সহায়ক স্কুল খুলে সংবর্ধিত পুলিশ কর্তা
নসংযোগ বাড়াতে ফুটবল প্রতিযোগিতা, কিংবা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পুলিশকে মাঝে মধ্যে দেখা যায়। গতানুগতিক ওই বেড়া ডিঙিয়ে সন্ত্রাস রোধে শিক্ষা বিস্তারকে হাতিয়ার করে নজির গড়েছেন নানুরের ওসি চয়ন ঘোষ।
গাঁটের কড়ি খরচ করে তিনি স্কুলছুটদের জন্য খুলেছেন দু’টি ‘সহায়ক স্কুল’। ওই দু’টি স্কুল মিলিয়ে মোট ১৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের পড়ানোর জন্য বেকার তিন যুবক-যুবতীকেও নিযুক্ত করেছেন ওসি। এর বিনিময়ে তাঁরা মাসে কিছু টাকাও পান। সবই দেন ওসি। এই কাজের জন্য সংবর্ধিত হয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা।
নদিয়ার চাকদহের মদনপুর গ্রামের বাসিন্দা চয়নবাবু ২০০১ সালে হাওড়া জিআরপিতে এএসআই পদে যোগ দেন। ২০১০ সালে বীরভূমের মাড়গ্রামের ওসি হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০১২ সালে নানুরের ওসি হন। জেলা তো বটেই, রাজ্য রাজনীতিতে বহু আলোচিত নাম নানুর এলাকা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সন্ত্রাস দমনে প্রথাগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারকে হাতিয়ার করেন চয়নবাবু। তাই বছর খানেক আগে বাসাপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে চালু করা হয় প্রথম ‘সহায়ক স্কুল’টি। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২১। মাসিক দু’ হাজার টাকা বেতন দিয়ে শেখ রেজাউল এবং লতিকা দাস নামে দুই বেকার যুবক যুবতীকে পঠনপাঠনের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তী কালে নানুর থানায় একই ভাবে চালু করা হয়েছে আরও একটি ‘সহায়ক স্কুল’। সেখানে ১৪ জন পড়ুয়ার জন্য সম বেতনে নিয়োগ করা হয়েছে সান্ত্বনা ভারুইকে। বিনা বেতনে শিক্ষা দানের পাশাপাশি পড়ুয়াদের বই খাতা, স্কুলের জামাকাপড় এমনকী শীতবস্ত্রও কিনে দেওয়া হয়।

স্কুলছুটদের পাঠশালা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
শেখ রেজাউল এবং সান্ত্বনা দেবীর কথায়, “নিজেদের বেকারত্ব কিছুটা দূর হয়েছে। তবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য যে কিছু করতে পারছি, এটা ভেবে বড্ড ভাল লাগছে। পড়ুয়ারা যাতে সরকারি স্কুলে পড়তে পারে, সে জন্য ওই সব স্কুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের স্কুলের সময় সুচি নির্ধারণ করা হয়।” পড়ুয়াদের জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি। ফাঁক কিংবা ছুটি পেলেই সটান হাজির হয়ে যান চয়নবাবু। সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন পড়ুয়াদের অগ্রগতি। কখনও বা নিজে বসে যান পড়ুয়াদের পাঠদানে। শুধু নানুরেই নয়, মাড়গ্রামে থাকাকালীন সেখানেও তিনি ৭৫ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে একই রকম ‘সহায়ক স্কুল’ চালু করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বছর ৩৯-এর চয়নবাবুর গ্রামের বাড়িতে প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক বাবা ব্রজগোপাল ঘোষ এবং মা অমিয়াদেবী এবং স্ত্রী, ছেলেমেয়ে। ২০০১ সালেই হাওড়ার পরে রামপুরহাট জিআরপিতে থাকাকালীন অনাথ শিশুদের নিয়ে চালু করেছিলেন বার্ষিক বনভোজন উৎসব। চয়নবাবুর কথায়, “বিভিন্ন জায়গায় কাজের সুবাদে দেখেছি দারিদ্র ও নানা প্রতিকুলতায় সমাজের একটি বড় অংশের ছেলেমেয়েরা স্কুলছুট হয়ে যায়। আবার বাড়িতে দেখিয়ে দেওয়ার কেউ না থাকায় প্রতযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পড়তে অনেকে প্রতি ক্লাসে ফেল করে পড়া ছেড়ে দেয়। তাই ওই সব ছেলেমেয়েদের মূলস্রোতে ধরে রাখতেই সহায়ক স্কুল গড়ার চিন্তাভাবনা করি।”
এলাকার এমন ‘সহায়ক স্কুল’ চলছে তা জানতেনই তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরা, সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটি সম্পাদক হাসিবুর রহমান, কিংবা নানুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সঞ্জীব রায়চৌধুরীরা। সব শুনে তাঁরা অবশ্য এই পুলিশ কর্তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এই ‘সহায়ক স্কুল’ টিকিয়ে রাখতে ওসির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন গদাধরবাবুরা। তবে এলাকার এক পত্রিকা গোষ্ঠী শিক্ষাবিস্তারের এহেন উদ্যোগের জন্য চয়নবাবুকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। পত্রিকা গোষ্ঠীর সম্পাদক রঘুরাজ সিংহ বলেন, “পুলিশকে আমরা সাধারণত ফুটবল খেলা করাতে দেখেছি। কিন্তু এমন এর আগে দেখিনি।”
যাদের জন্য জন্য এত কিছু, ওই সব পড়ুয়াদের অভিভাবক দিনমজুর তাকোড়ার সিরাজ শেখ, ইমরান আলি, বাসাপাড়ার প্রান্তিক চাষি মানব পালরা বলেন, “অভাবে কিংবা নানা প্রতিকূলতায় আমাদের ছেলেমেয়েরা দীর্ঘদিন আগে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। বড়বাবুর স্কুলে পড়ে তারা যে আবার স্কুলে ফিরবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।” আর ছোটরা? স্কুলছুট হয়ে যাওয়া তাকোড়ার নবিন শেখ, জেস্মিন খাতুন, স্কুলে পিছিয়ে পড়া রামকৃষ্ণপুরের আকাশ আলি, রানি খাতুনদের কথায়, “ভাগ্যিস পুলিশকাকু স্কুলটা গড়েছিলেন। না হলে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতে হত। দোকানে কাজ করতে হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.