নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিরোধী ভূমিকায় থেকে ঘর গোছাতে সমবায় থেকে বস্তি, সমাজের নানা ক্ষেত্রে সংগঠন বিস্তারে মন দিচ্ছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। সেই উদ্যোগেরই ফসল হিসাবে রবিবার আত্মপ্রকাশ ঘটল দুই নতুন সংগঠনের ‘পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও মঞ্চ’ এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি’। এর মধ্যে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বস্তি ফেডারেশন আগে সক্রিয় ছিল কলকাতা, আসানসোল বা শিলিগুড়ির মতো শহরে। এ বার রাজ্য স্তরে নতুন সংগঠন গড়ে তাদের এক ছাতার তলায় আনা হল। আর সমবায়ের সংগঠন আগাগোড়াই নতুন।
বস্তি সংগঠনের লক্ষ্য, শহুরে গরিব জনতার মন পাওয়া। সমবায় সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামের গরিব, কৃষিজীবি মানুষকে কাছে টানার পাশাপাশি শহরে সমবায়ের সঙ্গে জড়িত মানুষকেও একজোট করার চেষ্টা হচ্ছে। দুই সংগঠনই আপাতত জেলায় জেলায় শাখা গড়ে তুলবে বলে ঘোষণা করেছে। ঠিক যে ভাবে এখন কাজ করছে সিপিএমের নেতৃত্বে ‘আদিবাসী অধিকার মঞ্চ’। আগামী রবিবারই কলকাতায় আদিবাসী সমাবেশের ডাক দিয়েছে সিপিএম। বস্তি উন্নয়ন সমিতি কলকাতায় জমায়েত করবে ৩০ জানুয়ারি। তার পরে দাবি নিয়ে যাওয়া হবে রাজ্যপালের কাছে। আন্দোলনের পথে সমবায় মঞ্চও দ্বারস্থ হবে রাজভবনের। বামফ্রন্টের এক প্রবীণ নেতার কথায়, “যেখানে
যেখানে সংগঠন করা সম্ভব, বিরোধী আসনে থাকতে থাকতে সবক’টি সম্ভাবনাই হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখছে আলিমুদ্দিন!”
বেলেঘাটার সুকান্ত মঞ্চে বস্তি উন্নয়ন সমিতির প্রথম কনভেনশন থেকে এ দিন ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন হাসিম আব্দুল হালিম। কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য। গঠিত হয়েছে ৮৩ জনের রাজ্য কাউন্সিল, ৩৩ জনের কার্যসমিতি। তার মধ্যে ১৩ জন কর্মকর্তাও নির্বাচিত হয়েছেন। এত দিন পরে এ ভাবে রাজ্য জুড়ে বস্তি সংগঠন করতে হচ্ছে কেন?
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর ব্যাখ্যা, মাত্র আঠারো মাসেই নতুন রাজ্য সরকারের বস্তি উচ্ছেদের মানসিকতা স্পষ্ট। পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ হচ্ছে। সোজা পথে উচ্ছেদ করতে না-পারলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে! বিধানসভায় বিল পাশ করে উচ্ছেদের যাবতীয় ক্ষমতা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধেই আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন অশোকবাবুরা। কনভেনশনের উদ্বোধন করে চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার বলেছেন, শহরে জীবনযাত্রার মান নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টাকে রুখে দিতে হবে। নোনাডাঙার ঘটনা বা মহেশতলায় বস্তিতে আগুনের উল্লেখ করেছেন বক্তারা।
ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে সমবায় বাঁচাও মঞ্চের কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। বক্তা ছিলেন সিপিএমের আনিসুর রহমান, ফরওয়ার্ড ব্লকের বরুণ মুখোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের প্রবোধ পণ্ডা প্রমুখ। ছিলেন সিপিএমের মদন ঘোষ, অমিয় পাত্র, ফ ব-র হাফিজ আলম সৈরানিও। সমবায় ব্যক্তিত্ব অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আহ্বায়ক করে ৪৪ জনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। অরাজনৈতিক এই মঞ্চের এই অনুষ্ঠানে কংগ্রেস এবং এসইউসি-র তৃণমূল স্তরের কিছু প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন বলে ফ্রন্ট সূত্রের খবর। যে ভাবে রাজ্য সরকারের নীতির ফলে সমবায় ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে চলেছে, তার প্রতিবাদে রাজনৈতিক প্রস্তাবের পাশাপাশি সাংগঠনিক বিষয়েও একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে এ দিন। দলের তরফে বিষয়টির দায়িত্বপ্পাপ্ত, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয়বাবুর কথায়, “আইনি বা বেআইনি পথে সমবায়কে ধ্বংস করতে চাইছে রাজ্য সরকার। তার বিরুদ্ধে পথে নামার প্রয়াস শুরু হল।”
কলকাতায় এ দিনই রাজস্থান-বাংলা মৈত্রী পরিষদের উদ্যোগে এক নাগরিক সভায় বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হালিম, সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ নীলোৎপল বসুরা বলেছেন, খুচরো ব্যবসায় এফডিআই-প্রশ্নে ইউপিএ সরকার সংসদে জিতলেও জনতার দরবারে তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রসঙ্গত, এ বারের পলিটব্যুরো বৈঠকের পরে সিপিএম নেতৃত্ব জেলায় জেলায় নতুন প্রচারপুস্তিকা পাঠিয়ে বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে বামফ্রন্টের সই সংগ্রহে এফডিআইয়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, কলকাতায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আসন্ন বৈঠক ১৮-২০ জানুয়ারি থেকে এক দিন এগিয়ে ১৭-১৯ জানুয়ারি করা হয়েছে। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে ২০ জানুয়ারি সমাবেশের জন্যই
এই দিন পরিবর্তন বলে সিপিএম
সূত্রে খবর। |