|
|
|
|
ফুলের দাম বাড়তে পারে পুজোয় |
জল জমে পচছে গাছের গোড়া, উদ্বেগে চাষিরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
জমা জলে পচছে গোড়া। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা গোলাপ, গাঁদা, ফুলের গাছ। দুই মেদিনীপুরের ফুলচাষিদের তাই মাথায় হাত। যা পরিস্থিতি তাতে ঘূর্নাবর্ত ও মরসুমের বৃষ্টি পালা দিয়ে এই ভাবে চলতে থাকলে পুজোর মরসুমে ফুলের দাম আকাশ ছোঁবে।
পূর্ব মেদিনীপুরে সম্প্রতি কাঁসাইয়ের বাঁধ ভেঙে তমলুক ও পাঁশকুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। এর মধ্যে তমলুক ব্লকের জলমগ্ন এলাকাগুলিতে বাহারপোতা গাছ (দেবদারু, বটলব্রাশ ইত্যাদি) চাষ হত প্রচুর, যা দিয়ে মূলত ফুল সাজানোর কাজ হয়। জলে এই সব গাছের পাতা পচে গিয়েছে। পাঁশকুড়ায় আবার চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ হয় বেশি। ফুল ফুটতে এখনও দেড়-দু’মাস বাকি। তার আগেই প্রচুর গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা মহা সমস্যায় পড়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “জল জমছে গাছের গোড়ায়। রোদ উঠলেই পচে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ফুলচাষিদের কথা ভেবে দেখার জন্য আমরা জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি।” |
|
দাসপুরে জলমগ্ন গোলাপ বাগান।—নিজস্ব চিত্র। |
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-১ ও ২ ব্লকেও সব্জির সঙ্গে নানা রকমের ফুল চাষ হয়। বিশেষ করে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা ফুলের চাষই বেশি হয়। গোলাপ চাষে খরচ হলেও ভালই লাভ হয়। কেননা, এক-একটা গোলাপ গাছ ৮-১০ বছর ফুল দেয়। গাছের ডগা কেটে জমি পরিষ্কার করে দিলেই হল। তবে গাঁদা এবং রজনীগন্ধা মরসুমেই হয়। গাঁদা চাষে কাঠা প্রতি খরচ পড়ে ৫০০-৬০০ টাকা। রজনীগন্ধার কন্দ লাগানো হয় প্রতি কাঠায় ১৮-২০ কেজি। খরচ পড়ে কাঠা প্রতি (সমস্ত খরচ নিয়ে) এক থেকে দেড় হাজার টাকা। দেড় থেকে প্রায় দু’বছর ফুল হয়। বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি না হলে তাতেও ভালই লাভ। কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টির সঙ্গে নদীর জল উপচে ফুল খেতে জল জমে গিয়েছে। ফলে অনেকে জমির ফুল গাছ নষ্ট হতে বসেছে। এখনই প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোলাপ গাছে বেশি পচন শুরু হয়েছে। আর যে সব চাষি জলদি জাতের গাঁদা চারা লাগিয়েছিলেন-সেই সব চারা প্রায় সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে চাষিদের মাথায় হাত। দাসপুরের সাহাপুরের অমর সামন্ত বলেন, “কিষান ক্রেডিট কার্ড থেকে ৪০ হাজার টাকা করে লোন নিয়ে চাষ করছিলাম। লাভ করার আগে সব ফুল নষ্ট হয়ে গেল। এ বার কী হবে-বুঝতে পারছি না।” দাসপুরেরই আড়খানার নিতাই খাঁড়া বলেন, “গোলাপ চাষের খেতে জল জমে যাওয়ায় গাছের গোড়াতে পচন শুরু হয়ে গিয়েছে। দু-তিন বছর ফুল পেয়েছিলাম। ভালই লাভ হচ্ছিল। কিন্তু জমিতে জল জমে যাওয়ায় এখন জমি থেকে ফুলও তুলতে পারছি না। আর পারব বলে মনে হয় না।” কিসমত কলোড়ার গৌতম পাঁজা বলেন, “আমার এক বিঘা গোলাপ-সহ বিঘা দু’য়েক জলদি জাতের গাঁদা চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফড়েদের কাছ থেকে টাকা ধার করে চাষ করেছিলাম। কী ভাবে যে শোধ করব জানি না।”
চাষিরা তা হলে কী করবে?
খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি ও খাদ্য বিভাগের অধ্যাপক বিজয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, “গোলাপ-সহ সমস্ত ফুল গাছের গোড়ায় চার-পাঁচ দিন জল জমে থাকলেই তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনে পাম্প চালিয়ে জমি থেকে জল বের করে দিতে হবে। আর পরের বার ফুল চাষের আগে অবশ্যই নিকাশির ব্যবস্থা করতে হবে।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল এবং নগেন্দ্র কুমার বর্মা বলেন, “উন্নতমানের চারা হলে ক্ষতি তুলনায় কম হয়। কিন্তু এখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ হয় না, তাই চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|