কাটোয়া ধর্ষণ
মৃত ফরিদের বাড়ি গিয়ে বিতর্কে তৃণমূল বিধায়ক
বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে অন্যতম প্রধান অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন কাটোয়া-ধর্ষণের অভিযোগকারিণী। পথ দুর্ঘটনায় সেই ফরিদ শেখের মৃত্যুর পরে তার বাড়ি গিয়ে ‘সান্ত্বনা’ দিলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম।
অথচ গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি আমোদপুর-কাটোয়া ছোট রেলে ওই গণধর্ষণে ফরিদের নাম ওঠার পরে এই মনিরুল ইসলামই বলেছিলেন, “ও আমাদের দলের সমর্থক কি না, জানা নেই।” বুধবার বিকেলে তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে পরিচিত আব্দুল মান্নান, তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তীদের নিয়ে ফরিদের বাড়িতে যান মনিরুল। পরে ফরিদের স্ত্রী জাহেমা বিবি বলেন, “বিধায়ক আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।”
শুধু লাভপুরের চৌহাট্টায় ফরিদের বাড়িই নয়। ওই দুর্ঘটনায় মৃত আর এক অভিযুক্ত, নানুরের পোশলা গ্রামের কালাম শেখের বাড়ি গিয়েও মরদেহে মালা দিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কী? বিধায়ক কেন ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়ি গেলেন? যা শুনেই ফেটে পড়ে মনিরুল বলেন, “আমার এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সৌজন্যের খাতিরে গিয়েছি। আমি কার বাড়ি যাব বা যাব না, কে দুষ্কৃতী কে নয় তা ঠিক করে দেওয়ার ঠিকা নিয়েছে আনন্দবাজার? আসলে আনন্দবাজারই বড় দুষ্কৃতী।”
গত বছর বর্ধমানের কাটোয়ায় ওই ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, “সব সিপিএমের চক্রান্ত করে সাজানো।” এ দিন অভিযোগকারিণী বলেন, “প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছিলেন। অভিযুক্তদের আমি আদালতে চিনিয়ে দিয়েছি।” বীরভূমে গোষ্ঠী রাজনীতিতে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত মনিরুল। তবে অনুব্রতর দাবি, “কে কোথায় গিয়েছে, কাকে সান্ত্বনা দিয়েছে, কার গলায় মালা দিয়েছে, কিছুই জানি না।”
বিধায়ক সৌজন্যের যুক্তি দিলেও ফরিদের সঙ্গে তাঁর বা তৃণমূলের কী সম্পর্ক, তা এলাকার অনেকের কাছেই স্পষ্ট। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে মনিরুল যখন ফব-র দাপুটে নেতা তথা স্থানীয় দাঁড়কা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন, ফরিদ সিপিএমের আশ্রয়ে ছিল। তার আগে এক সময়ে সে-ও ফব করত। সে সময়ে নানা অপরাধমূলক কাজ এবং নকল মুদ্রা ও গরু কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের পরে মনিরুল তৃণমূলে যোগ দেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফরিদও সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে যোগ দেয়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া মনিরুলের জন্য ‘খেটেছিল’ ফরিদ। এ বার পঞ্চায়েত ভোটেও (লাভপুর ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত ও লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতি বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল) মনিরুলের ডান হাত হিসেবে কাজ করেছিল সে। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ফরিদ এবং তার মতো আরও কিছু লোকজন ঠিকাদারি শুরু করে। কয়েক দিন আগে কাটোয়া আদালতে ধর্ষণ মামলার শুনানিতে গিয়ে ফরিদ নিজেই লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতি এবং কাটোয়া-আমোদপুর রেললাইন ব্রডগেজ করার কাজে ঠিকাদারির কথা জানিয়েছিল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “এখন দুষ্কৃতীরাই তৃণমূলে মহাপুরুষ হয়ে উঠেছে। তাদের মৃতদেহে মালা দেওয়া বা শোক প্রকাশ করা ওদেরই সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” বিরক্ত তৃণমূলের একাংশও। গোষ্ঠী রাজনীতিতে বিধায়ক-বিরোধী বলে পরিচিত ফিরোজ আহমেদ খানের অভিযোগ, “মনিরুল ইসলাম ঢোকার পর থেকেই দল দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। দুষ্কৃতীদের ঠিকাদারি-সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে তার ভাগ নিচ্ছেন বিধায়ক।” তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “যদি কেউ ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অভিযোগে অভিযুক্তের মরদেহে মালা দিয়ে থাকেন, তা হলে দলীয় বৈঠক ডেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সহ প্রতিবেদন: সৌমেন দত্ত

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.