মোবাইলে অশ্লীল ছবির ডাউনলোড রুখতে চেষ্টা
কিছু দিন আগেই আরামবাগ শহরের একটি নামী স্কুলের শ্রেণিকক্ষে কয়েক জন ছাত্রছাত্রীর অশালীন আচরণের দৃশ্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল মোবাইল ফোন মারফত। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। অস্বস্তিতে পড়েন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কমবয়সী ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোনে অশ্লীল দৃশ্য ডাউনলোড করার প্রবণতা রুখতে এ বার নড়েচড়ে বসছে মহকুমা প্রশাসন। কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার ইতিমধ্যেই নোটিস জারি করেছেন, স্কুলে মোবাইল আনতে পারবে না পড়ুরারা।
আরামবাগ শহরে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেট থেকে মোবাইলে ডাউনলোড করার জন্য পায়ে পায়ে অসংখ্য দোকান। শুধু বাসস্ট্যান্ডের ২০০ মিটারের মধ্যেই অন্তত ৪০টি দোকানে এই কাজ হয়। তা-ও আবার খুবই সামান্য টাকার বিনিময়ে।
হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে ছবি-গান ডাউনলোড করে পড়ুয়াদের অনেকেই। আরামবাগ পুর এলাকার মধ্যে কম করে শ’দুয়েক মোবাইল-সংক্রান্ত দোকানের অনেকগুলিতেও এই কাজ হয়। গোঘাট, খানাকুল, পুড়শুড়া এবং আরামবাগের প্রত্যন্ত পঞ্চায়েত এলাকাতেও এ ধরনের দোকানের দেখা মেলে আকছার।
সাইবার অপরাধ দমনে
• মোবাইলের দোকানগুলিতে নজরদারি বাড়ছে।
• বহু স্কুলে পড়ুয়াদের মোবাইল আনায় নিষেধাজ্ঞা।
• হতে পারে সচেতনতা শিবির।
জানা গিয়েছে, এই দোকানগুলির মূল খদ্দের স্কুলের নবম শ্রেণি থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়ারা। কয়েক জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছোট ছোট ছেলেরা দোকানে এসে ফিসফিসিয়ে বলে, “কাকু লোড করে দিন।” সাহসী কিশোর আবার এ দিক ও দিক দেখে গলা খাঁকরিয়ে জানতে চায়, “কিছু আছে নাকি?” দোকানদার কাকু তাতে দিব্যি বুঝে যান, কী করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানদের অনেকের কাছেই জানা গেল, ১ জিবি ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইলের চিপে ৪০ থেকে ৬০টি অশ্লীল ছবি লোড করে ৩০-৫০ টাকা পান তাঁরা। বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন চিপে ১০০ টাকা পর্যন্ত রেট ধার্য। দোকান-পিছু সারা দিনে এমন খদ্দেরের সংখ্যা ৩০-৪০ জন। যাদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের ছাত্র। জানা গেল, ছাত্রীরাও গান লোড করতে এসে বলে, “অন্য কিছু থাকলে দিয়ে দেবেন।” ইঙ্গিতে দোকানদার বুঝে যান, আসল চাহিদাটা কী।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “অশ্লীল ছবি নিয়ে যা ঘটছে তা কাম্য নয়। এই সাইবার ক্রাইম রুখতে বিশেষ উদ্যোগ করা হচ্ছে।” আরামবাগ এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তদন্তও শুরু হয়েছে। যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।” এ নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা যায় কিনা, তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তার অবকাশ আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কেউ কেউ। অভিভাবকদেরও সচেতন করা দরকার বলে মনে করেন তাঁরা।
বুধবার নজরুল মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দু’টি দোকান সিল করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ জনকে। যদিও পুলিশেরই একাংশের মতে, ইন্টারনেট-শাসিত দুনিয়ায় এই প্রবণতা পুরোপুরি আটকানো কার্যত দুঃসাধ্য। তবে নজরদারি বাড়ালে কিছুটা রোখা যাবে নিশ্চিত ভাবে।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেড়ে চলা মোবাইলের ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত স্কুল কর্তৃপক্ষও। কয়েকটি স্কুলে ক্লাসঘরে মোবাইল আনার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাঁরা। কিছু ক্ষেত্রে দু’একটি স্কুলের শিক্ষকেরা ছাত্রদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের হিসাবে, আরামবাগ মহকুমার স্কুলগুলির নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় ৪০ শতাংশের হাতেই মোবাইল আছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা আনুমানিক ৮০ শতাংশ। মোবাইলের উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন নেই শিক্ষকদের। তবে তাঁদের মতে, পড়ুয়াদের দামি মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখার প্রবণতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আরামবাগ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক বৈরাগ্য বলেন, “আমরা অনেক আগেই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন আনা নিষিদ্ধ করেছি। এখন তা নিয়ে আরও সতর্ক আছি।” পুড়শুড়ার পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নেপালচন্দ্র মল্লিক বলেন, “আমরা মোবাইল নিষিদ্ধ করেছি। নিয়মিত ক্লাসে তল্লাশি চালাচ্ছি। কারও কাছে মোবাইল পেলে তা বাজেয়াপ্ত করে অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।” একই পদক্ষেপ করছেন আরামবাগের ডোঙ্গল হাইস্কুল, গোঘাটের বেঙ্গাই হাইস্কুল, খানাকুলের নতিবপুর হাইস্কুল-সহ বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.