সিরিয়ায় সেনা অভিযান না চালালে আন্তর্জাতিক শিবিরের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে বলে মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দাবি করছেন, ইরাক বা আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিয়াকে মেলানো ঠিক নয়।
সিরিয়ায় আসাদ সরকার যে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে, সেই প্রমাণ তাদের হাতে বলে আমেরিকার দাবি। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, সে দেশের প্রায় ৫৯ শতাংশ মানুষই সিরিয়ায় যুদ্ধ ঘোষণার বিপক্ষে। মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যেও এ নিয়ে মতদ্বৈধ আছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ। মিত্রদেশগুলির মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যুদ্ধের প্রস্তাব খারিজ করেছে। আমেরিকার পাশে আপাতত রয়েছে ফ্রান্স, সুইডেন এবং ইজরায়েল। কট্টর বিরোধীদের মধ্যে এ দিন কিছুটা কৌশলী নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
|
স্টকহলমে সাংবাদিক বৈঠকে ওবামা। ছবি: এপি। |
এই পরিস্থিতিতে ওবামা সিরিয়ায় নিয়ন্ত্রিত সেনা অভিযান চালানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর যুক্তি পেশ করেছেন। ঘরে-বাইরে সমর্থন জড়ো করার চেষ্টা তাঁর কথায় স্পষ্ট বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওবামার দাবি, “এটা আমার নয়, গোটা আন্তর্জাতিক শিবিরের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন। আমেরিকা আর মার্কিন কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার আইন আমি তৈরি করিনি। সারা পৃথিবীর ৯৮ শতাংশ দেশ মিলে সেটা তৈরি করেছে।” সেই আন্তর্জাতিক আইনের মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই সিরিয়ায় সামরিক পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করছেন ওবামা। মার্কিন সেনেটরদের একাংশ আবার ওবামার এই কথাটা ভাল ভাবে নেননি। এর মধ্যে দিয়ে ওবামা নিজেকে কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চাইছেন বলে তাঁদের মত। অন্য দিকে ওবামাপন্থীদের যুক্তি, বুশ জমানার সঙ্গে নিজের পার্থক্য প্রমাণ করার দায় রয়েছে ওবামার। রাশিয়া-ইরানের মতো দেশ যখন ফের ‘মার্কিন-আগ্রাসনে’র স্লোগান তুলছে, তার সামনে নিজের অবস্থানকে স্পষ্ট করার তাগিদও রয়েছে।
এর আগে রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডারের ধুয়ো তুলেই ইরাক আক্রমণ করেছিল আমেরিকা। পরে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ইরাকে মুখ পোড়ার সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করছে আমেরিকাকে। ওবামা স্বয়ং ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেই ভোটে লড়েছিলেন। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সেই ওবামার পক্ষে সিরিয়া আক্রমণের বৈধতা প্রমাণ করার একটা বাড়তি চাপ রয়েছে। সেটা মনে রেখেই এ দিন মার্কিন সেনেটরদের সঙ্গে বৈঠকের পরে ওবামা বলেন, “সিরিয়া ইরাক নয়। আফগানিস্তানও নয়।” তার পরেই সুইডেনের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান তিনি। সেখান থেকেই জি ২০ সম্মেলনে যোগ দিতে তাঁর রাশিয়া যাওয়ার কথা। সুইডেনে পৌঁছে স্টকহলমের সাংবাদিক সম্মেলনে ওবামা বলেন, ইরাকের ভুল সিরিয়ায় হবে না। বিশদ অনুসন্ধান চালিয়ে ‘পূর্ণ বিশ্বাস’ নিয়ে আমেরিকা ঘোষণা করছে যে, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রই ব্যবহার হয়েছে। |
খুদে বন্ধু... সিরিয়ার জন্য শান্তি কামনায় ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ। ছবি: এএফপি। |
বিষাক্ত সারিন গ্যাসেই প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১৪০০ মানুষের।
ইরান এবং রাশিয়ার মতো দেশ অবশ্য গোড়া থেকেই এই অভিযোগ খারিজ করে আসছে। রুশ প্রশাসন এমনও দাবি করেছিল, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ হয়ে থাকলে তা করেছে বিদ্রোহীরা, যাদের পিছনে আল কায়দার মদত আছে। আসাদের দেশের জন্য তাই আগে থেকেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এস-৩০০ ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রের বিভিন্ন অংশ পাঠিয়ে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ দিন অবশ্য পুতিন সামান্য নমনীয় হয়ে বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার যদি প্রমাণ হয়, সে ক্ষেত্রে “সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।”
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটা পুতিনের কৌশল। কারণ, পুতিন এখন দু’দিকই রক্ষা করতে চাইছেন। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক যাতে কিছুটা স্বাভাবিক হয়, সেটা তাঁর লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে। জি ২০ সম্মেলনের ফাঁকে ওবামার সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে আগ্রহও দেখাচ্ছেন পুতিন। অন্য দিকে, সিরিয়া নিয়ে রাশিয়ার নিজস্ব অবস্থান থেকে সরে আসাও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই পুতিন এ দিন বলার চেষ্টা করেছেন, রাশিয়া একমাত্র রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকাই মানবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে যদি আসাদ সরকার দোষী হয়, সেটা মানবে। এবং তার পরে যদি রাষ্ট্রপুঞ্জ সিরিয়ায় অভিযান করে, একমাত্র সেটাতেই মত দেবে রাশিয়া। অর্থাৎ আমেরিকার তদন্ত-রিপোর্ট বা মার্কিন সেনা অভিযান, কোনওটাতেই রাশিয়ার সমর্থন আগেও ছিল না, এখনও নেই। |