ক্ষমতায় এসেই বাম আমলে সব পরিবহণ নিগমের হিসেবনিকেশ যাচাইয়ে ‘স্পেশ্যাল অডিট’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বাম জমানায় পরিবহণ দফতরে তছরুপের নানান অভিযোগের তদন্ত দিয়েই যাত্রা শুরু করছে দুর্নীতি দমন শাখা (এসিবি)। রাজ্য সরকার সপ্তাহখানেক আগেই থানার মর্যাদা দিয়েছে এসিবি-কে। তার পরে এটাই তাদের প্রথম মামলা। এবং সিবিআইয়ের ধাঁচেই দুর্নীতির নানা অভিযোগের তদন্ত করবে তারা।
মহাকরণ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে সিএসটিসি-র স্পেশ্যাল অডিট রিপোর্ট সরকারের হাতে পৌঁছেছে। ওই রিপোর্ট পাঠিয়ে দুর্নীতি দমন শাখাকে প্রাথমিক অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর। অনুসন্ধানের রিপোর্টের ভিত্তিতে কর্মিবর্গ দফতরের অনুমতি পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে সবিস্তার তদন্ত শুরু করতে পারবে এসিবি। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, “শুধু সিএসটিসি নয়, একে একে সব পরিবহণ নিগমেরই হিসেবনিকেশ নিয়ে অনুসন্ধানের ভার পাবে দুর্নীতি দমন শাখা। আবাসন, কৃষি-সহ বিভিন্ন দফতরে বাম আমলের দুর্নীতির অভিযোগও তদন্তের জন্য এ বার ওই শাখার কাছে যাবে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটির তদন্ত করছে সিআইডি।”
বাম আমলে পরিবহণ নিগমগুলিতে কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে বাস ও যন্ত্রপাতি কেনার নামে কয়েক কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ওই নয়ছয়ের জন্য কারা দায়ী, তা তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে দুর্নীতি দমন শাখাকে। ওই শাখার ডিআইজি কে জয়রামন বলেন, “পরিবহণ দফতরের আর্থিক তছরুপের তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আমরা সেই তদন্তই করছি।” এসিবি সূত্রের খবর, তার পুরোপুরি সরকারি এবং সরকারের অধীন বিভিন্ন সংস্থার দুর্নীতির তদন্ত করবে সিবিআইয়ের ধাঁচেই। পুরোদস্তুর কাজ শুরু করার আগে ওই শাখার অফিসারেরা সিবিআইয়ের এক প্রাক্তন আধিকারিকের কাছ থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। অভিযুক্তকে সরাসরি গ্রেফতার না-করে নোটিস পাঠিয়ে ডেকে এনে প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে এসিবি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ভাবেই আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সিবিআই।
এসিবি-কর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভিজিল্যান্স কমিশনের মতো দিনের পর দিন তদন্ত ফেলে রাখা হবে না। সময় বেঁধে কাজ করতে হবে। এবং পুলিশের মতো যে-কোনও তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করবে এসিবি। তবে আদালতে চার্জশিট পেশ করার জন্য আরও কিছু সময় দেওয়া হবে ওই শাখার গোয়েন্দাদের। এক এসিবি-কর্তা বলেন, “চার্জশিট জমা দেওয়ার জন্য এক বছর সময় পাবেন তদন্তকারী অফিসারেরা।” তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরে কোন আদালতে পেশ করবে এসিবি?
এ ক্ষেত্রেও সিবিআইয়ের পথেই হাঁটতে চাইছে এসিবি। ওই শাখার ডিআইজি বলেন, “থানা গঠন হলেও কোন আদালতে ধৃতকে পেশ করা হবে, তা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। সিবিআইয়ের মতো বিশেষ ক্ষমতার এসিবি আদালত গঠন করতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মহাকরণে।”
প্রাথমিক ভাবে ডিএসপি-দেরই তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব দিচ্ছে এসিবি। কিন্তু ওই পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন মাত্র চারজন। ফলে মামলা বাড়লে বিপাকে পড়তে হবে এসিবি-কে। এক এসিবি-কর্তা বলেন, “ইনস্পেক্টরেরাও যাতে তদন্তের ভার নিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মহাকরণে।” |