টাকার দাম পড়ছে, সঙ্কটে কৃষ্ণনগরের স্বর্ণশিল্পীরা
টাকার তুলনায় ডলার যত মহার্ঘ হচ্ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। গত কয়েক মাস আগেই প্রতি দশ গ্রাম সোনার মূল্য ছিল মেরেকেটে পঁচিশ হাজার টাকা। কিন্তু কিছু দিন ধরে চলতে থাকা লাগাতার টাকার অবমূল্যায়নে সোনার দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এক ভরি সোনার মূল্য পঁয়ত্রিশ হাজারে ঠেকেছে। তাই মধ্যবিত্তরা পারতপক্ষে সোনার দোকান মাড়াচ্ছেন না। ফলে সঙ্কটের মুখোমুখি কৃষ্ণনগরের সোনাপট্টির কয়েকশো কারিগর।
এই অস্থির পরিস্থিতিতে অনেকেই জাত পেশা ছেড়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, রঙের মিস্ত্রির কাজ করতে পড়শি রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।
বাজার মন্দা। কাজ কম। কৃষ্ণনগরের সোনাপট্টিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
আর যাঁরা এখনও তাঁদের পুরনো পেশাকে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন তাঁদের অবস্থা সঙ্গীন। গত দু’সপ্তাহে কোনও কাজ পাননি গৌর রায়, গোপাল হালদারের মত কারিগররা। গোপালবাবু বলেন, “গত পনেরো দিনে এক টাকাও রোজগার নেই। এই অবস্থায় দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে আর কতদিন এ পেশায় টিকে থাকতে পারব বুঝে উঠতে পারছি না।” এমনিতেই সোনার কারিগরের সংখ্যা সীমিত। তার উপর পেটের ভাত জোগাড় করতে না পেরে নতুন করে কারিগররা পেশা ছেড়ে দেন তাহলে স্বর্ণ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। কৃষ্ণনগর-সোনাপট্টির ব্যবসায়ী সুচিত্র পাত্র বলেন, “ব্যবসার এই পড়তির বাজারে বহু শিল্পী অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এমনটা চলতে থাকলে এক দিন ভাল কারিগর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
কৃষ্ণনগরে প্রায় ছ’শোটির মতো সোনার দোকান আছে। এর মধ্যে সোনাপট্টিতেই আছে প্রায় তিনশোটি। কারিগর বা স্বর্ণশিল্পীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। স্বর্ণব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এত চড়া দামে সাধারণ খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষ বা চাকুরীজীবী মধ্যবিত্তরা খুব প্রয়োজন ছাড়া গহনা বানানোর কথা ভাবছেন না। ফলে স্বর্ণশিল্পে মন্দা চলছে।
সোনাপট্টিতে প্রণব হালদারের দোকান আছে। তিনি বলেন, “কয়েক বছর আগে যা কাজ পেতাম এখন তার ৫০ শতাংশ কাজও পাই না। সারা মাসে একজন শিল্পী তিন থেকে চার হাজার টাকার বেশি কাজ করতে পারছেন না। পুরো শিল্পটাই চরম সংকটে।” প্রণবাবুর আশঙ্কা “ডলারের সঙ্গে সঙ্গে সোনার দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আর কতদিন এই পেশা টিকে থাকতে পারব জানি না।” সোনার দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়ার সময় ক্রেতারা হালকা গয়নার খোঁজ করেন। কিন্তু সাধারণ দোকানে হালকা গয়না মেলে না। তাই ক্রেতারা ছোঁটেন ঝা চকচকে নামি কোম্পানির শো-রুমে। এক ব্যবসায়ী বলেন, “ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নকসাওয়ালা হালকা গহনা বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে খরিদ্দররা চলে যাচ্ছেন বড় কোম্পানির ‘শো’রুমে। তাছাড়াও নানা রকম ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের টেনে নিচ্ছে।” ফলে সোনার এই অসম্ভব মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কায় দিশেহারা ছোট ব্যবসায়ী আর কারিগররা। অখিল ভারত স্বর্ণকার সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি বাসুদেব দত্ত বলেন, “যে ভাবে সোনার দাম হু হু করে বাড়ছে তাতে বিপর্যয়ের সম্মুখীন আমরা। দোকানে খরিদ্দার নেই। বেশির ভাগ স্বর্ণ শিল্পীর সময় কাটছে দিনভর মাছি তাড়িয়ে। আগামী দিনের কথা ভেবে আমরা রীতিমতো শঙ্কিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.