সাহিত্য অকাদেমি পাচ্ছেন সারিধরম
সাঁওতালি ভাষায় ছোটদের জন্য লেখা ‘ডোঁবে বাহা’ (ফুলের কুঁড়ি) কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য অকাদেমির ‘শিশু সাহিত্য পুরস্কার’ পাচ্ছেন কবি বাসুদেব হাঁসদা। অবশ্য পাঠকদের কাছে তিনি পরিচিত ‘সারিধরম’ ছদ্মনামেই। ‘সাহিত্য অকাদেমি’র সচিব কে শ্রীনিবাসরাও জানান, আগামী ১৫ নভেম্বর গোয়ার পানাজি’র মেন অডিটোরিয়ামে সারিধরমবাবুকে ওই পুরস্কার দেওয়া হবে। চরম দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে সারিধরমবাবুর শৈশব ও কৈশোর। দেখেছেন দিনমজুর বাবা ও মায়ের কঠোর জীবন সংগ্রাম। ছোট ছোট শব্দবন্ধ ও ছন্দক্রমে মনে মনেই কবিতা রচনা করতেন তিনি। সালটা ১৯৭১। তখন তিনি স্কুল পড়ুয়া। ‘মুজিবর’ শিরোনামে তাঁর লেখা একটি কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় সরকারি পত্রিকা ‘পছিম বাংলা’য়। তার পর টানা চার দশক ধরে সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যে আপন কবিত্বে জায়গা করে নিয়েছেন ঝাড়গ্রামের সারিধরম হাঁসদা। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৬টি।
সারিধরম হাঁসদা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
এর মধ্যে ছোটদের জন্য সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে সারিধরমবাবুর লেখা ‘ডোঁবে বাহা’ কাব্যগ্রন্থটি এ বছর সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পাচ্ছে। ষাঁট ছুঁই ছুঁই সারিধরমবাবু ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আদিবাসী লোকরঞ্জন শাখার সঙ্গীতশিল্পী। বললেন, “আমি জীবন থেকে ছন্দকে কোনও দিন আলাদা হতে দিইনি। ছন্দের মধ্যে বাঁচার রসদ সংগ্রহ করেছি। ছন্দের মাধ্যমেই সমাজ জীবনের সুখ, দুঃখ, বঞ্চনার ছবি এঁকে চলেছি।”
২০১১ সালে ছোটদের জন্য ৬৮টি কবিতার সংকলন ‘ডোঁবে বাহা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। মূলত শিশু-কিশোর-কিশোরীদের জন্য লেখা ‘ডোঁবে বাহা’র কবিতাগুলিতে আছে প্রকৃতি, উত্‌সব, খেলা, ঋতু বৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণ নিয়ে শিকড়ের সন্ধানের কথা।
সারিধরমবাবুর জন্ম ১৯৫৫ সালের ৭ জানুয়ারি বেলপাহাড়ির কুমারদা গ্রামে। তবে কর্মসূত্রে এখন থাকেন ঝাড়গ্রাম শহরে। বাবা পদান হাঁসদা ও মা নহা হাঁসদা দিনমজুরি করে সারিধরমবাবু ও তাঁর ভাইবোনেদের মানুষ করেছিলেন। সারিধরমবাবু বলেন, “ছোটবেলায় দেখতাম, চাষজমিতে আমানুষিক শ্রম করার পর সন্ধ্যায় বাবা উদাত্ত গলায় গান করতেন। অসম্ভব মন কেমন করা সেই সুরই আমাকে ছন্দের প্রতি আগ্রহী করে। তা ছাড়া পরবর্তীকালে প্রসিদ্ধ সাঁওতালি মহাকবি সাধু রামচাঁদ মুর্মুর লেখা পড়েও অনুপ্রাণিত হয়েছি।”
শিলদা রাধাচরণ বিদ্যামন্দিরে পড়ার পর ১৯৭৪ সালে ভর্তি হন শিলদা কলেজে। ১৯৭৭-এ কলা বিভাগের স্নাতক হন। অভাবের তাড়নায় নানা সংস্থায় অস্থায়ী কাজ করেছেন। ১৯৮৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
প্রথম জীবনে সারিধরমবাবু বাংলা হরফে লিখলেও গত দশ বছর ধরে অলচিকি লিপিতেই সাহিত্য সৃষ্টি করে চলেছেন। অজস্র গল্প, প্রবন্ধ, আদিবাসী যাত্রা ও একাঙ্ক নাটক রচনা করেছেন। কিন্তু পদ্যই তাঁর প্রথম প্রেম। তাঁর লেখা কবিতা ‘আব দ নাওয়া জুয়ান’ রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সারিধরম কথার অর্থ সত্যধর্ম। সারিধরমবাবুর কথায়, “জঙ্গলমহলের বাস্তব সত্যের উপর দাঁড়িয়েই আমার সাহিত্যকর্ম। আর সেটা আমার ধর্মও।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.