দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহারের কারণে রক্ত সংক্রমণের ঘটনা তো আকছারই ঘটে থাকে। প্রতি বছর বিশ্বে যত জন রক্তঘটিত সংক্রমণের শিকার হন, তার অনেকটাই হয় দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহারের কারণে। এত দিন পর্যন্ত এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রচারই হাতিয়ার ছিল চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার করার কৌশল ধরতে পারেন না তৃতীয় বিশ্বের নিরক্ষর মানুষ। ফলে এইচআইভি বা হেপাটাইটিস-এর মতো মারণ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় থাকত না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে, গোটা বিশ্বে অন্তত ৩০ শতাংশ হেপাটাইটিস এ, বি এবং ৫ শতাংশ এইচআইভি সংক্রমণের কারণ দূষিত সিরিঞ্জ। এই সমস্যা দূর করতে বহু দিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের হাডার্সফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক একটি উপায় বার করে ফেলেছেন। তাঁরা এমন একটি সিরিঞ্জ আবিষ্কার করেছেন যা রং বদলায়। |
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্যাকেট থেকে বার করার এক ঘণ্টার মধ্যেই স্বচ্ছ থেকে গাঢ় লাল রঙের হয়ে যায় এই সিরিঞ্জ। ফলে সিরিঞ্জটি ব্যবহার করা হয়েছে কি না তার রং বদলানো দেখে খুব সহজেই বোঝা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষক দলের অন্যতম ডেভিড সোয়ান জানান, এই রং বদলের জন্য যে কালি ব্যবহার করা হয়েছে তা বেশ সস্তা। ফলে ওই সিরিঞ্জের দামও থাকবে সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে। শুধু ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা-ই নয়, ওই সিরিঞ্জের সিল ভাঙা আছে কি না তাও বোঝা যাবে। এর ফলে সিরিঞ্জ জনিত সংক্রমণ অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন ডেভিড। এই সিরিঞ্জ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার শুরুর পরিকল্পনাও নিয়েছেন তিনি।
ডেভিডের কথায়, দূষিত সিরিঞ্জের কারণে সংক্রমণের হার ভারতে সব থেকে বেশি। সে ক্ষেত্রে যদি ভারতে মোট ব্যবহৃত সিরিঞ্জের ৫ শতাংশও এই রং বদলানো সিরিঞ্জ হয়, তা হলে প্রতি বছর অন্তত ৭ লক্ষ সংক্রমণ ঠেকানো যাবে। চিকিৎসা খাতে কোটি কোটি টাকার অপচয় বেঁচে যাবে।
হু-র কর্মী ডেনিস মারি বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে গেলে অনেক সময়ে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। কিন্তু এই সিরিঞ্জের সুবিধে হল, খরচ কম। অথচ কাজের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।”
এত সুবিধার মাঝে অবশ্য একটা আশঙ্কাও উঁকি মারছে বিশেষজ্ঞদের মনে। তাঁদের আশঙ্কা নিরক্ষর মানুষদের এই রং বদলানোর বিষয়টা নিয়ে ভুল বোঝানো কঠিন কাজ নয়। সে ক্ষেত্রে সমস্যা থেকেই যাবে। তাই সবার আগে দরকার সচেতনতা বাড়ানো। তবেই কমবে সংক্রমণ। |