আদালতের নির্দেশে তিন মাস আগে তালা খুলেছিল। কিন্তু ৫০ হাজার গ্রাহক ও ৬৭ জন কর্মীর জন্য হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের দরজা খুলল না এখনও। রাজ্যের প্রতিশ্রুত টাকা না মেলায় এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লাইসেন্সের আবেদন ফের নাকচ করে দেওয়ায় গত তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা ওই সমবায় ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ সেই তিমিরেই রইল।
অনিয়মের অভিযোগে ২০১০-এর ১৭ জুন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই ব্যাঙ্কটির অস্থায়ী লাইসেন্স কেড়ে নেয়। ফলে লেনদেন বন্ধ হয়ে ব্যাঙ্কটি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। ৩ অগস্ট পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকাও আটকে যায়। নানা টানাপোড়েন ও মামলা-মোকদ্দমার পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৩-র ২০ মে হাওড়ায় উপনির্বাচনের আগে ব্যাঙ্কটির তালা খোলেন আদালত-নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার প্রাক্তন জেলা-জজ ও লিগ্যাল রিমেমব্রান্সার সুভাষ রায়। সে দিন ব্যাঙ্কের সামনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের কৃষি ও বিপণনমন্ত্রী এবং এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায়। তিনি আশ্বাস দেন, গ্রাহকদের টাকা ফেরাতে সব রকম চেষ্টা করবে রাজ্য।
রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, কাজকর্ম দেখাশোনার এক মাসের মধ্যে ৮ জুন স্পেশাল অফিসার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৬ পাতার রিপোর্ট দেন হাইকোর্টের বিচারপতি গিরিশ গুপ্ত-র এজলাসে। তাতে জানানো হয়, এখনও বিভিন্ন ব্যাঙ্কে রামকৃষ্ণপুর সমবায়ের অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ৪২ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৫৬ টাকা আছে। জেলা সমবায় দফতরে এআরসিএসের কাছে রয়েছে সাড়ে ৪ কোটি। রাজ্যের গড়া মূল্যায়ন কমিটির নির্দেশ মতো ব্যাঙ্কটির পুনরুজ্জীবনের জন্য ধার্য ১৯ কোটি টাকার মধ্যে ২০০৭-এ ওই সাড়ে ৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বকেয়া ১৫ কোটি। তা রাজ্য দিয়ে দিলেই ব্যাঙ্কটির বাঁচার পথ সুগম হবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেন স্পেশাল অফিসার।
আদালত সূত্রে খবর, রিপোর্ট জমার পরে গত দু’মাস ধরে শুনানির দিন পিছনোয় আদালত পরবর্তী নির্দেশ দিতে পারেনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্কটির লাইসেন্স ফেরত চেয়ে আবেদন করলেও তা অগ্রাহ্য হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য, ব্যাঙ্কটির যথেষ্ট আমানত নেই, তাই লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব নয়। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কর্মচারীরা। রামকৃষ্ণপুর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ্য ঘোষ বলেন, “রাজ্য বকেয়া মেটালে বা লাইসেন্স নিয়ে সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এলে এত দিনে গ্রাহক ও কর্মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন। ৩২ মাস ধরে কর্মচারীরা বেকার হয়ে বসে থাকতেন না। আমাদের মনে হয় ব্যাঙ্কটি যাতে না খোলে তারই চেষ্টা চলছে।”
নিজের এলাকায় ব্যাঙ্কটি খোলার ব্যাপারে সব চেয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের কৃষি ও বিপণনমন্ত্রী। অরূপবাবু বলেন, “রাজ্য বা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নয়, একটা রাজনৈতিক দল চাইছে না ব্যাঙ্কটা খুলুক। তাই আদালতে আইনজীবী দিচ্ছে না। তাই শুনানি হচ্ছে না। গোটা প্রক্রিয়ায় দেরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্ত আমরা সব রকমের চেষ্টা চালাব ব্যাঙ্ক খোলার।” মন্ত্রী জানান, রাজ্য যাতে বকেয়া ১৫ কোটি দেয় সেই চেষ্টাও করবেন তিনি। |