দলের রং সরিয়ে রেখে বস্তিবাসীদের সংগঠনের ছাতার তলায় সব মানুষকে জড়ো হওয়ার আবেদন জানালেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ডাক দিলেন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে, অশান্তির বিরুদ্ধে বস্তিবাসীদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার। বিশেষত, বস্তি অঞ্চলের বাসিন্দা তৃণমূল সমর্থক তরুণদের মন পরিবর্তনের চেষ্টার কথা বলেছেন তিনি। লোকসভা ভোটের আগে শহুরে গরিবদের মন পেতেই বুদ্ধবাবুর এমন আহ্বান বলে বাম সূত্রের ব্যাখ্যা।
কিছু শহরে সিপিএম-প্রভাবিত যে বস্তি সংগঠন ছিল, তাকেই আরও প্রসারিত করে গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বস্তি উন্নয়ন সমিতি। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বুধবার সমিতির প্রথম সমাবেশেই বুদ্ধবাবু বলেছেন, “কোনও দল এর মধ্যে থাকবে না। এটা বস্তিবাসীদের সংগঠন। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে, মনুষ্যত্বের জন্য, বাঁচার জন্য বস্তিবাসীরা এই সংগঠনে জড়ো হোন।” তাঁর অভিযোগ, বস্তিতে বস্তিতে বিরিয়ানি-মদ-মাংস খাইয়ে, কখনও একটা-দু’টো বাইক দিয়ে অল্পবয়েসি ছেলেদের নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছে তৃণমূল। বুদ্ধবাবুর আবেদন, “তৃণমূলের ছেলেমেয়েদের বলুন, ও পথে গেলে বাঁচবে না!”
গরিবদের মন পেতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টাকে আমল দিচ্ছে না শাসক দল। মুকুল রায়ের কটাক্ষ, “বুদ্ধদেবের হাত ধরেই সিপিএম তলানিতে ঠেকেছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে সিপিএমকে অণুবীক্ষণে খুঁজতে হচ্ছে! লোকসভা ভোটের পরে তারা বিরল প্রজাতির প্রাণীতে পরিণত হবে!” |
ভঙ্গিমার হেরফের। বস্তিবাসীদের অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুধবার। ছবি: সুদীপ আচার্য। |
বস্তির বাসিন্দাদের দুর্দশাকে হাতিয়ার করে বুদ্ধবাবু রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানিয়েছেন এ দিন। তাঁর বক্তব্য, বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য খাস জমিতে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার পথে হেঁটেছিল বাম সরকার। খাস জমিতে ২০ বছর ধরে বসবাসকারীদের সেই জমি ১ টাকায় ৯৯ বছরের লিজ দেওয়ার জন্য আইন এসেছিল। কিন্তু এখন তা মানা হচ্ছে না। প্রোমোটার-রাজের কবলে পড়ে প্রথমে প্রলোভন এবং পরে ভেঙে দিয়ে বা আগুন লাগিয়ে বস্তি তুলে দেওয়া হচ্ছে। শাসক দল বস্তিবাসীদের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দিকে টানছে। প্রতি মাসে বস্তিতে কিছু না কিছু পুজোর হিড়িক পড়ছে। সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। তারা আগেও ছিল। বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, কিন্তু এখন তারা মাথায় চড়ে বসছে! প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এ ভাবে চলে? চিঠি পাই মারপিট, পুজো নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেও কিছু ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। যারা ভেসে যেতে চায় না, লোভে পা দেয়নি, বাবা-মায়ের সম্মান রাখতে চায়। তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” কর্মসংস্থানের সমস্যা দূর করতে বিরিয়ানি বিতরণ ছেড়ে কল-কারখানা তৈরিই একমাত্র পথ বলেও ফের সওয়াল করেছেন বুদ্ধবাবু।
সমাবেশে বক্তা ছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্যও। দাবিদাওয়া নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচী-সহ সংগঠনের প্রতিনিধিরা রাজভবনেও যান। বস্তি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক সুখরঞ্জন দে বলেন, “বস্তিতে আগুন দেওয়া হয়েছে মহেশতলায়, বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ হয়েছে চেতলায়। সব ঘটনায় শাসক দলের কেউ না কেউ যুক্ত! নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত বস্তিবাসীরা।”
|