সিলর এবং চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে তৃণমূল করুন। ওই দাবিতে আমরা আন্দোলনও করছিলাম। তাই এদিনের ঘটনা আমাদের নৈতিক জয়।” পাশাপাশি অশোকবাবুর দাবি, পঞ্চায়েত স্তর থেকে যে সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূলে যাচ্ছেন তাঁরাও পদ ছেড়ে তৃণমূল করুন।
দলত্যাগ বিরোধী আইনে নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার তার শেষ দফার শুনানি রয়েছে। তার আগে নান্টুবাবুর পদত্যাগকে তাই তাঁর ‘শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পদ আকড়ে নান্টুবাবু বসে থাকার জন্য পুরবাসীকে অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়েছে।”
জটিলতার সূত্রপাত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে কংগ্রেস ছাড়ার কথা নান্টুবাবু জানানোর পর থেকেই। তাতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পুরবোর্ডের উভয় দলের মধ্যে তিক্ততা বাড়ে। বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা নান্টুবাবুর উপস্থিতিতে বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়া বন্ধ করলে উন্নয়ন কাজ ব্যহত হয়ে পড়ে। বামেরা অনাস্থা ডেকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরান নান্টুবাবুকে। ফের চেয়ারম্যান পদে তৃণমূল কাউন্সিলররা তাঁকে নির্বাচিত করলেও ওই সভায় কংগ্রেস এবং বাম কাউন্সিলররা ছিলেন না। কোরাম ছাড়া সভা অবৈধ বলে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল মেয়রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেন। মেয়রও তৃণমূলের মেয়র পারিষদদের সরিয়ে দেন। তৃণমূল কাউন্সিলররা সমর্থন না করলে বাজেট পাস নিয়ে বিতর্কের জেরে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে মামলার জেরে আদালতের নির্দেশ মেনে উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনেন জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার। তিনি নান্টুবাবুর কাউন্সিলর পদ খারিজ করেন। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হন নান্টুবাবু। পুর দফতরের এক সচিব ওই রায় আপাতত স্থগিত রাখেন। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত রাজ্যকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশ দেন। তার সময় সীমাও ১১ সেপ্টেম্বর শেষ হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরে তাঁর সঙ্গে শিলিগুড়িতে এসে দলের অন্যতম নেতা মুকুল রায় নান্টুবাবুকে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন।
পুর কর্তৃপক্ষ জানান, নতুন করে চেয়ারম্যান নিবার্চন হবেন। একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকায় তাতে অংশ নেবেন না বামেরা। চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেবে তৃণমূল। নির্বাচনে প্রার্থী দেবে কংগ্রেসও। নান্টুবাবু পদত্যাগ করায় পুরসভার অচলাবস্থা কাটবে বলে দাবি করেন গঙ্গোত্রী দেবী। কেন না নান্টুবাবু চেয়ারম্যান থাকায় বোর্ড মিটিংয়ে যাচ্ছিলেন না বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলররা। এ বার তাঁরা যাবেন। তৃণমূল কাউন্সিলরদের পক্ষে কৃষ্ণ পাল বলেন, “এই সংখ্যালঘু বোর্ড কী করে কাজ করবে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। অনৈতিক ভাবে চেয়ার আঁকড়ে যাঁরা বসে রয়েছেন শহরের মানুষের কাছে জবাবদিহি তাঁদেরই করতে হবে।” পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কয়েক মাস বোর্ড মিটিং না হওয়ায় শীঘ্রই তা ডাকা হবে।
|