যুদ্ধ হোক বা না হোক, ফুর্তিতেই আছেন আসাদ
তাঁর দেশ পুড়ছে। তিনি হাসছেন।
আমেরিকা তাঁকে চোখ রাঙাচ্ছে। তিনি কিন্তু খোশ মেজাজে।
গত সপ্তাহের শেষের দিকে প্রতিবেশী দেশ মিশরের দুরবস্থা নিয়ে বিস্তর ঠাট্টা-তামাশা করেছেন ইয়েমেন থেকে আসা প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
আড়াই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে তাঁর দেশ তছনছ। কিন্তু সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ গোটা দুনিয়াকে বোঝাতে চান, যেন কিছুই ঘটেনি। এটাই তাঁর কৌশল।
দামাস্কাসে থমথমে পথঘাট। সম্ভাব্য যুদ্ধের আগে যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন, খাবার মজুত করে রাখছেন বাসিন্দারা। যাদের পকেটে রেস্ত আছে, তাঁরা তড়িঘড়ি বৌ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিদেশে। এর মধ্যে আজই আবার সিরিয়ার বিশাল অংশে নিভে গিয়েছে আলো। সরকারের দাবি হাই ভোল্টেজ লাইনে জঙ্গি হামলা ঘটেছে। ঠারেঠোরে লক্ষা বিদ্রোহীদের দিকেই।
আসাদের অবশ্য তাতে কোনও হেলদোল নেই, তিনি প্রয়োজনে প্রকাশ্যে আসছেন। সাদা রাজপ্রাসাদের দোড়গোড়ায় অতিথি-অভ্যাগতদের সৌজন্য দেখাচ্ছেন। তাঁর সাজানো বাগানে তিনি পাশে পেয়েছেন সুন্দরী স্ত্রী আসমাকেও। এক সময় আসাদ-ঘনিষ্ঠ বেইরুটের একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকের মতে, “তিনি রক্তপিপাসু বা যুদ্ধকামী, এমনটা কখনওই বোঝাতে চান না।” গত সোমবার একটি ফরাসি কাগজে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আসাদ তাঁর দেশের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে বলেছেন, “শুরু থেকেই আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু বিরোধীদের ৯০ শতাংশ আল কায়দার জঙ্গি। ওদের থামানোর একটাই পথ। ওদের নিকেশ করা।”
আসাদের আপাত স্বাভাবিকতার আড়ালেই তিলে তিলে বেড়ে উঠেছে তাঁর আগ্রাসন। দেশের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে গত আড়াই বছর ধরে একটাই কথা বলেছেন আসাদ। তি নি মানতেই চান না, এটা গৃহযুদ্ধ। তাঁর মতে, এ সব বিদেশি শক্তির চক্রান্ত। তাই সিরিয়া জুড়ে রক্তপাতের ভয়াল ছবি দেখেও কখনও দায় স্বীকারের প্রয়োজন অনুভব করেননি এই শাসক।
শাসক, যাঁর শাসক হওয়ার কথাই ছিল না। ব্রিটেন থেকে চক্ষু-বিশেষজ্ঞ হয়ে ফেরার কথা ছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজের এই দ্বিতীয় সন্তানের। লন্ডনেই আলাপ ভাবী স্ত্রী আসমার সঙ্গে। কিন্তু আসাদের দাদা বাসেল পথ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। তাই ১৯৯৪ সালে বাড়ি থেকে তলব করা হয় আসাদকে। হাফেজের পরে ২০০০ সালে দেশের ভার নেন আসাদ। সিরিয়াবাসী স্বপ্ন দেখলেন, পরিবর্তন আসবে। আসাদের নাম হল: ‘আশা।’ কিন্তু আশা পূরণ করতে পারলেন না নয়া প্রেসিডেন্ট। তাঁর বাবা ১৯৭০ সাল থেকে যে পুলিশ-রাষ্ট্রের পত্তন করে গিয়েছিলেন, তার আমূল সংস্কার ঘটানোর তেমন কোনও চেষ্টাই করেননি আসাদ।
যুগ পেরিয়েছে। অর্থনেতিক উন্নতি নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন আসাদ, যে দেশে অর্থনীতিটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাঁর স্ত্রী আসমা রমজান মাসে প্রচুর খাবারদাবার বিতরণ করছেন দেশের বিক্ষোভে নিহত সেনারপরিবার-পরিজনদের। তাঁদের প্রাসাদ থেকে খুব দূরে নয়, আছড়ে পড়ছে মর্টার শেল। কিন্তু আসাদের ঘুম ছোটেনি। দামাস্কাসের এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, “উনি পাথরের স্তূপে বসে শাসন করবেন। উনি ওটাই ভাল পারেন।”
আসাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ওয়াশিংটন তাঁকে গদি থেকে সরাবে না। কারণ তাঁর বিরোধীদের মধ্যে অসংখ্য কট্টর মৌলবাদী আছে। যেটা ওবামা প্রশাসনের বড় মাথাব্যথা। তাই আসাদ তাঁর বিশ্বস্ত অনুচরদের ভরসা দিচ্ছেন, “আমেরিকা আঘাত হানলেও সেটা হবে লোকদেখানো।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.