ফাঁকা ক্লাসঘরে ছয় ছাত্রছাত্রী মেতেছে অবাধ যৌন-সম্পর্কে। মোবাইল ফোনে এমএমএসের (মাল্টি-মিডিয়া মেসেজ) মাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ায় শোরগোল পড়েছে আরামবাগের একটি স্কুল এবং লাগোয়া এলাকায়। দিন পাঁচেক আগের ঘটনাটি নিয়ে যারপরনাই অস্বস্তিতে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ডাকা হয়েছে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াদের অভিভাবকদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ আবার জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
স্কুলের বহু ছাত্রছাত্রী এবং এলাকার লোকজনের মোবাইলে মোবাইলে এখন ওই এমএমএস দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে কাল, বৃহস্পতিবার পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক আদিত্য খাঁ বলেন, “ওই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের। যে ক্লাসঘরে ঘটনা ঘটেছে তা-ও স্কুলের। এ নিয়ে আর কোনও কথা এখনই বলা যাবে না।” স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষ বলেন, “ওই এমএমএস আমি দেখেছি। স্কুলের সুনাম নষ্ট করার জন্য এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদেরও ডাকা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ওই ছাত্রছাত্রীদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”
স্কুলটি আরামবাগ শহরের নামী স্কুলগুলির অন্যতম। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এর আগে সেখানে স্কুলের সুনাম নষ্ট হয়, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এমএমএসে যে সব ছাত্রছাত্রীদের দেখা যাচ্ছে, তারা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির। সবাই স্কুলের পোশাকে ছিল। সঙ্গে ব্যাগও ছিল। অন্তত দিন পাঁচেক আগে ওই ঘটনা ঘটে।
তার পরে ঘটনায় জড়িত কোনও ছাত্রের সঙ্গে বাকিদের কোনও কারণে গণ্ডগোল হওয়ায় সে ওই ছবি ছড়িয়ে দেয় বলে প্রাথমিক তদন্তে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমান।
তবে ঘটনাটিকে অস্বাভাবিক বলে মানতে রাজি নন মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম। তিনি বলেন, “কমবয়সীদের মধ্যে যৌন সংসর্গ অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন হাতে হাতে মোবাইল থাকায় হয়তো ওই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ বদমায়েসি করে ছবি তুলে তা ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে, বিষয়টি নজরে এসেছে।” কিন্তু স্কুলের পোশাকে স্কুলের মধ্যেই যৌনতা?
জয়রঞ্জনবাবুর মতে, “আজকাল আর সামাজিকতার আব্রু বলে কিছু নেই। তারই প্রভাব পড়ছে অল্পবয়সীদের মধ্যে।” সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র মনে করেন, “অনেক সময়ে দুই ছাত্রছাত্রী যৌন সংসর্গ নিয়ে নিজেদের অপরাধবোধ কমানোর জন্যও আরও কয়েকজনকে দলে জুটিয়ে নেয়। ছবি তুলিয়েও অনেকে আনন্দ পায়। কিন্তু ওরা নিশ্চয়ই জানত না যে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে ছবি বাইরে ছড়িয়ে দেবে।”
কিন্তু এই ঘটনায় আতঙ্কিত অভিভাবকেরা। ওই এমএমএস তাঁদের অনেকের ছেলেমেয়ের মোবাইলেও চলে এসেছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও জোর আলোচনা চলছে। এক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এখন তো মেয়েকে স্কুলে পাঠাতেই ভয় লাগছে। স্কুলে নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত।” একাধিক অভিভাবকের বক্তব্য, “স্কুলের পরিবেশ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এ সব স্কুল কর্তৃপক্ষের কঠোর ভাবে দমন করা উচিত।”
এই এমএমএস পুলিশের নজরেও এসেছে। যদিও তা নিয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন সূত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |