|
|
|
|
শিক্ষারত্ন হলেন সাত জন |
দিল্লিতে আজ পুরস্কৃত পূর্বের দুই জাতীয় শিক্ষক
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য এ বার রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুই শিক্ষক সুজনকুমার বালা ও মণীন্দ্রনাথ দাস। আজ, শিক্ষক দিবসে দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
সুজনবাবু নন্দকুমারের কড়ক শচীন্দ্র স্মৃতি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের চাঁদপুর গ্রামে। মেদিনীপুর কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে স্নাতক হওয়ার পর সুজনবাবু শান্তিনিকেতনে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেন। প্রথমে সবংয়ের বাগনাবাড় হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে নন্দকুমারের কড়ক শচীন্দ্র স্মৃতি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখন হলদিয়ার চকদ্বীপায় থাকেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালন করার পাশপাশি মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য জীববিদ্যার একাধিক পাঠ্য বই ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পড়ুয়াদের জন্য পরিবেশবিদ্যার বই লিখেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠনের পাশপাশি প্রধান শিক্ষক হিসেবে কড়ক হাইস্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ ভূমিকা আছে। জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত সুজনবাবু বলেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞানমনস্ক গড়ে তোলার জন্য সব সময় চেষ্টা করেছি। শিক্ষক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান পেয়ে খুশি। ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করার চেষ্টা করব।”
খেজুরির জনকা এলাকার শ্যামপুর লক্ষ্মীপ্রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মণীন্দ্রনাথ দাস কটকা দেবীচক গ্রামে থাকেন। ১৯৮১ সালে প্রথমে হলদিয়ার দেভোগ পূর্বপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে খেজুরির শ্যামপুর লক্ষ্মীপ্রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। ১৯৯৯ সালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। মণীন্দ্রবাবু বলেন, “এই স্কুলে যোগ দেওয়ার সময় টালির চাল দেওয়া বাড়ি ছিল। অর্ধেক কাঁচা, অর্ধেক পাকা দেওয়াল। আজ সেই স্কুলের দোতলা পাকা বাড়ি হয়েছে। শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। গ্রামবাসীদের প্রচুর সাহায্য পেয়েছি।” আগামী বছরেই অবসর নেবেন মণীন্দ্রনাথবাবু। বুধবার দিল্লি থেকে ফোনে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণববাবুকে একাধিকবার দূর থেকে দেখেছি। এ বার তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার নেব ভেবে রোমাঞ্চ হচ্ছে।”
জেলার দুই শিক্ষকের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্তির দিনেই রাজ্য সরকারের দেওয়া শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের সাত জন শিক্ষক। এদের মধ্যে দু’জন হাইস্কুলের শিক্ষক ও পাঁচ জন প্রাথমিক শিক্ষক। কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কৃষ্ণগঞ্জ কৃষি-শিল্প বিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত রসায়নের শিক্ষক সরোজকুমার সাহু, খেজুরির হলুদবাড়ি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামল বাখরা, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শান্তিপুর দক্ষিণপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিজয় বেরা, তমলুক ব্লকের নৈছনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মদনমোহন দাস, পটাশপুর-১ ব্লকের পদিমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিপদ দাসমহাপাত্র, এগরা-১ ব্লকের খামারজিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস ও নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের হরিপুর অম্বিকাচরন পার্ট বেসিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু মিদ্যা। এদিকে গত দু’বছর ধরে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলাস্তরে শিক্ষক দিবসের যে অনুষ্ঠান হচ্ছিল, এবার তা হচ্ছে না। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের নিয়ন্ত্রণ তৃণমূল হাতে আসার পর গত দু’বছর ধরে বিদ্যালয় সংসদ ও জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে জাঁকজমক সহকারে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছিল। এর জন্য তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হত। কিন্তু এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে তৃণমূল জিতলেও জেলা পরিষদের নতুন কর্মকর্তা এখনও নির্বাচন হয়নি। ফলে জেলা পরিষদের আর্থিক সাহায্য মেলেনি। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি গোপাল সাহু বলেন, “আর্থিক সঙ্কটের কারণে এ বছর জেলাস্তরে অনুষ্ঠান হচ্ছে না।” |
|
|
|
|
|