দু’দিন আগেই বিচারকের সামনে তিন প্রধান অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছিলেন কাটোয়া ধর্ষণ-কাণ্ডের অভিযোগকারিণী। সেই মামলারই শুনানি থেকে ফেরার সময়ে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন ওই তিন জনের এক জন। মৃত্যু হয়েছে অন্য এক অভিযুক্তেরও। এর ফলে শুনানি পিছিয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার বিকেলে বীরভূমের লাভপুরে লড্ডা গ্রামের কাছে কাটোয়া-সিউড়ি রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বর্ধমানের কাটোয়া আদালত থেকে মোটরবাইকে ফিরছিলেন দুই অভিযুক্ত ফরিদ শেখ (৪২) ও কালাম শেখ (৩০)। একটি ডাম্পারের সঙ্গে মোটরবাইকের মুখোমুখি ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়।
গত শুক্রবার রুদ্ধদ্বার কক্ষে সাক্ষ্যের প্রথম দিনে অভিযোগকারিণী যে তিন জনকে চিহ্নিত করেছিলেন, জামিনে মুক্ত থাকা ফরিদ তাদের অন্যতম। তার নামে একাধিক খুনের মামলাও চলছিল। বাড়ি লাভপুর থানার চৌহাট্টা গ্রামে। কালামের বাড়ি নানুরের পোষলায়। সন্ধ্যায় দেহ দু’টিকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশের ধারণা, বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারানোতেই এই দুর্ঘটনা।
গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি আমোদপুর-কাটোয়া ছোট রেলে (এখন ব্রডগেজ হচ্ছে) ডাকাতির সময়ে ১১ বছরের মেয়ের মাথায় বন্দুক ধরে যাঁকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। প্রথম দিনের সাক্ষ্যেই ফরিদ শেখ, নয়ন শেখ ও রেজাউল মির্জা নামে তিন জনকে চিহ্নিত করেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, ফরিদের আসল বাড়ি মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার কুলি গ্রামে। পুলিশের তাড়া খেয়ে বছর বারো আগে সে চৌহাট্টায় এসে থাকতে শুরু করে। তখন থেকেই তার সঙ্গী খুড়তুতো ভাই নয়ন শেখ। ফরিদ ইদানীং লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতি এবং কাটোয়া-আমোদপুর ব্রডগেজ লাইন তৈরির কাজে ঠিকাদারি করছিল। কালামের কাকা নজরুল হক বলেন, “ওরা কাটোয়া থেকে মোটরবাইকে বীরভূমের দিকে চলে গিয়েছিল। আমি ওদের সঙ্গে না গিয়ে কেতুগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাই।” তাঁদের অনুমান, বাইকের সামনের চাকা ফুটো হয়ে যাওয়াতেই দুর্ঘটনা ঘটে।
ফরিদ ও নয়ন বাদে নুর মহম্মদ নামে কাটোয়ার এক অভিযুক্তও জামিনে মুক্ত। রেজাউল মির্জা, স্বপন শেখ, নয়ন শেখ ও সেন্টু শেখ নামে চার জন আছে জেল হাজতে (কায়েশ শেখ নামে কেতুগ্রামের এক অভিযুক্ত ফেরার)। প্রতিদিনই সাত অভিযুক্ত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে শুনানিতে হাজির থাকছিল। তাদের আইনজীবীরা এখন অভিযোগকারিণীকে জেরা করছেন। এ দিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, পুলিশ বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তাঁকে কিছু শিখিয়ে দিয়েছে কি না। মহিলা বলেন, কেউ কিছু শেখায়নি। রাতে সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুই অভিযুক্তের মৃত্যু হওয়ায় সাক্ষ্য স্থগিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বুধবার বিচারক যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনই হবে।” |