পশ্চিম মেদিনীপুরের ছোট আঙারিয়ার হত্যাকাণ্ড। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ‘পুনর্দখল’ পর্বে আহতদের পাচারের চেষ্টা। বাম আমলের এই জোড়া মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সিপিএম নেতা সুকুর আলি এখনও ফেরার। সেই অবস্থাতেই আগাম জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে তিনি যে-আবেদন জানিয়েছিলেন, বুধবার তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি কাঞ্চন চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়।
দু’টি ঘটনার মধ্যে একটি এক যুগেরও বেশি আগের। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূলকর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে বৈঠক চলাকালীন সিপিএমের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। আগুন লাগানো হয় বাড়িতে। যথেচ্ছ গুলি চলে। অন্তত পাঁচ জন নিহত হন এবং তাঁদের দেহ লোপাট করা হয় বলে তৃণমূলের দাবি। তদন্ত চালিয়ে তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ১৪ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে সিবিআই।
দ্বিতীয় ঘটনা ২০০৭ সালের। তখন সিপিএমের ‘নন্দীগ্রাম পুনর্দখল পর্ব’ চলছে। ১০ নভেম্বর গোকুলচূড়ায় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মিছিলে নির্বিচার গুলিবর্ষণে অনেকে জখম হন। অভিযোগ, সিপিএমের লোকেরাই গুলি চালিয়েছিল। আহতদের মধ্যে কয়েক জনকে এগরা হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার দিকে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। খবর পেয়ে এগরায় তৃণমূলের লোকেরা চারটি গাড়ির কনভয় আটকে তল্লাশি চালিয়ে আহতদের উদ্ধার করেন। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে ধরা পড়েন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কয়েক জন সিপিএম নেতা। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তপন ঘোষ ও সুকুর আলি। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, তৃণমূলের লোকেরা ধৃতদের এগরা থানায় নিয়ে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা এবং অপহরণের মামলা দায়ের করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা উত্তম দাস। কয়েক দিন পরে ওই ঘটনা নিয়ে নন্দীগ্রাম থানায় আরও দু’টি মামলা হয়। যাঁদের পাচার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ, তাঁদেরই দু’জন কল্পনা মুনিয়ান ও যাদবচন্দ্র পালের পরিবার নন্দীগ্রাম থানায় তপন, সুকুর এবং অন্য কয়েক জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে। সেই মামলায় তপন ও সুকুর জামিন পেয়ে যান। ছোট আঙারিয়ার মামলাতেও বেকসুর খালাস পান তাঁরা।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের মসনদে বসার পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় যে-চার্জশিট দেয়, তাতে ফের অভিযোগ আনা
হয় তপন ও সুকুরের বিরুদ্ধে। ওই মামলার চার্জশিটে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ-সহ মোট ৮৮ জনের নাম রয়েছে (তাঁদের মধ্যে মারা গিয়েছেন এক জন)। লক্ষ্মণবাবু এবং অন্য কয়েক জন সিপিএম নেতাকে গ্রেফতারও করেছিল সিবিআই। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। পালিয়ে যান তপন ও সুকুর।
গা-ঢাকা দেওয়া অবস্থাতেই আইনজীবী মারফত হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন সুকুর আলি। এ দিন সেই আবেদনটিই খারিজ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তাঁর সহযোগী তপন ঘোষ অবশ্য আগাম জামিনের আবেদন করেননি।
|