এ বার পড়াশোনায় মন দিতে চান ‘দ্রোণাচার্য’। তিরন্দাজি প্রশিক্ষণে দেশে সেরার শিরোপা পাওয়ার পর তাঁর ‘পাখির চোখ’ এখন স্নাতক পরীক্ষায়। সেখানেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হতে চান পূর্ণিমা মাহাতো।
সম্প্রতি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে দেশের ক্রীড়াজগতের অন্যতম ‘দ্রোণাচার্য’ সম্মান পেয়েছেন বছর সাইত্রিশের ওই প্রশিক্ষক। জামশেদপুরে ফেরার পর তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে ইস্পাতনগরী। সে সব থেকে এখন দূরে থাকতে চাইছেন পূর্ণিমা।
তাঁর কথায়, ‘‘বছর তিনেক আগে ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটিতে কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছি। এখন আমি চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী। তিরন্দাজিতে ব্যস্ত থাকায় লেখাপড়ায় ঠিকমতো সময় দিতে পারিনি। এ বার স্নাতক পরীক্ষাটায় পাস করতে চাই।”
দিনভর তুমুল ব্যস্ততা। পড়াশোনার জন্য তাই গভীর রাতই পছন্দ পূণির্মার। কলেজের নোটস্ পড়েন তখনই। লেখেন প্রশ্নোত্তরও। দ্রোণাচার্যের কথায়, “স্বামী, পরিবারের উৎসাহে এ বার হয়তো স্নাতক হতে পারব।” |
পূর্ণিমা মাহাতো। —ফাইল চিত্র |
ছোটবেলায় পাড়ার মাঠে তিরন্দাজির প্রশিক্ষণ দেখে তির-ধনুকে আকর্ষণ জন্মায় পূর্ণিমার। পাড়ারই প্রশিক্ষক লরেন্স কিসকেট্টার হাত ধরে তিরন্দাজির মূলস্রোতে পৌঁছন পূর্ণিমা। ১৯৯৪ সালে রাজ্যের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জেতেন। এশিয়ান গেমস-সহ দেশ-বিদেশে একাধিক পদক জয়ের পর জামশেদপুরের ‘টাটা আর্চারি আকাডেমি’তে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন পূর্ণিমা। তাঁরই প্রশিক্ষণে তিরন্দাজিতে প্রচারের আলোয় এসেছেন অনেকেই। এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা মহিলা তিরন্দাজ দীপিকা কুমারী তাঁরই ছাত্রী।
দেশে তিরন্দাজির ভবিষ্যৎ কী?
পূর্ণিমা জানান, তিরন্দাজি ব্যয়বহুল খেলা। ধনুকের দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। তিরের গোছা পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের খেলোয়ারদের তিরন্দাজিতে আনতে উদ্যোগী হতে হবে সরকারকেই। তিনি বলেন, “অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছেছি। সরকার উদ্যোগ নিলে এই খেলায় দেশ আরও এগতে পারবে।”
কিন্তু আপাতত লেখাপড়ায় আরও একটু এগতে চান পূর্ণিমা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণ দেওয়া আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দায়িত্বও। এখন যেখানে রয়েছি সেখানে থেকেই আরও ভালোভাবে ওই দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।” |