দেরিতে শুরু করেও সাফল্য এসেছে কম সময়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে এই প্রশংসা-বার্তা পেয়ে উজ্জীবিত রাজ্য সরকার ই-টেন্ডারিং-এর পরিধি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। সরকার ঠিক করেছে, এ বার থেকে প্রকল্পের খরচ ৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হলে সব দফতরই দরপত্র চাইবে ইন্টারনেটে।
অর্থ দফতরের বক্তব্য, অনলাইনে টেন্ডার হলে প্রকল্পের টাকা ও সময়, দুই-ই বাঁচে। কাজেও আসে স্বচ্ছতা। সে কারণে বছরখানেক আগেই সরকারি কাজের বরাত দেওয়ার জন্য ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু শুরুতে নানা কারণে তাতে তেমন সাফল্য মেলেনি। এই অবস্থায় পিছিয়ে না গিয়ে বরং বাধাগুলি দূর করার লক্ষ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। আর তাতেই সাশ্রয়ের মুখ দেখেছে মহাকরণ। রাজ্যের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রক। গত সপ্তাহে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্র বলেছে, অনেক কম সময়ে বেশি সাফল্য দেখাতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গের সরকার। তাই ই-টেন্ডারিংয়ের পরিধি আরও ছড়িয়ে দিক রাজ্য।
অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের অনেক আগেই ছোটবড় মিলিয়ে দেশের অন্তত ১৩টি রাজ্য ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করেছে। এবং সব রাজ্যেই কমবেশি সাফল্য এসেছে। কিন্তু বাংলায় সাফল্য এসেছে দ্রুত, জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রকই। নিজেদের সাফল্যে আর কেন্দ্রের বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গত ২৯ অগস্ট রাজ্য থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ই-টেন্ডারিংয়ের নয়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
মহাকরণের খবর, প্রথম ধাপে রাজ্যের প্রায় সব দফতরই ৫০ লক্ষ টাকার বেশি কাজের জন্য দরপত্র
চাইত ইন্টারনেটে। শুধু পূর্ত, সেচ, পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরির মতো গোটা কয়েক দফতর ৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের কাজের জন্য ই-টেন্ডারিং করত। অর্থ দফতর বিশ্লেষণ করে দেখেছে, সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে পূর্ত, সেচ, পঞ্চায়েত, জনস্বাস্থ্য দফতর এবং কয়েকটি জেলা পরিষদ। মহাকরণের খবর, এই চার দফতর ৫ লক্ষ টাকার বেশি কাজের জন্য ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র চাওয়ায় প্রকল্প খরচের প্রায় ৫ থেকে ১৫% পর্যন্ত অর্থ সাশ্রয় করতে পেরেছে। এই কাজেও অনেক স্বচ্ছতা এসেছে। এই পরিস্থিতিতেই নতুন নির্দেশিকায় অর্থসচিব বলেছেন, কাজের অঙ্ক ৫ লক্ষ টাকা বা কার বেশি হলে সব দফতরকেই ই-টেন্ডারিং করতে হবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে।
বাম আমলে ২০১০ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কাজে প্রথম ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল। কিন্তু নানা মহল থেকে আপত্তি ওঠায় সেই কাজ আর এগোয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কেন্দ্রের ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি দফতরের কাজের জন্য যখন অনলাইন দরপত্র চালু হয়েছিল, তখনও অধিকাংশ ঠিকাদার সংস্থাই এতে উৎসাহ দেখায়নি। উল্টে অনলাইন-দরপত্র দিতে হবে জেনে বেঁকে বসেছিল তারা। প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, কোনও প্রকল্পের জন্য দরপত্র চাওয়া হলে একটি চক্র আড়াল থেকে সক্রিয় হয়ে উঠত। তাতে ঠিকাদারদের পাশাপাশি যুক্ত থাকতেন সংশ্লিষ্ট দফতরের এক শ্রেণির অফিসার। সরকারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘প্যাক্ট’। বহু ক্ষেত্রে এই চক্রের মাধ্যমেই ঠিক হত, কে কোন কাজটা পাবেন। এই মৌরসিপাট্টায় আঘাত পড়বে বুঝতে পেরেই নানা অজুহাতে অনলাইন দরপত্র দিতে আগ্রহ দেখায়নি ঠিকাদার সংস্থাগুলি।
পরিস্থিতি বদলে দিতে এক দিকে ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে প্রশাসন। অন্য দিকে, চক্র ভাঙতে উদ্যোগী হয় তারা। আর তাতেই এসেছে সাফল্য।
|