আই লিগ শুরুর মাত্র আঠারো দিন আগে ফের ধাক্কা খেল ভারতীয় ফুটবল।
পুরোপুরি তৈরি নয়— এই যুক্তি দেখিয়ে ক্রীড়াসূচি ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও আই লিগ থেকে নাম তুলে নিল কর্পোরেট দল মুম্বই টাইগার্স। এক কথায় যা নজিরবিহীন। তবে মুম্বই কর্তারা জানিয়েছেন, মহীন্দ্রা-জেসিটির মতো ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোত থেকে আপাতত সরে যাচ্ছেন না তাঁরা। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশন এবং এ বারের ডুরান্ড কাপে খেলবে তাঁদের দল।
পৈলান অ্যারোজের পর টাইগার্স সরে দাঁড়ানোয় এ বারের আই লিগ দাঁড়াল তেরো দলের। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় জল্পনা শুরু হয়, তা হলে কি নতুন কোনও দল আসতে পারে? আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর যদিও বলছেন, “মুম্বই টাইগার্সের ম্যাচ বাদ দিয়ে লিগ শুরু করব। কোনও পরিবর্ত দল নেওয়া হচ্ছে না।”
তবে মুম্বইয়ের খবর, জৌলুস না থাকায় আই লিগে মোহভঙ্গ হয়েছে দলটির কর্ণধার রাজেন কিলাচন্দের। ফুটবলের আইপিএল বাজারে ভেসে উঠতেই তিনি নাকি হেলে পড়েছেন সে দিকে। দল নিয়ে টিডি-র সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক টাইগার্সের এক কর্তার মতপার্থক্যও একটা ফ্যাক্টর।
ক্লাব জোটের মতে, টাইগার্সের সরে দাঁড়ানোটা ভারতীয় ফুটবলের বাণিজ্যীকরণে বড় ধাক্কা। জোটের প্রেসিডেন্ট রাজ গোমস গোয়া থেকে ফোনে বললেন, “কর্পোরেট সংস্থাগুলো কেন ফুটবলে আগ্রহ হারাচ্ছে তা ভাবা উচিত ফেডারেশনের। তা ছাড়া শর্ত অনুযায়ী তো ফ্রাঞ্চাইজি দলের অবনমন নেই। তা হলে ওদের লিগে খেলার অনুরোধ করতে আপত্তি কোথায়?” গোয়ার আর এক দল গত বারের আই লিগ জয়ী চার্চিল ব্রাদার্সের কর্ণধার চার্চিল আলেমাও বলছেন, “ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের ফুটবল। বাণিজ্যিক ব্যর্থতা।” যদিও ফেডারেশন সচিব কুশল দাস ব্যর্থতা মানতে নারাজ।
কলকাতার দলগুলোর প্রতিক্রিয়া আবার অত আক্রমণাত্মক নয়। লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষ কর্তা বলছেন, “কেউ সরে গেলে লিগ থেমে থাকবে না। এই দলগুলোর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্যারিশমা কোথায়?” তবে সঙ্গে এটাও বলছেন, “ফ্র্যাঞ্চাইজি দল নেওয়ার আগে আরও ভাবনাচিন্তা করা দরকার ছিল।”
দল আই লিগের মূলপর্ব থেকে সরে দাঁড়ানোয় সবথেকে চিন্তিত দুর্গা বোড়ো, স্টিভন ডায়াস, অর্ণব দাস শর্মার মতো ফুটবলাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার মুম্বই থেকে ফোনে বললেন, “এখন আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।” যা শুনে মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বলছেন, “দল তুলে দু’কোটি টাকা জরিমানা দিয়েছিলাম আমরা। এ বার কী জরিমানা হবে তা দেখার জন্য তাকিয়ে আছি।”
তা হলে কি ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলার জন্য ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল পটেলের বন্ধুর দল শাস্তির মুখে পড়তে পারে? সুনন্দ বলছেন, “ওদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সেটা কার্যকরী সমিতির বৈঠকে ঠিক হবে।” ফেডারেশন সচিব আবার বলছেন, “শাস্তি কেন? ফুটবলাররা লোনে অন্য দলে যেতেই পারে। তবে ওরা যদি আমাদের অনুরোধ করে, তখন বিকল্প রাস্তার কথা ভাবা যাবে।” |