সিরিয়া নিয়ে ওবামার পাশে রিপাবলিকানরা
সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোয় কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাসার-আল-আসাদ ও বিরোধীদের লড়াইয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত কি না তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে ওয়াশিংটনে। আসাদের সেনা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করায় সামরিক অভিযানের কথা ভেবেছেন ওবামা। কিন্তু, তাতে কংগ্রেসের সমর্থন চান তিনি। এই বিষয়ে সমর্থন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন অনেক কংগ্রেস সদস্যই। কিন্তু, আজ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার ও রিপাবলিকান নেতা জন বোয়েনার বলেন, “আমি প্রেসিডেন্টের পাশে আছি। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার বর্বরের কাজ। আসাদকে থামানোর ক্ষমতা আছে একমাত্র আমেরিকারই।” ওবামার পাশে দাঁড়িয়েছেন অন্য দুই প্রভাবশালী রিপাবলিকান সদস্য জন ম্যাকেন ও লিন্ডসে গ্রাহামও। রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভসেই অভিযানের প্রস্তাব আটকে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল বেশি। বোয়েনার ওবামার পাশে দাঁড়ায় সে বাধা কেটে গেল বলেই ধারণা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের।
আশ্রয়। জর্ডনের শিবিরে সিরিয়ার শরণার্থীরা। ছবি: রয়টার্স।
আজ হঠাৎই ভূমধ্যসাগরে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর জানায় রাশিয়া। ফলে, সিরিয়ায় পশ্চিমী হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে গেল কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। রুশ সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, মধ্য ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বদিকের উপকূল লক্ষ্য করে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। কৃষ্ণসাগরের কাছে আরমাভিরে থাকা রুশ রেডারে সেগুলি ধরা পড়ে। বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও জানানো হয়। কারা কোন দেশকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র দু’টি ছুড়েছে তা অবশ্য জানায়নি রাশিয়া। তবে পূর্ব উপকূলেই রয়েছে সিরিয়া।
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই চাঞ্চল্য দেখা দেয় বিভিন্ন দেশে। দামাস্কাস বা সিরিয়ার অন্য অংশে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে কি না তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। পরে সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র দু’টি সমুদ্রে পড়ে গিয়েছে। সিরিয়ার ক্ষতি হয়নি।
পরে ইজরায়েল জানায়, তারাই ভূমধ্যসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ক্ষেপণাস্ত্র-রোধী ব্যবস্থা (মিসাইল শিল্ড) পরীক্ষা করে দেখেছে ইজরায়েলি সেনা। তাতেই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ওই দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র। আমেরিকা জানিয়ে দেয়, তাদের কোনও জাহাজ বা বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি।
সিরিয়া নিয়ে কূটনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই কেন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল ইজরায়েল? মার্কিন শীর্ষকর্তাদের আশঙ্কা, সিরিয়ায় মার্কিন অভিযান হলে ইজরায়েলের উপরে প্রত্যাঘাত করতে পারেন বাসার-আল-আসাদ। ইজরায়েল-বিরোধী স্লোগানের জেরে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারে ইরানও। অনেকের মতে, সেই পরিস্থিতির কথা ভেবেই সিরিয়াকে নিজের সামরিক শক্তির কিছুটা আভাস দিয়ে রাখল ইজরায়েল। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, আজই একটি সাক্ষাৎকারে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন আসাদ। তাঁর বক্তব্য, “পশ্চিম এশিয়া বারুদের স্তূপের উপরে বসে রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমী সামরিক অভিযান হলে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।”
সিরিয়ায় মার্কিন বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা হামলা সিরিয়ার সমস্যা কতটা মেটাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেক বিশেষজ্ঞেরই। সিরিয়া ও লেবাননে এক সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন রায়ান সি ক্রকার। তাঁর প্রশ্ন, মার্কিন হামলার পরে যদি আসাদ ফের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেন? সে ক্ষেত্রে হয় আমেরিকাকে আরও বড় অভিযানে নামতে হবে। নয়তো পিছিয়ে আসতে হবে। তা হলে বিশ্বের কাছে মুখ পুড়বে ওয়াশিংটনের। সিরিয়ায় লড়াইটা আর কেবল আসাদ ও তাঁর বিরোধীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আঞ্চলিক রাজনীতির টানে তাতে নাক গলিয়েছে অনেক দেশ ও জঙ্গি সংগঠন। আসাদের পাশে রয়েছে শিয়া ইরান ও জঙ্গি সংগঠন হিজবোল্লা। অন্য দিকে বিরোধীদের একটি অংশকে মদত দিচ্ছে সুন্নি সৌদি আরব ও কাতার। ফলে, এই জটিল খেলায় নামার আগে ওয়াশিংটনের অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞই।
রাজনীতি ছাড়াও শরণার্থী সমস্যার জেরেও সিরিয়া নিয়ে মাথা ঘামাতে বাধ্য হচ্ছে বহু দেশ। সিরিয়ায় লড়াইয়ের জেরে ইতিমধ্যেই ২০ লক্ষ মানুষ অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের দাবি, এটা ইতিহাসের বৃহত্তম ট্র্যাজেডি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, লেবানন, তুরস্কের মতো দেশগুলির পক্ষে এই চাপ নেওয়া ক্রমশই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই অন্য দেশগুলির উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ, এখনও পর্যন্ত যা আর্থিক সাহায্য এসেছে তা একেবারেই সিন্ধুতে বিন্দুর মতো।
সিরিয়া নিয়ে গোড়া থেকেই ভারসাম্যের খেলা খেলতে চাইছে নয়াদিল্লি। তাই আজ হিংসার মাধ্যমে সমাধানের পাশাপাশি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারেরও সমালোচনা করেছে বিদেশ মন্ত্রক। সব ভারতীয়দের ফের সিরিয়া ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.