সিপিএমের এক সদস্যের অনুপস্থিতি ও বিজেপি সদস্যের সমর্থনের উপরে ভর করে কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিল তৃণমূল। মঙ্গলবার সেখানে বোর্ড গঠন হয়। এ দিন কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতিরও বোর্ড গঠন করল তৃণমূল। সভাপতি হলেন তৃণমূল নেতা জাহের শেখ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের মধ্যে সিপিএম পায় ১০টি, তৃণমূল ৯টি ও বিজেপি একটি। মঙ্গলবার সভাপতি নির্বাচনের সময় দেখা যায়, সিপিএমের সদস্য আব্দুল আলিম অনুপস্থিত। বিজেপি-র একমাত্র সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করেন। ফলে, সমিতি দখল করে তৃণমূল। সভাপতি নির্বাচিত হন বনানী মাঝি ও সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডল। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে ব্লক অফিস চত্বরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। |
কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে এ দিন সভাপতি নির্বাচিত হন তিনটি খুন-সহ আটটি নানা মামলায় অভিযুক্ত জাহের। মঙ্গলকোটে কচি শেখ, নানুরে আনন্দ দাস হত্যা ছাড়াও কেতুগ্রামে দলীয় কর্মী শুকুর শেখকে খুনে মূল অভিযুক্ত তিনি। এ দিন কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সেখ সাহানেওয়াজকে পাশে বসিয়ে জাহের বলেন, “আগে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেতেন। এখন এলাকা শান্ত। ব্লক শান্ত রাখাই আমাদের কাজ।” বিধায়ক বলেন, “তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক অশান্তি করলে তার বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছে দলের উচ্চ নেতৃত্ব।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাহের আগে সিপিএম সমর্থক ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। বিধানসভা ভোটে এলাকায় সিপিএমকে ধরাশায়ী করতে বড় ভূমিকা নেন তিনি। এ বার কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তারা। যেখানে নির্বাচন হয়, সেখানেও সিপিএম খুব খারাপ ফল করে।
দলে বিধায়কের অনুগামী হিসেবে পরিচিত জাহের। দলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি রত্নাকর দে গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রেই খবর। রত্নাকরবাবু এখন ব্লক সদর কান্দরায় ঢুকতে পারেন না। এ দিন রত্নাকরবাবু বলেন, “দল জাহেরকে নিশ্চয়ই যোগ্য নেতা মনে করেছে। তাই দায়িত্ব দিয়েছে।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে জাহেরের নাম মেনে নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা মামলা প্রসঙ্গে জাহেরের দাবি, “সব মিথ্যা অভিযোগ। সিপিএম আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছে।”
কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হওয়ার পরে আবার দলের এক সদস্য নিখোঁজ বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের কেতুগ্রাম ২ লোকাল সম্পাদক তমাল মাঝির দাবি, “২৫ অগস্ট থেকে ওই সদস্য নিখোঁজ। ২৮ অগস্ট থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। আমাদের ধারণা, ওই সদস্যকে তৃণমূল অপহরণ করে নিজেদের হেফাজতে রেখে দিয়েছে।” তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের পাল্টা বক্তব্য, “পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে না পেরে সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তাদের ওই সদস্যের ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই।” |