ছাত্র-সংঘর্ষ ভাঙড়, কলকাতায়
অধ্যক্ষা-অধ্যক্ষ ঘেরাও বেড়াচাঁপা ও বারাসতে
শিক্ষক দিবসের আগের দিন, বুধবার ফের কলঙ্কিত হল রাজ্যের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল ও তার ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। কোথাও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাকে ঘেরাও করে বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। কোথাও নবীনবরণের টাকা আদায়ের জন্য পড়ুয়ার দল ঘেরাও করে রাখায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন অধ্যক্ষ। কোথাও বা তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলে কলেজ অশান্ত হয়ে উঠল। কোথাও আবার দু’দল ছাত্রের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল কলেজে।
শিক্ষাঙ্গনে লাগাতার গোলমালে প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও। ইটানগরের মেঘনাদ সাহা কলেজে অধ্যক্ষা-নিগ্রহের ছ’দিন পরেও হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায় বুধবার মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তার অভাব এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ জানান। চেয়ারম্যান জানান, তিনি আজ, বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে কমিশনের দুই সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বেড়াচাঁপা কলেজে টিএমসিপি-র বিক্ষোভ।
উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপার শহীদুল্লাহ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে এ দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা দাবি তোলে, প্রথম বর্ষে আসন বাড়াতে হবে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সুপ্রিয়া দত্তের ঘরের সামনে দুপুর থেকে ধর্নায় বসে তারা। অধ্যক্ষা-সহ আটকে পড়েন জনা তিরিশ শিক্ষক। অভিযোগ, কলেজের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষার ঘরের দরজা-জানলাও বন্ধ করে দেয় ছাত্রেরা। দেগঙ্গার ওসি পলাশ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ঘণ্টা তিনেক পরে বিদ্যুৎ ফেরে। কিন্তু ঘেরাও চলে রাত সওয়া ৮টা পর্যন্ত।
এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদও আসন বাড়ানোর দাবিতে সকালের দিকে আলাদা ভাবে আন্দোলন করে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দু’পক্ষেরই দাবি, দুপুরে টিএমসিপি আন্দোলনে নামার পরে বিদ্যুতের লাইন কাটা, কলেজ গেটে তালা ঝোলানোর ঘটনা ঘটে। কলেজের টিএমসিপি নেতা শেখ সহিদুল ইসলাম বিদ্যুতের লাইন কাটা ও তালা ঝোলানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করা হয়েছে। সুপ্রিয়াদেবী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অনুমতি দিলে অতিরিক্ত আসনে ভর্তি নিতে আপত্তি নেই। এ কথা বলার পরেও কিছু ছাত্র গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ৩০ জনকে আমার ঘরে আটকে রাখা হয়। বিদ্যুৎ-সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছিল।” পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষকে ঘেরাও করা হয় বারাসত সরকারি কলেজেও। সেখানে দাবি ছিল, নবীনবরণ অনুষ্ঠানের জন্য অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্তকে কলেজের উন্নয়ন তহবিল থেকে তিন লক্ষ টাকা টাকা দিতে হবে। কলেজ সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ টাকা দিতে রাজি না-হওয়ায় এক দল পড়ুয়া বিকেলে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে। অভিযোগ, তারা টিএমসিপি-র সমর্থক। দীর্ঘ ঘেরাওয়ে অধ্যক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৮টা নাগাদ পুলিশ তাঁকে কলেজ থেকে বার করে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। রাতে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছেও দিয়ে আসে তারা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় কলেজে তৃণমূলের দুই নেতার কোন্দলে সংঘর্ষ বাধে বলে অভিযোগ। পুলিশি সূত্রের খবর, বেলা দেড়টা নাগাদ ফর্ম ভর্তির লাইনে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের ঠেলাঠেলি হয়। অভিযোগ, ওই ছাত্রেরা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল নেতা, আরাবুল ইসলাম এবং কাইজার আহমেদের অনুগামী।

আশুতোষ কলেজের পড়ুয়াদের অবরোধ।
আরাবুল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কাইজার দলের জেলা পরিষদের সদস্য। সংঘর্ষে দু’পক্ষের চার জন জখম হয়। মোমেন আলি নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে পাঠানো হয়েছে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে। তবে কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি। আরাবুল বলেন, “কাইজারের অনুগামী কয়েক জন বহিরাগত কলেজে ঢুকে ছাত্রদের মারধর করেছে।” অভিযোগ উড়িয়ে দেন কাইজার। কলেজের টিচার ইনচার্জ নন্দা ঘোষ মন্তব্য করতে চাননি।
কলকাতার আশুতোষ কলেজে গণ্ডগোলের মূলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে বিকেলে ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপি-র মধ্যে গোলমাল বাধে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা ভবানীপুর থানার সামনে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড অবরোধ করে ছাত্র পরিষদ। নাকাল হন শহরবাসী। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁদের কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান-সহ পাঁচ জন টিএমসিপি-র হাতে আক্রান্ত হন। ওই ছাত্রীকে টিএমসিপি-র ছেলেরা কটূক্তি করত, প্রতিবাদ করায় মারধর করা হয়েছে। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার পাল্টা অভিযোগ, “কটূক্তির ঘটনায় ছাত্র পরিষদের ছেলেরাই যুক্ত। প্রতিবাদ করায় তারা বাইরের ছেলে এনে হামলা চালিয়েছে।” দু’পক্ষেরই দাবি, তাদের সদস্যেরা চিকিৎসাধীন।
শিক্ষক-নিগ্রহের প্রতিবাদে সরব হয়েছে কিছু শিক্ষক সংগঠন। বিকেলে কলেজ স্কোয়ারে ২৪ ঘণ্টার অনশনে বসেন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা), সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি-সহ আটটি শিক্ষক সংগঠনের সদস্যেরা। ইটাহার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা স্বপ্নাদেবী বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে তবেই শিক্ষক দিবস উদ্যাপন সফল হবে।”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.