চরমপন্থীরা বই আর কলমকে ডরায়। তাই এই কলম আর বই-ই সন্ত্রাসবাদ দমনের সেরা হাতিয়ার। মঙ্গলবার বার্মিংহামে একটি গ্রন্থাগার উদ্বোধন করতে গিয়ে এমনটাই বললেন সোয়াটের সাহসিনী মালালা ইউসুফজাই।
দশ তলা এই গ্রন্থাগারটিই এখন ইউরোপের সব থেকে বড় গ্রন্থাগার। যার মূল্য ভারতীয় টাকায় প্রায় ১ হাজার ছ’শো ছেষট্টি কোটি। বার্মিংহামের এই গ্রন্থাগারটি উদ্বোধন করতে পেরে খুশি মালালা। লাল ওড়নায় মাথা ঢাকা মালালা আজ বলেছেন, “পাকিস্তানের পর বার্মিংহামই আমার মনের খুব কাছের শহর। আমি এই শহরটাকে ভালবাসি আর এই ক’টা দিনে শহরটাও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে”গোটা হল জুড়ে হাততালি। বলে চলেন মামালা, “গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি যে এখানেই আমার নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছি। তার জন্য আমার চিকিৎসকদের ধন্যবাদ। আবার পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি তাই শিক্ষকদেরও ধন্যবাদ।” ২০১২-র অক্টোবরে পাকিস্তানে নারীশিক্ষার জন্য সরব হয়ে তালিবানের গুলির শিকার হতে হয়েছিল মালালাকে। চিকিৎসার
জন্য তাঁকে ব্রিটেনে নিয়ে যেতে
হয়। তার পর আর ফিরে যাওয়া
হয়নি পাকিস্তানে। এখনও এ দেশেই আছেন তিনি। |
ইউরোপের সব থেকে বড় গ্রন্থাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মালালা। মঙ্গলবার বার্মিংহামে। ছবি: এপি। |
গ্রন্থাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তিনি শোনাচ্ছিলেন তাঁর ছোটবেলার বই পড়ার গল্প। বার্মিংহামে আসার পর ঠিক কী ভাবে জীবনে বইয়ের গুরুত্ব আরও বাড়ল সেই সব কথা। পাকিস্তানের স্কুলে ছোট থেকেই বাধ্য ছাত্রী ছিলেন। বই পড়তেও ভাল বাসতেন। নরওয়ের লেখক জোস্টাইন গার্ডারের লেখা ‘সোফিস ওর্য়াল্ড’ এবং পাওলু কোয়েলুর ‘অ্যালকেমিস্ট’ দিয়েই বই পড়ার হাতেখড়ি হয়েছিল। এ কথা বলেই তিনি বলেন, “পাকিস্তানে থাকাকালীন ওই দু’টো মাত্র বই পড়েই মনে হতো অনেক কিছু পড়ে ফেলেছি। এখানে আসার আগে জানতাম না সবাই কত বেশি বই পড়েন। নতুন একটা জগৎ খুঁজে পেয়েছি। বই ছাড়া যেমন কোনও শহর ভাবা যায় না, ঠিক তেমনই গ্রন্থাগার ছাড়া শহর শ্মশানের সমান।” নিজের ‘অ্যালকেমিস্ট’ বইটিও দিয়েছেন গ্রন্থাগারে রাখার জন্য। হয়েছেন তার সদস্যও।
বছর ষোলোর মালালার কথায় উঠে আসে সেই সব কথা যা তিনি নিজের জন্মদিনে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলেছিলেন। অন্ধকার যে ভাবে আলোর মাহাত্ম্য ফুটিয়ে তোলে, নীরবতা যে ভাবে শব্দের গুরুত্ব তৈরি করে, তালিবানের বন্দুক ঠিক সে ভাবেই সোয়াট উপত্যকার বাসিন্দাদের বুঝিয়েছে কলমের জোর, শিক্ষার শক্তি। সেই শিক্ষাকেই তালিবান আর তাবৎ জঙ্গিরা ভয় পায়।
মালালা ভাবাতে চান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও সিরিয়ার সেই পাঁচ কোটি সাত লক্ষ শিশুর কথাও যারা এখনও শিক্ষার আলো পায়নি। তিনি ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের ৪০ জন শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। খুলেছেন ‘মালালা ফান্ড’। পাকিস্তান তথা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে শিশুশিক্ষা তথা নারীশিক্ষা অবহেলিত, সেখানে শিক্ষার প্রসার কী ভাবে করা যায়, তা নিয়েই ভাবনা-চিন্তা করছেন তিনি। মনে করিয়ে দেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাবে বাধা পাচ্ছে শিশুশিক্ষা, নারীশিক্ষা। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে প্রতিবন্ধকতা তালিবানি রক্তচক্ষু, ভারতে শিশুশ্রম মালালার লড়াই এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধেই। তাই তিনি বলেন, “আসুন, আমরা
এগিয়ে এসে ওদের বই পড়ার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করি। ওরাও যেন স্কুলে যেতে পারে।” তাই মালালার আর্জি, আরও বেশি করে পড়ুন আর পড়ান। |